অকারণে দীর্ঘক্ষণ বাস থামিয়ে রাখার প্রতিবাদ করায় ঢাবি শিক্ষককে মারধর

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:১৯ পিএম

আদীব শাহরিয়ার জামা
ঢাকার গণপরিবহন নিয়ে সাধারণ যাত্রীদের বহু অভিযোগ। এর মধ্যে অন্যতম একটি অভিযোগ হচ্ছে, যাত্রী ওঠানোর জন্য কোনো কোনো স্টপেজে দীর্ঘক্ষণ বাস দাঁড় করিয়ে রাখা। এই বিষয়টি নিয়ে প্রায়ই যাত্রীদের সঙ্গে বাসচালক ও হেলপার-কন্ডাকটরদের বাকবিতণ্ডা হয়। তেমনই এক ঘটনার জেরে শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) মারধরের শিকার হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক।
ওই শিক্ষকের নাম আদীব শাহরিয়ার জামান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের প্রভাষক। আজ (শুক্রবার) বেলা তিনটার পর রাজধানীর মিরপুর ১১ নম্বর এলাকায় বাংলা স্কুলের বিপরীত পাশের সড়কে এ ঘটনা ঘটে।
একটি গণমাধ্যমকে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে এই শিক্ষক বলেন, দীর্ঘক্ষণ বাস দাঁড় করিয়ে রাখার প্রতিবাদ করায় মিরপুর সুপার লিংক (৩৬ নম্বর) পরিবহনের বাসের চালক ও সহকারী মিলে লোকজনের সামনেই তাকে মারধর করেছেন।
এদিকে এ ঘটনার পর আজ বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মিরপুর সুপার লিংকের অন্তত পাঁচটি বাস ক্যাম্পাসে নিয়ে গেছেন। অভিযুক্ত চালক ও তার সহকারীকে শনাক্ত করার পর বাসগুলো ছাড়া হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর বলেন, ‘শিক্ষককে হেনস্তার ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা বাসগুলো নিয়ে গেছে বলে শুনেছি।’
শিক্ষক আদীব শাহরিয়ার জামান গণমাধ্যমকে বলেন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে দায়িত্ব পালন শেষে দুপুরে মিরপুরে বাসায় ফিরছিলেন তিনি। পথে নিউমার্কেট থেকে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ৩৬ নম্বর বাসে ওঠেন। বাসটি মিরপুর ১০ নম্বরে ২০ মিনিটের মতো সিগন্যালে আটকে ছিল। তখন বেশির ভাগ যাত্রী নেমে যাওয়ায় অনেক আসন ফাঁকা হয়ে যায়। এর মধ্যে সিগন্যাল ছাড়লেও চালকের সহকারী যাত্রী ডাকতে থাকেন এবং বাসটি থেমে থেমে চলতে থাকে। এতে আবার বাসটি সিগন্যালে পড়ার উপক্রম হয়।
আদীব শাহরিয়ার জামান আরও বলেন, আরেকটি সিগন্যালে আটকানো এড়াতে যাত্রীরা চালককে দ্রুত বাসটি চালাতে বলেন। বাসের অর্ধেকের মতো যাত্রীই ছিলেন ভর্তি পরীক্ষার্থী। তারাও সিগন্যালটি পার হওয়ার জন্য অনুনয় করতে থাকেন। কিন্তু চালক কথা শোনেননি। শেষ পর্যন্ত পরীক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে এ ঘটনার প্রতিবাদ করেন তিনি। এর জেরে চালক ও সহকারীর সঙ্গে তার তর্ক শুরু হয়।
ভুক্তভোগী শিক্ষক বলেন, মিরপুর সুপার লিংক বাসটির সর্বশেষ স্টপেজ মিরপুর ১২ নম্বর। তার নামার কথা ছিল ১১ নম্বরে। কিন্তু চালক ও তার সহকারীর আচরণের প্রতিবাদ করায় চালক হুমকি দেন, মিরপুর ১১ নম্বরে তাকে নামতে দেবেন না। পরের স্টপেজ মিরপুর ১২ নম্বরে নিয়ে তাকে মারধর করবেন। তখন আট থেকে ১০ জন যাত্রী বাসের ভেতরে ছিলেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন বাস থেকে নামতে চাইলেও তাদের নামতে দেওয়া হয়নি। তখন প্রতিবাদ করে ১১ নম্বরের কাছাকাছি একটি জায়গায় বাসটি থামাতে বাধ্য করেন তিনি।
বাস থামার পর প্রথমে স্ত্রীকে নামিয়ে দেন বলে জানান আদীব শাহরিয়ার জামান। তিনি বলেন, স্ত্রীর পর তিনি বাস থেকে নামেন। তার পেছনে বাস থেকে নামেন চালক ও তার সহকারী। তারা একটি বাঁশ নিয়ে তার মাথায় আঘাত করেন। পেটে লাথি দেন চালক। টেনে ছিঁড়ে ফেলা হয় পোশাক। এই সময় সাধারণ লোকজন তাদের ঘিরে দেখতে থাকেন। বাসে থাকা পরীক্ষার্থীরাও পুরো ঘটনা দেখেন। এরপর চালক ও তার সহকারী দ্রুত বাসে উঠে চলে যান।