Logo
Logo
×

রাজধানী

‘মায়ের ডাক’র আলোচনা সভায় বক্তারা

সব গুম ও খুনের আন্তর্জাতিক মানের বিচার করতে হবে

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:১১ পিএম

সব গুম ও খুনের আন্তর্জাতিক মানের বিচার করতে হবে

দেশে ১৫ বছরে সংঘটিত সব গুম ও খুনের আন্তর্জাতিক মানের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। এমনকি দেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য শুধু জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ড নয়, বরং এর আগের গুম ও হত্যাকাণ্ডগুলোর অধিকতর তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চেৌধুরী হলে ‘জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদন এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ-বিচার প্রক্রিয়া : আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট' শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। এ আলোচনা সভার আয়োজন করে গুম হওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘মায়ের ডাক’। ‌

আলোচনা সভায় নেত্র নিউজের সম্পাদক তাসনিম খলিল বলেন, হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর তিনটি গোপন বন্দিশালায় বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন করা হয়েছে। যাতে আলামত মুছে দেওয়া যায়। জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ড নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার কার্যালয়ের (ওএইচসিএইচআর) তদন্ত প্রতিবেদনকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, তদন্ত কাজে সরকার চাইলে আন্তর্জাতিক সহায়তা চাইতে পারে। সংশি্লষ্টদের আন্তরিকতার অভাব নেই। তবে সক্ষমতার ঘাটতি আছে। তিনি বলেন, নাম বলতে চাই না; অনেকে গুমের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, অনেকে বিদেশে টাকাও পাচার করেছেন। সরকারের উচিত এসব টাকা ফিরিয়ে আনতে জাতিসংঘের সাহায্য চাওয়া। তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘের সহায়তা চাওয়ার জন্য জনগণের পক্ষ থেকে দাবি উঠতে হবে।

অনুষ্ঠানে আয়নাঘরের প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করে তাসনিম খলিল বলেন, আয়নাঘরের প্রতিটি সেলকে মডিফাই (বদলে দেওয়া) করা হয়েছে, এখনো হচ্ছে। এছাড়া ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া সেই চেয়ারটি ইলেকট্রনিক্স শক দেওয়ার চেয়ার নয় এটি রিভলভিং চেয়ার। এর মধ্যে মানুষকে বসিয়ে প্রচণ্ড ঘূর্ণনের মাধ্যমে অস্থির করে তোলা হয়। এ সময় তিনি গোপন বন্দিশালার টর্চার সেলগুলোর নির্মম বর্ণনা তুলে ধরেন। সেখানে দেখা যায় বন্দিশালার কক্ষগুলো অত্যন্ত ছোট ও সরু। সেখানে এমনও কক্ষ রয়েছে∏যেগুলোতে মানুষের শোয়া অথবা বসার কোনো জায়গা নেই। ওসব কক্ষগুলোতে মাসের পর মাস দঁাড়িয়ে থাকতে হতো বন্দিদের।

মানবাধিকার কর্মী রেজাউর রহমান লেনিন বলেন, জাতিসংঘের প্রতিবেদনে নির্যাতনে অংশ নেওয়া বাহিনীগুলোর নাম দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি গুমের রহস্য উদঘাটনে আরও পরিপূর্ণ তদন্ত লাগবে। তিনি বলেন, ভারত যদি বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে চায় তাহলে দেশটিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে থাকার প্রমাণ দিতে হবে। শেখ হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে বন্দি বিনিময় চুক্তি ও অন্যসব আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি ভারতকে সম্মান দেখাতে হবে। তিনি বলেন, শুধু জুলাই-আগস্টে মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়নি। এটা বিগত সরকারের শুরু থেকে হয়ে এসেছে।

মানবাধিকার কর্মী লেনিন বলেন, মানবাধিকার সংস্থাগুলো এতদিন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বলে এলেও এখন ‘শহিদ’ ও ‘ডেভিল হান্ট’র মতো ধর্মতানি্ত্রক শব্দ ব্যবহার শুরু করেছে। এ ধরনের শব্দ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

মায়ের ডাক'র সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলাম তুলির সভাপতিত্বে এবং মঞ্জুর হোসেন ঈসার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে গুম হওয়া ব্যক্তির স্বজনরা বক্তৃতা করেন। তারা হলেন লাকসামের হুমায়ুন কবির পারভেজের স্ত্রী সাহানাজ, সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের ছেলে মনোরম পলক, সোহেলের মেয়ে সাফা, কাউসার হোসেনের মেয়ে লামিয়া আক্তার মীম, পিরোজপুরে নাসির উদ্দিন মন্টুর বোন মিতু আক্তার, চঞ্চলের স্ত্রী রেশমা, গুম ফেরত বেল্লাল হোসেন প্রমুখ। গুমের সঙ্গে সংশি্লষ্টদের বিচার ও ভুক্তভোগীদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানান তারা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম