Logo
Logo
×

কর্পোরেট নিউজ

‘ক্যাশলেস সোসাইটির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ’

Icon

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি ২০২৩, ০৬:৩৭ পিএম

‘ক্যাশলেস সোসাইটির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ’

ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড এবং আজিয়াটা ডিজিটাল সার্ভিসেস এর যৌথ উদ্যোগে ২০২১ সালে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রা শুরু করে এমএফএস ‘ট্যাপ’। ট্যাপ এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন দেওয়ান নাজমুল হাসান। 

তিনি আজিয়াটা এমএফএস প্রজেক্টের প্রজেক্ট ডিরেক্টর, আজিয়াটা ডিজিটাল সার্ভিসের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এবং রবি আজিয়াটা লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। নাজমুল হাসান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেন। পরে ফিন্যান্স নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইয়র্কের জিকলিন স্কুল অব বিজনেস এ মাস্টার্স করেন। 

দেশে সেবা দেওয়ার এক দশক পার করেছে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) খাত। দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে লেনদেনের সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এই খাত। দশ বছর পার করার পর এমএফএস খাতের ভবিষ্যত ও মানুষের জীবনযাত্রায় লেনদেনের সংস্কৃতি নিয়ে কথা বলেছেন ট্যাপ এর সিইও দেওয়ান নাজমুল হাসান। 

প্রশ্ন: এমএফএস এর মাধ্যমে লেনদেনের সংস্কৃতিতে একটা পরিবর্তন এসেছে। সমাজের সব শ্রেণির মানুষের জীবনধারার সাথেই বিষয়টি মিশে যাচ্ছে। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

দেওয়ান নাজমুল হাসান: এমএফএস খাত দ্রুতই মানুষের মন জয় করেছে। মানুষের জীবনকে সহজ করে দিয়েছে এই খাত। দেশের মানুষও দ্রুত গ্রহণ করছে। আমরা আসলেই ক্যাশলেস সোসাইটির দিকে এগোচ্ছি। এই কাজটা শুরু হয়েছিল ২০০৮ সালে। ধীরে ধীরে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে আলোচনা, এরপর এমএফএস ইন্ডাস্ট্রির যাত্রা শুরু হয়। আস্তে আস্তে  অন্যগুলো যোগ হয়েছে। 

প্রশ্ন: সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে ‘বাংলা কিউআর’ কোড পেমেন্ট সিস্টেম চালু হয়েছে। এটার সুবিধা ও সম্ভাবনা বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কি? 

দেওয়ান নাজমুল হাসান: বাংলা কিউআর কোড দেশের লেনদেন ব্যবস্থায় নতুন মাত্রা যোগ করবে। পাশাপাশি আর্থিক সেবা পৌঁছে যাবে জনগণের দোরগোড়ায়। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ উন্নত বিশ্বের ন্যায় ক্যাশলেস সোসাইটির দিকে আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে। আমরা শিগগিরই এই লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পরিকল্পনা করছি।

প্রশ্ন: এমএফএস খাতের এগিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে কিছু বলুন।  

দেওয়ান নাজমুল হাসান: প্রথমে শুরু টাকা পাঠানো, তারপর আসল মোবাইল রিচার্জ। চার-পাঁচ বছর আগে মোবাইলে এমএফএস ব্যবহার করে ইউটিলিটি বিল প্রদান শুরু হয়। আগে ৮৫% যেতো ক্যাশ ইন-ক্যাশ আউটে, এখন সেটাও কমেছে। মানুষ এখন খাবারের অর্ডার করতে, স্কুলের বেতন দিতে, দৈনিক কেনাকাটা, টিকেটিং, হোটেল বুকিং, ভিসা ফি দিতে এমএফএস ব্যবহার করছে। ঘরে বসেই সব করছে, তাদের বাইরে যেতেও হচ্ছে না। জীবন সহজ হয়ে যাচ্ছে। লাইনে দাঁড়ানোর মত কষ্ট করতে হচ্ছে না। লেনদেনের সংস্কৃতিতে রীতিমত বিপ্লব এনেছে এমএফএস খাত। 

প্রশ্ন: আপনার কি মনে হয়, এতে কি ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীলতা কমে আসছে?

