Logo
Logo
×

রাজধানী

পাঠ্যপুস্তকে ‘আদিবাসী’ গ্রাফিতি রাখা না রাখা

মতিঝিলে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত ৩০

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৪৬ পিএম

মতিঝিলে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত ৩০

পাঠ্যপুস্তকে ‘আদিবাসী’ শব্দ সংবলিত গ্রাফিতি রাখা ও না রাখা নিয়ে কর্মসূচি পালনকালে হাতাহাতি ও সংঘর্ষে ৩০ জনের বেশি আহত হয়েছে। পরে পুলিশে লাঠিপেটায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। 

বুধবার রাজধানীর মতিঝিলে এনসিটিবি ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে। আহতরা ঢাকা মেডিকেলসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। 

এদিকে কর্মসূচিতে হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। এই ঘটনায় কোনো পক্ষই থানায় অভিযোগ দেয়নি। পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা যায়, নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি বইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে আদিবাসী শব্দটি বাদ দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করে আসছে ‘স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি’। ওই চিত্রকর্মে একটি গাছের পাঁচটি পাতায় লেখা ছিল মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ও আদিবাসী; পাশে লেখা ছিল ‘পাতা ছেঁড়া নিষেধ’। দাবির মুখে ১২ জানুয়ারি রাতে অনলাইন থেকে শব্দটি সরিয়ে নেয় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কর্তৃপক্ষ। এরপর আদিবাসী শব্দটি পুনর্বহালের দাবিতে ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র জনতা’ সংগঠন আন্দোলন শুরু করে।

 

স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি দাবি আদায় না হওয়ায় ১২ জানুয়ারি কর্মসূচি থেকে মতিঝিলে এনসিটিবি ভবন ঘেরাও কর্মসূচি দেয় সংগঠনটি। এর একদিন পর ১৩ জানুয়ারি একই স্থানে কর্মসূচি ঘোষণা করে সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র জনতা। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মতিঝিলে এনসিটিবি ভবন এলাকায় অবস্থান নেয় স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি। এদিকে রাজু ভাস্কর্যে সমাবেশ শেষে এনসিটিবি ভবন ঘেরাও করতে যায় আদিবাসী ছাত্র-জনতা। 

এদিকে সকালেই এনসিটিবি ভবনের সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। দুপুর ১টার দিকে হঠাৎ পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে থাকে। আগে থেকেই ‘স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টি’র ব্যানারে একদল লোক অবস্থান নেয়। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা’র ব্যানারধারীরা সেখানে যায়। এ সময় পালটাপালটি স্লোগান দেওয়া হয় এবং একপর্যায়ে হাতাহাতি শুরু হয়। পুলিশ দুই পক্ষকে সরিয়ে দিয়ে মাঝখানে অবস্থান নেয়। এ সময় দুই পক্ষের স্লোগান চলতে থাকে। পুলিশের উপস্থিতিতেই এক পক্ষ আরেক পক্ষের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে। শুরু হয় সংঘর্ষ। এ সময় এক সাংবাদিক, শিক্ষার্থী ও নারীসহ ৩০ জনের বেশি আহত হন।

আহতদের মধ্যে রয়েছেন সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতার অনন্ত বিকাশ ধামায়, ধন জেত্রা, জুয়েল মারাক, রূপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা, টনি ম্যাথিউ চিরান, ইসাবা শুহরাত, ফুটন্ত চাকমা, দনওয়াই ম্রো, রেং ইয়ং ম্রো, স্নেহলাল তঞ্চঙ্গ্যা, শান্তা চাকমা, সুস্মী চাকমা, এনজেল চাকমা, সুশান্ত চাকমা, মিশেল ত্রিপুরা, মলয় বিকাশ ত্রিপুরা, রাহি নায়াব ও ববি বিশ্বাস। স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টির আহত সদস্যরা হলেন- আরিফুল খবির, শওকত, আব্বাস, রাজন হোসেন, ওয়াফী, মনোয়ার, নুহান, জিহাদ ও সজিবসহ ১৬ জন। 

স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টির দাবি, তাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচিতে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর লোকজন আগে হামলা করেছে। অন্যদিকে সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতার দাবি, তাদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করা হয়েছে।

দায়িত্ব পালনরত একাধিক পুলিশ সদস্য যুগান্তরকে জানান, সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতার মিছিলটি মতিঝিল সিটি সেন্টারের মুখে পৌঁছালে তাদের গতিরোধ করার চেষ্টা করে স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টির সদস্যরা। তারপরও বাধা উপেক্ষা করে এনসিটিবি ভবনের সামনে আসার চেষ্টা করলে প্রথমে হাতাহাতি শুরু হয়। ধীরে ধীরে তা মারামারি ও সংঘর্ষে রূপ নেয়। তবে পুলিশ তাদের সরিয়ে দিয়ে দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) শাহরিয়ার আলী যুগান্তরকে বলেন, দুই পক্ষের কর্মসূচি ঘিরে সকাল থেকেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। আগেই তাদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ। পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ সক্রিয় ছিল।

ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক জানিয়েছেন, সংঘর্ষে আহত এক সাংবাদিক ও আদিবাসীসহ ১২ জনকে ঢামেক হাসপাতালে জরুরিভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানায় জানানো হয়েছে। 

স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুহম্মদ মুহিউদ্দীন রাহাত বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বিদেশি প্ররোচনায় ২০০৭ সাল থেকে নিজেদের আদিবাসী দাবি করলেও তারা তা নয়। তারা বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসে আমাদের ভূখণ্ডে বাঙালিদের সঙ্গে সহাবস্থান করছে। আদিবাসী বলতে বোঝায় আদি বাসিন্দা। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের আদি নিবাস হচ্ছে পার্শ্ববর্তী মিয়ানমার, ভারত, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড ইত্যাদি রাষ্ট্রগুলোতে।

হামলার ঘটনায় বিভিন্ন সংগঠনের নিন্দা : মতিঝিলে এনসিটিবি ভবনের সামনে বিভিন্ন জাতিসত্তার নাগরিকদের ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ এবং ইউপিডিএফের নেতৃত্বাধীন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদও হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন। বুধবার এসব সংগঠনের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে নিন্দা ও প্রতিবাদ পাঠানো হয়। খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র জনতা’র ওপর হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)। 

বুধবার পরিষদের সভাপতি অঙ্কন চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা বিবৃতিতে বলেন, এই ঘটনায় উগ্র সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা রয়েছে। রাঙামাটি প্রতিনিধি জানান, ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতার’ কর্মসূচিতে পরিকল্পিতভাবে ‘স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি’ নামক উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর একটি ভুঁইফোঁড় সংগঠনের হামলায় আহত হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পিসিপি। 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম