রাজধানীতে বিশেষ অভিযানে গ্রেফতার ২৪৮, পৃষ্ঠপোষকদের খুঁজছে পুলিশ

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:৩২ পিএম
-67bdfe9c1ec98.jpg)
ছবি: সংগৃহীত
সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। খুন, ধর্ষণ, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের মতো গণবিরোধী অপরাধ ঠেকাতে টহল কার্যক্রম ও চেকপোস্ট জোরদার করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার জরুরি নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীতে গ্রেফতার হয়েছে ২৪৮ অপরাধী।
গ্রেফতার ব্যক্তিদের বেশির ভাগই চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজির মতো অপরাধে জড়িত বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। তবে হঠাৎ তাদের বেপরোয়া কার্যক্রমের পেছনে কেউ ইন্ধন জুগিয়েছে কি না, সেই প্রশ্ন সামনে রেখে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। পুলিশ বলছে, গ্রেফতার ব্যক্তিদের মধ্যে কিশোর গ্যাং গ্রুপের সংশ্লিষ্টতাও পাওয়া গেছে। তাদের পেছনে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার বিষয়টি তদন্তে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। অপরাধীরা কেন হঠাৎ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে, এর পেছনের কারণও খোঁজা হচ্ছে। তাদের পেছনে কোনো রাজনৈতিক শক্তি বা গোষ্ঠী কাজ করছে কি না, তা জানতে গ্রেফতার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান তার এলাকা থেকে ১২ জনকে গ্রেফতারের তথ্য জানিয়ে বলেন, গ্রফতার ব্যক্তিদের কেউ পৃষ্ঠপোষকতা করছে কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
মঙ্গলবার বিকালে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে সাঁড়াশি অভিযানে ২৪৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন ১৪ জন ডাকাত, ১৬ জন পেশাদার সক্রিয় ছিনতাইকারী, ৭ জন চাঁদাবাজ, ১১ জন চোর, ২২ জন চিহ্নিত মাদক কারবারি এবং ৪৪ জন পরোয়ানাভুক্ত আসামি। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে ছুরি, চাকু, মাদকসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ৫৯টি মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) আকরাম হোসেন জানান, সোমবার রাত থেকে পুলিশের কার্যক্রমে সর্বোচ্চ জোর দিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টহল ও চেকপোস্টসহ নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট সব কার্যক্রম ব্যাপক গুরুত্ব দিয়ে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টা অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে যৌথভাবেও টহল ও অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অভিযানে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের অধিকাংশই নিয়মিত অপরাধী। যারা আগ থেকেই বিভিন্ন এলাকাভিত্তিক চক্রের সঙ্গে মিশে অপরাধ করে আসছে। তবে তাদের বেপরোয়া হয়ে ওঠার পেছনে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা আছে কি না, সে বিষয়টি সামনে রেখে গ্রেফতার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সন্দেহজনক কিছু পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এদিন সকালে বনানী সামরিক কবরস্থানে বিডিআর হত্যাকাণ্ডে শহিদ সেনা কর্মকর্তাদের শাহাদতবার্ষিকী ও ‘জাতীয় শহিদ সেনা দিবস’ উপলক্ষ্যে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। উপদেষ্টা বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে। এ অভিযানে আমাদের কোনো কর্মচারী বা বাহিনীর কেউ যদি গাফিলতি করে, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তা সে পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, আনসার বা কারা অধিদপ্তরের হোক; যারা ঠিকমতো কাজ করবে না, তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
রাজধানীতে পুলিশি কার্যক্রম জোরদার : আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে ঢাকা মহানগর এলাকায় পুলিশি কার্যক্রম জোরদারের অংশ হিসাবে ডিএমপিসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে চেকপোস্ট ও টহল কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হয়েছে। ডিএমপির ক্রাইম কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার সূত্রে জানা যায়, সোমবার রাত ১২টা থেকে ডিএমপির ৫০টি থানা এলাকায় জননিরাপত্তায় ৫০০ টহল টিম দায়িত্ব পালন করে। এছাড়া মহানগর এলাকার নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত স্থানে ডিএমপি কর্তৃক ৫৪টি পুলিশি চেকপোস্ট পরিচালনা করা হয়। জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ডিএমপির টহল টিমের পাশাপাশি মহানগরীর বিভিন্ন অপরাধপ্রবণ স্থানে সিটিটিসির সাতটি, অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের (এটিইউ) চারটি এবং র্যাবের ১০টি টহল টিম দায়িত্ব পালন করে। এছাড়াও ডিএমপির চেকপোস্টের পাশাপাশি পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট এপিবিএন কর্তৃক ৩১টি চেকপোস্ট পরিচালনা করা হয়। র্যাব জানায়, প্রকৃত অপরাধীকে গ্রেফতার অভিযান বৃদ্ধি করা হয়েছে। যে কোনো সময় সহযোগিতা পেতে ভুক্তভোগীরা র্যাব কন্ট্রোল রুমের হটলাইন নম্বরে (০১৭৭৭৭২০০২৯) জানাতে পারবেন।
উত্তরায় ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন ঢাকা-১৮ আসনের সাবেক এমপি খসরু চৌধুরী ও হাবিব হাসানের নির্দেশে ছাত্র-জনতার ওপর আজমপুর এলাকায় হামলার নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রলীগ নেতা সাকিবুল হাসান সানি ওরফে লাড়া দে সানিকে (২৪) গ্রেফতার করেছে র্যাব।
এদিকে বনশ্রী এলাকায় স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে গুলি ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় মঙ্গলবার এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে রয়েছে চাপা আতঙ্ক ও ক্ষোভ। গত রোববার রাতে বনশ্রী এলাকায় আনোয়ার হোসেন নামে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে গুলি করে তার কাছে থাকা ২০০ ভরি সোনা এবং নগদ এক লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। জড়িতদের গ্রেফতারে একাধিক দল কাজ করছে বলে জানান রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান আকন্দ।