দেওয়ান নাজমুল হাসান: হ্যাঁ- অনেকটা কমে আসছে। ২৫ বছর আগে মানুষ টাকা পাঠাতো একটা ব্যাংক থেকে আরেকটা ব্যাংকের মাধ্যমে। এখন আর ব্যাংকে যেতে হচ্ছে না। আগে ইউটিলিটি বিল, ভিসা ফি ব্যাংক ছাড়া দিতেই পারতাম না। ২০০৯ সাল থেকে ধাপে ধাপে এ ক্ষেত্রে উন্নতি হয়ে এখন সব কিছু মোবাইলের ভেতর চলে আসছে। আমরা সবাই ডিজিটাল সেবা নিতে পারছি নিমিষেই।   

প্রশ্ন: এমএফএসে নিরাপত্তা জোরদার ও প্রতারণা বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তোলার বিষয়ে আপনার ভাবনা কী?

দেওয়ান নাজমুল হাসান: ক্যাশ টাকা নিয়ে চলাচল করলে ঝুঁকি আছে। নিরাপত্তাসহ অনেক বিষয় আছে। বিশ্বের যেকোনো জায়গাতেই এ ঝুঁকি থাকতে পারে। সেখানে মোবাইল ফোন যদি হারিয়েও যায় তবুও টাকা হারাবে না। এ নিরাপত্তাটুকু এমএফএসে আছে। অনেক সময় সংখ্যা লেখার ক্ষেত্রে ভুল হয়ে যায়। আমরা যদি ভুল করি তাহলে নিরাপত্তার সমস্যা হতে পারে। আমাদের ট্যাপের ক্ষেত্রে দুই বছরে এরকম কোনো অভিযোগ পাইনি। আবার গ্রামের দিকে গেলে দেখি যে এমএফএস অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়েছে সেও- পিন নাম্বার জানে, এটাও ঝুঁকিপূর্ণ। নিজের অ্যাকাউন্টের পিন অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করা যাবে না। এসব বিষয়ে সাবধান থাকা জরুরি। এ বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তোলার জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোই উদ্যোগ নিয়েছে। আমরাও আমাদের গ্রাহকদের বিভিন্নভাবে সচেতন করি। 

প্রশ্ন: বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে এমএফএসের ভূমিকা কেমন?

দেওয়ান নাজমুল হাসান: দেশের বিদ্যমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে এমএফএস বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সব শ্রেণি পেশার মানুষের কাছে খাতটি চলে গেছে। আমরা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে যেতে পারছি। এমএফএস দিয়েই অনেক কাজ হচ্ছে। ধরা যাক, একজন মাছ কিনবে তারপর ফেরি করে বিক্রি করবে, কিন্তু তার টাকা নাই, সেক্ষেত্রে কম সুদে ঋণ দেওয়া হবে। আমরা ফ্রন্ট লাইনে থাকব। ওই ঋণ সে একদিনেও ফেরত দিতে পারবে, ৩০ দিনেও দিতে পারবে, তিন মাসেও পারবে। সেক্ষেত্রে মহাজনের মত বিশাল সুদের ভার বহন করতে হবে না। 

প্রশ্ন: অভিযোগ আছে- এমএফএস সার্ভিসে সুস্থ প্রতিযোগিতা নেই, এ কারণে কি উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে?

দেওয়ান নাজমুল হাসান: ধরা যাক, বিদ্যুৎ বিল দিয়ে ১০ টাকা আয় করলাম, কেউ ৩০ টাকা ক্যাশব্যাক দিয়ে দিল। এটা কী স্বচ্ছ প্রতিযোগিতা? আপনার যে ন্যূনতম আয় হওয়ার কথা ছিল তা হচ্ছে না, লোকসান নিয়েই টিকে থাকতে হচ্ছে। এ জায়গাটায় কাজ করার সুযোগ আছে। 

প্রশ্ন: প্রতিযোগিতা কমিশনের সমীক্ষানুযায়ী, দেশে যে চারটি বড় এমএফএস প্রতিষ্ঠান আছে তারাই ৭০-১০০ শতাংশ দখল করে আছে। সেজন্য নতুন কোম্পানি প্রতিযোগিতা করতে পারছে না- এ বিষয়ে আপনি কি বলেন?

