প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত ঝুঁকির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ব-দ্বীপ পরিকল্পনা: প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:৫৮ পিএম
গ্রীনরোডস্থ পানি ভবনের মাল্টিপারপাস হলরুমে বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ সম্ভাবনা, বাস্তবায়ন ও অংশীজন সমন্বয় শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয় ।
উক্ত সেমিনারে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত ঝুঁকির কারণে কাঙ্খিত উন্নয়নের দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকার ‘বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ নামে একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। দেশের কাঙ্খিত আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি অর্জনের লক্ষ্যে কৃষি, মৎস্য, বনায়ন, পানি ব্যবস্থাপনা, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিবেচনায় নিয়ে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ এ মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে।
পানি, জলবায়ু, পরিবেশ ও ভূমির টেকসই ব্যবস্থার দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জন এবং চরম দারিদ্র্য দূরীকরণসহ ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশের মর্যাদা অর্জনের লক্ষ্যে এই ব-দ্বীপ পরিকল্পনা- ২১০০’ অন্যান্য স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনাসমূহের সমন্বয় করবে।
আজ রাজধানীর গ্রীন রোডস্থ পানি ভবনের মাল্টিপারপাস হলরুমে 'বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০: সম্ভাবনা, বাস্তবায়ন ও অংশীজন সমন্বয়' শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান।
মুখ্য সচিব বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে অভিঘাতসহিষ্ণু সমৃদ্ধশালী ব-দ্বীপ গড়ে তোলার রূপকল্প বাস্তবায়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদূরপ্রসারী কল্যাণ চিন্তার একটি প্রতিফলন। পানি, পরিবেশ, জলবায়ু, ভূমির টেকসই ব্যবস্থাপনার স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘ মেয়াদি অংশীজন সমন্বয়সমুহকে বিবেচনা করে বিনিয়োগ এই পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে।
শতবর্ষী এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল-বিনিয়োগ পরিকল্পনার প্রণয়ন ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন। বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার পরিকল্পনা প্রেক্ষাপটে বিদ্যমান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দালিলিক ভিত্তিসমূহ যেমন- SDG, Perspective plan 2021-2041, National Adaptation Plan 2023-2050, ৮ম পঞ্চমবার্ষিকী পরিকল্পনা 2021-2025, climate change & other cross cutting issues.
পর্যালোচনায় দেখা যায়, ব-দ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়নকল্পে বহুমুখী বিনিয়োগ কার্যক্রম (স্থানীয়/বৈদেশিক/উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা হতে প্রাপ্ত) গ্রহণ প্রয়োজন বলেন, তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।
তিনি আরো বলেন; যেহেতু ব-দ্বীপ পরিকল্পনা একটি শতবর্ষব্যাপী চলমান মহাকর্মপরিকল্পনা, সেহেতু এটি বাস্তবায়নে ১৪টি ব-দ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয় এবং আওতাধীন সংস্থা পর্যায়ে আন্তঃসমন্বয়সাধন একান্ত প্রয়োজন। অধিকন্তু, জলকেন্দ্রিক, টেকনো-ইকোনমিক এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ধারা অব্যহত রাখা ও সামগ্রিক কার্যক্রম সুসংহত করার লক্ষ্যে প্রকল্প প্রণয়ন, বাস্তবায়ন এবং পরিবীক্ষণখাতে যথাযথ সমন্বয়, সংযোগ স্থাপন ও কর্মবন্টন করা আবশ্যক।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ ব-দ্বীপ বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব হতে সুরক্ষা প্রদান, প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সম্পদের উন্নয়ন করাসহ অমিত সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী ব-দ্বীপ উন্নয়নে বিদ্যমান সময়োপযোগী প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবেশগত ভারসাম্য অটুট রেখে ব-দ্বীপ উন্নয়নে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ এবং ব-দ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়সমূহের মধ্যে সুষমভাবে বন্টন করা প্রয়োজন।
মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া আরো বলেন; ভূ-প্রাকৃতিক অবস্থানগত কারণে দুর্যোগ প্রবণ বাংলাদেশের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলা করার পাশাপাশি ব-দ্বীপ উন্নয়ন খাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করা এবং অংশীজনের সমন্বয় একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে, সুনির্ধারিত কর্মপরিকল্পনা, আন্তঃসমন্বয়, দাতা সংস্থার সহযোগিতা এবং বিভিন্ন চুক্তির আওতায় প্রাপ্ত ঋণ/অনুদানের সময়াবদ্ধ যথাযথ বণ্টন করা হলে প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের জন্য ব-দ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সহজতর হবে।
এ কর্মশালার অন্যতম উদ্দেশ্য হল ব-দ্বীপ ২১০০ বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়সমূহের কর্মপরিধির সাথে সম্পর্কিত কর্মসূচি/প্রকল্প বাস্তবায়নকালে অর্জিত অভিজ্ঞতা বিনিময়, আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় ও পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সকলের অভিমত গ্রহণ। বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা: সম্ভাবনা, বাস্তবায়ন ও অংশীজন সমন্বয়' শীর্ষক উপস্থাপনা করেন মালিক ফিদা এ খান, নির্বাহী পরিচালক, সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল এন্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সি ই জি আই এস); মুক্ত আলোচনা সঞ্চালনা করেন মল্লিক সাঈদ মাহবুব, অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন), পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য করেন মো. শাহ্য়িার কাদের ছিদ্দিকী সচিব, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ; ড. মোঃ খায়েরুজ্জামান মজুমদার সচিব, অর্থ বিভাগ; ড. ফারহিনা আহমেদ সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়; মুহম্মদ ইব্রাহিম সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগ; মো. কামরুল হাসান এনডিসি সচিব, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়; ড. মো. কাওসার আহমেদ সদস্য (সচিব), সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ, পরিকল্পনা কমিশন; সত্যজিত কর্মকার সচিব, পরিকল্পনা বিভাগ, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় অনুষ্ঠানের শেষভাগে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এস, এম, শহিদুল ইসলাম মহাপরিচালক, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড।