বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব সফল হলে তিনি হতেন বিশ্ববরেণ্য নেতা: ভিসি ড. মশিউর রহমান
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২৩, ০২:৫২ পিএম
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান বলেছেন, ‘গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় কাঁদা-মাটি জলে বেড়ে ওঠা বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন এই অঞ্চলের মানুষের স্বাধীনতা দরকার। তিনি এক যুগেরও বেশি সময় কারাগারে থেকে দেশের মানচিত্র এঁকেছেন। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ছিল বঙ্গবন্ধুর প্রথম বিপ্লব। বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্র সৃষ্টির বিপ্লবের ধারাবাহিকতায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। কেন তাকে হত্যা করা হয়েছিল? কারণ তার দ্বিতীয় বিপ্লব। এই দ্বিতীয় বিপ্লব ছিল তার বড় শত্রু। দ্বিতীয় বিপ্লবে বঙ্গবন্ধু মূলত চেয়েছিলেন শোষিতের গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠায় নতুন একটি অর্থনৈতিক কাঠামো গড়তে। তিনি বলেছিলেন প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থা আমি ভেঙে ফেলব। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন এই কাঠামোর অর্থনীতির বুনিয়াদে সংকট আছে। সেই সংকট তিনি ভাঙতে চেয়েছিলেন। এই অঞ্চলে তিনি যে সংবিধানের চার মূলনীতির কথা বলেছিলেন তার মধ্যে অন্যতম হলো সমাজতন্ত্র। সমাজতান্ত্রিক ধারায় যদি এই অঞ্চলের অর্থনীতি বিন্যাস হতো তাহলে পুঁজিবাদী বিশ্বের জন্য তা হতো ভয়ঙ্কর রকমের অশনি সংকেত।’
বুধবার বিকালে ময়মনসিংহের ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের কনফারেন্স কক্ষে ‘বঙ্গবন্ধুর জীবনী ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পাঠ’ বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন উপাচার্য ড. মশিউর রহমান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাশুরেন্স সেল (আইকিউএসি) এই প্রশিক্ষণ কর্মশালাটি আয়োজন করে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ১০ম গ্রেড হতে ২০তম গ্রেডের প্রায় দুই শতাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী চারটি ব্যাচে বিভক্ত হয়ে এই প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশ নিয়েছেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর।
দেশের প্রথিতযশা সমাজবিজ্ঞানী ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘একটা সময় এই অঞ্চল ছিল অর্থনীতিসহ বিভিন্ন দিক থেকে সমৃদ্ধ। ক্রমান্বয়ে শোষণের যাঁতাকলে আত্মশক্তিকে বিলীন করেছি। আমাদের ঐতিহ্য ছিল, সংস্কৃতি ছিল, অর্থনৈতিক বুনিয়াদ ছিল। মূলত শোষণের যাঁতাকলে এই অঞ্চলের মানুষ আত্ম-প্রবঞ্চনার মধ্যে পড়েছে। আমি এখনো বিশ্বাস করি বাংলাদেশ যদি তার চারটি মূলনীতিতে ফিরে যায় তাহলে দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি আরও দ্রুত সম্ভব হবে। বাংলাদেশ হবে বিশ্বের রোল মডেল।’
ভিসি ড. মশিউর রহমান আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু জীবনে একটি কাজ দিয়েই অমর হয়ে থাকতে পারতেন। কিন্তু তিনি সেটি করেননি। তিনি আমাদের চলার পথ মসৃণ করার জন্য, আমাদের মুক্তির জন্য জীবনকে উৎসর্গ করে গেছেন। জীবনব্যাপী তিনি যে সংগ্রাম করেছেন তার মূল লক্ষ্যই ছিল মানবমুক্তি। যে সময়ে তিনি স্ত্রী, সন্তান, আত্মীয়-পরিজনদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারতেন, সেই সময়ে তিনি এক কারাগার থেকে অন্য কারাগারে জীবন কাটিয়েছেন। জাতিরাষ্ট্র সৃষ্টির মানচিত্র এঁকেছেন। তার ডাকে সাড়া দিয়ে এদেশের লাখ লাখ মানুষ লাফিয়ে লাফিয়ে জীবন বিসর্জন দিয়েছেন। আর তিনি হয়েছেন দেশ সৃষ্টির মহানায়ক।
তিনি বলেন, দেশ সৃষ্টির পর তিনি দেশের অর্থনীতি ঢেলে সাজানোর কাজে হাত দিলেন। দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি গ্রহণ করলেন। কিন্তু পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থা বঙ্গবন্ধুর নতুন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা মানতে পারল না। তাকে হত্যা করা হলো। কিন্তু ঘাতকরা জানতেন না ক্যারিশমেটিক লিডারকে মারা যায় না। রুটিনাইজেশন অব ক্যারিশমা সমাজে বার বার ফিরে আসে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা যায় না। তিনি আমাদের মাঝে চির অমলিন।
তরুণদের উদ্দেশে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি বলেন, ‘আমাদের শিক্ষা, আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের ভালোবাসা, আমাদের একুশের চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার যে শক্তি তার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ গড়ে তুলি। যেখানে ধর্মের কোনো কটাক্ষ থাকবে না, শ্রেণি ভেদাভেদ থাকবে না। সব সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়ে বাস করবে। সেটিই আমাদের স্বপ্নের স্মার্ট বাংলাদেশ।’
সমাপনী আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজের অধ্যক্ষ ও নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য প্রফেসর ড. একে এম আব্দুর রফিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. রিয়াদ হাসান। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. মো. হুমায়ুন কবীর। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা পর্যায়ে কর্মরত শিক্ষক-কর্মকর্তা, কর্মচারী ও ছাত্র-ছাত্রীরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে প্রশিক্ষণার্থীদের মাঝে সনদ বিতরণ করা হয়।