দেওয়ান নাজমুল হাসান: কথাটা ঠিক। যদি আমরা বলি ৫০ টাকা রিচার্জ করলে ২৫ টাকা ফ্রি দেব, এই ফ্রি কার কাছ থেকে দিচ্ছি? এই ফ্রি তো আমার আয় না। রিচার্জ করলে আমি এক পারসেন্টও পাই না। সেখানে ফ্রি দিলে আমার ক্যাপিটাল থেকে বার্ন হচ্ছে। এজন্য স্বচ্ছ প্রতিযোগিতার দরকার ও শক্ত রেগুলেশন দরকার। 

প্রশ্ন: এমএফএস শুধু নিজেরাই ব্যবসা করছে না, কর্মসংস্থানেরও সুযোগ দিচ্ছে, এই ব্যবসাটা কতটা সম্প্রসারিত হচ্ছে?

দেওয়ান নাজমুল হাসান: প্রত্যেক কোম্পানির এক/দুই লাখ এজেন্ট ডিস্ট্রবিউটর আছে। এতজন হওয়ায় ব্যবসা টেকসই হচ্ছে। ট্যাপ থেকে আমরা নতুন একটা উদ্যোগ নিয়ে রিকশাওয়ালাদের নিয়ে পাইলট প্রজেক্ট করেছিলাম। রিকশাওয়ালাদের আমরা কিউআর কোড দিয়েছি, যাত্রী নামলে সেটাতে তারা ভাড়া পরিশোধ করবে। দিনশেষে ঐ রিকশাওয়ালা এজেন্টের থেকে ক্যাশআউট করবে। এর জন্য চার্জ লাগবেনা। 

প্রশ্ন: আপনি বারবার উদ্ভাবনী সেবার কথা বলেছেন। যেমন রিক্সাওয়ালাদের পাইলট প্রজেক্ট। এরকম অন্য সেবা কী আছে?

দেওয়ান নাজমুল হাসান: গত রোজার ঈদে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিয়ে সাত দিনে একটা প্রজেক্ট করেছিলাম ‘যাকাত’, খুব পপুলার হয়েছিল। আপনি যাকাতের জন্য এলাকাস্থ যে মাদরাসা/এতিমখানা/লিল্লাহ-বোর্ড খুঁজছেন, অ্যাপের মাধ্যমে জেলা ও উপজেলা বাছাই করলে তা পাবেন। এরকম আরো কিছু করছি। 

প্রশ্ন: একজন গ্রাহক অন্য কোম্পানি ছেড়ে কেন ট্যাপ ব্যবহার করবে, ট্যাপের যাত্রার দেড় বছরে গ্রাহক সংখ্যা নিয়ে আপনারা সন্তুষ্ট?

দেওয়ান নাজমুল হাসান: আমাদের একটা প্রকল্প আছে, যার নাম স্কুল ব্যাংকিং। অনেক স্কুল আমাদের এই প্রকল্পের আওতাধীন। শিক্ষার্থীরা এর মাধ্যমে বেতন দিতে পারে। শিক্ষার্থীদের জন্য ওয়ালেট ব্যাংকিংও আছে। দেওয়া যায় ক্যানটিনের বিলও। এ বিষয়গুলো আমরা এনেছি। এখন পর্যন্ত আমরা সন্তুষ্ট। আমরা এই সেবার গুনগত মান নিশ্চিত করতে চাই। ঠিকমত, চাহিদা অনুযায়ী সেবা দিলে গ্রাহক হারাবে না। বরং গ্রাহক সংখ্যা বাড়বে। 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম