Logo
Logo
×

রাজধানী

ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে ৮ ঘণ্টা

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৪৫ পিএম

ধানমন্ডির ৩২  নম্বরে ৮ ঘণ্টা

ফাইল ছবি

ভারত থেকে পতিত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়াকে কেন্দ্র করে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি মাটির সঙ্গে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। পাশাপাশি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন সুধা সদনেও ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

এসব ভবনে থাকা বিক্রি উপযোগী যা ছিল সবই খুলে নিয়েছে নম্নি আয়ের মানুষজন ও ভাসমানরা। বুধবার রাত ৮টায় গেট ভেঙে ৩২ নম্বরের বাড়ির ভেতরে প্রবেশ থেকে শুরু করে বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিভিন্ন ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছে যুগান্তর।

সরেজমিন দেখা যায়, শেখ হাসিনার বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বুধবার বিকাল থেকে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন ছাত্র-জনতা। ধানমন্ডি ৩২ গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে ফেসবুকে একাধিক পোস্ট দেয় ইনকিলাব মঞ্চসহ বিভিন্ন সংগঠন। তারা ধানমন্ডি ৩২ অভিমুখে ‘বুলডোজার মিছিল' ও ‘মার্চ টু ধানমন্ডি ৩২' কর্মসূচির ডাক দেন। রাত ৯টায় কর্মসূচি থাকলেও ১ ঘণ্টা এগিয়ে এনে ৮টায় করা হয়। তবে সন্ধ্যার পর থেকেই বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা জড়ো হতে থাকেন ৩২-এর সামনের সড়কে। ৮টার দিকে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা বাঁশ, লাঠি, লোহার রড, পা দিয়ে লাথি মেরে বাড়ির মূল গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়েন। তারা বাড়ির বিভিন্ন ফ্লোরে গিয়ে ভাঙচুর শুরু করেন।

এ সময় বাড়ির সামনে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের একটি মু্যরালও ভেঙে ফেলেন বিক্ষুব্ধরা। রাত পেৌনে ৯টায় ভবনের তৃতীয় তলার একটি জায়গায় আগুন জ্বলতে দেখা যায়। এরপর লাঠিসঁোটা ও শাবল দিয়ে বাড়ির সীমানাপ্রাচীর ভাঙা শুরু হয়। সোয়া ৯টার দিকে সেনাবাহিনীর একটি দল ভেতরে ঢোকার চষ্টো করলে জনতার তোপের মুখে তারা ফিরে যায়। শিক্ষার্থীরা হাতের লাঠি, লোহার শাবল দিয়ে ভাঙার কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। রাত ১০টার দিকে বুলডোজার দিয়ে বাড়িটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার দাবিতে ছাত্র-জনতা সামনের সড়কে বিক্ষোভ করেন। একই সময়ে বাড়ির কাছেই ধানমন্ডি লেকের পাশে খোলা জায়গায় প্রজেক্টর বসিয়ে জুলাই গণ-অভু্যত্থান নিয়ে প্রামাণ্যচিত্রের প্রদর্শনী করা হয়। রাত সোয়া ১১টার দিকে বাড়ি ভাঙতে একটি ক্রেন আনা হয়। কয়েক মিনিটের মধ্যেই তারা ভাঙার কাজ শুরু করে। ১১টা ৪০ মিনিটে আনা হয় একটি এক্সকেভেটর। ১১টা ৫৫ মিনিটে সেটি দিয়ে বাড়ি ভাঙা শুরু হয়। রাত ২টা নাগাদ বাড়ির প্রায় অর্ধেক অংশ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এভাবে রাতভর ক্রেন ও এক্সকেভেটর দিয়ে সকাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ও জাদুঘরের অফিস ভবনের বেশিরভাগ অংশ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।

ফজরের নামাজের পর থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষজন সেখানে জড়ো হতে থাকেন। রাতে যারা ছিলেন তারাও ভাঙচুরের কাজ করছিলেন। সকাল থেকে উত্সুক জনতার অনেকেই ভাঙার দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করেন, কেউ কেউ সামাজিকমাধ্যমে লাইভও করেন। সাড়ে ১০টার দিকে এক্সকেভেটর দিয়ে একটি নারিকেল গাছ উপড়ে ফেলা হয়। এ সময় লোকজন জড়ো হয়ে যে যার মতো কাড়াকাড়ি করে নারিকেল ছঁিড়ে নিতে থাকেন। কেউ কেউ নারিকেল হাতে উল্লাস করেন ও ছবি তোলেন। এছাড়া বাড়ির আঙিনায় থাকা ছোট-বড় অন্যসব গাছও উপড়ে ফেলা হয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ক্রেন ও এক্সকেভেটর সেখান থেকে চলে যায়। বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ভবনের তিন তলায় জাতীয় পতাকা উড়াতে দেখা যায়। একটি ফিলিসি্তনের পতাকাও সেখানে বঁেধে রাখা হয়।

ঘটনাস্থলে সরেজমিন দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ও জাদুঘরের অফিস ভবন ভাঙার সময় সকাল ১০টার দিকে জাদুঘরের পেছনে ছয়তলা ট্রাস্টের ভবনে শত শত মানুষ ঢুকে পড়েন। তারা ভবনের ভেতর থেকে বই, স্টিল, লোহা, টিন, কাঠসহ বিভিন্ন জিনিস ভেঙে নিয়ে যেতে থাকেন। ক্রেন ও এক্সকেভেটর সরিয়ে নেওয়ার পর নম্নি আয়ের মানুষ ও ভাসমান লোকজন হাতুড়ি, শাবল, হ্যাকসো বে্লড দিয়ে ভাঙা স্থাপনা থেকে লোহার রড কেটে নিয়ে যান।

তখনো তিনটি ভবনে অল্প পরিসরে আগুন জ্বলছিল। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ স্থানটি থেকে ভেকু ও বুলডোজার সরিয়ে নেওয়ার পর বিক্ষুব্ধদের অনেকে হাতুড়ি, লাঠিসহ বিভিন্ন হালকা যন্ত্র দিয়ে ভবন ভাঙচুর করেন। কেউ আগুন ধরিয়ে দেন, আবার কেউ রং-তুলি দিয়ে দেওয়ালে বিভিন্ন স্লোগান লেখেন। এভাবে ৪টা পর্যন্ত সেখানে শত শত মানুষকে অবস্থান করতে দেখা যায়। তখনো যে যার মতো অবশষ্টি জিনিসপত্র খুলে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় পূর্বপাশের তিনতলা ভবনের ছাদের ওপর থেকে লোহার মই সদৃশ জিনিস দড়ি দিয়ে নিচে নামাতে দেখা যায় একজনকে। বড় হাতুড়ি দিয়ে লোহার ছাউনির মোটা ইস্পাত ভাঙতেও দেখা যায় কয়েকজনকে।

বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটের দিকে ধানমন্ডি-৩২ নম্বরের বাড়ির সামনে একটি গরু জবাই করতে দেখা যায়। এ সময় সেখানে সাধারণ মানুষের জটলা বেঁধে যায়। এর মধ্যে কেউ কেউ আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নানা ধরনের স্লোগান দেন। উপস্থিত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জুলাই ঐক্যজোট নামের একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে গরু আনা হয়েছে। তবে সেখানে গরু জবাই করা হলেও কিছুক্ষণ পরে সেটি সরিয়ে নিতে দেখা গেছে। 

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম