রাজধানীতে চার বিক্ষোভে যানজট ভোগান্তি
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৫৪ পিএম
রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ চার স্থানে বিভিন্ন দাবি আদায়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভের কারণে যানজটে কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছিল দুপুরের ঢাকা।
রোববার আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলসহ তিন দফা দাবি আদায়ে সরকারকে সাত দিনের আলটিমেটাম দিয়ে কাকরাইল মসজিদ মোড়ে ইনকিলাব মঞ্চ, যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগের দাবিতে ইস্কাটনে এনটিআরসিএ ভবনের সামনে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা করে বেসরকারি শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি, শাহবাগে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসক ও বনানীতে প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকার সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
এসব আন্দোলনের কারণে কয়েকটি সড়কও বন্ধ করে দেওয়া হয়; এর ফলে বাইরে বের যাত্রীদের পোহাতে হয়েছে সীমাহীন দুর্ভোগ আর ভোগান্তি। আধাঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা লেগেছে। কোনো কোনো সড়কে গণপরিবহণ না পাওয়ায় হেঁটে অনেককে নিজ নিজ গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। শাহবাগের আন্দোলনের কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হয়েছেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা।
রোববার বিকালে রাজধানীর কাকরাইল মসজিদ মোড় থেকে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলসহ তিন দফা দাবি আদায়ে সরকারকে সাত দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ। এর মধ্যে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেওয়া না হলে সচিবালয় ঘেরাও করে অবস্থান কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার পাঠানো প্রতিনিধির কাছে আমরা আমাদের দাবি তুলে ধরেছি। তারা দাবির বিষয়ে প্রধান উদেষ্টার সঙ্গে কথা বলবেন এবং আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। আমরা সরকারকে সাত দিন সময় দিয়েছি। এর মধ্যে আমাদের তিন দফা দাবি আদায়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে আগামী ২৯ ডিসেম্বর দুপুর ১টায় আমরা সচিবালয় ঘেরাও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব।
এদিন বেলা সাড়ে ১২টার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে একটি মিছিল বের করে ইনকিলাব মঞ্চ। প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে যাওয়ার কথা ছিল মিছিলটির। কিন্তু পুলিশের বাধার কারণে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে সামনে অবস্থান নেন মঞ্চের নেতারা। এর আগে শাহবাগের এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তারা তিন দফা দাবি জানান।
তাদের দাবিগুলো হল- গণহত্যাকারী দল আওয়ামী লীগের নিবন্ধন অবিলম্বে বাতিল, সন্ত্রাসী আওয়ামী লীগের গুপ্ত হত্যা থেকে দেশপ্রেমিক ছাত্রজনতাকে বাঁচাতে দলটির কেন্দ্র থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত কমিটিতে থাকা সব সন্ত্রাসীকে অবিলম্বে গ্রেফতার এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব জুলাই-যোদ্ধাদের জীবনের সম্পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
দুপুর ১টার দিকে শাহবাগে সড়ক অবরোধ করেন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকরা। তাদের দাবি ভাতা ২৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করতে হবে। সাড়ে চার ঘণ্টা শাহবাগের সড়ক অবরোধ করে রাখার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা সারজিস আলম আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলতে বিকালে শাহবাগে যান। তার কাছ থেকে দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়ে চিকিৎসকরা বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে সড়ক থেকে সরে যান।
একইভাবে দুপুরে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ ও ট্রাস্টি বোর্ডের পদত্যাগসহ বেশ কয়েকটি দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো রাজধানীর বনানী-কাকলী মোড় অবরোধ করে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে ওই এলাকার সড়কগুলোর যানচলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হন চলাচলকারী যাত্রীরা।
বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাসেল সারোয়ার বলেন, শিক্ষার্থীরা শনিবারও বনানীতে রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন করেছিল। রোববার আবার তারা স্থায়ী ক্যাম্পাসের দাবিতে আন্দোলন করে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন বোর্ড অব ট্রাস্টি টাকা আÍসাৎ করেছে বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন। তারা এই টাকা পুনরুদ্ধার চান। পরে বিকাল চারটার দিকে তারা সড়ক থেকে সরে যান।
ইস্কাটনে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ-এনটিআরসিএ ভবনের সামনে দুর্নীতি বন্ধ করে বৈধ প্রার্থীদের ন্যায্য অধিকার যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগের দাবিতে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা করেন এনটিআরসিএ নিবন্ধিত (১-১২তম) নিয়োগপ্রত্যাশী শিক্ষক পরিষদ।
আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করে বলেন, এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষ নিয়োগে অসৎ পন্থা অবলম্বন করেছে। বৈধ সনদধারীদের বাদ দিয়ে জাল সনদ ব্যবহারকারীদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রায় ৬০ হাজারের বেশি জাল সনদধারী নিয়োগ পেয়েছে। আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে অযোগ্য প্রার্থীদের চাকরি দেওয়া হয়েছে। সুপ্রিমকোর্টের রায় থাকা সত্ত্বেও বৈধ সনদধারীদের বয়সসীমার শর্ত আরোপ করা হয়েছে। নির্দিষ্ট পদের জন্য বারবার আবেদন করলেও যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যায়নি বলে মিথ্যা দাবি করেছেন কর্তৃপক্ষ। দুর্নীতিমুক্ত একটি নিরপেক্ষ এনটিআরসিএর দাবি জানান তারা।
আন্দোলনকারীরা আরও বলেন, প্রথম থেকে ১২তম ব্যাচের নিবন্ধিতরা বারবার আশ্বাস পেয়েও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখেননি। এরই ধারাবাহিকতায় তারা দাবি আদায়ে এবার আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। আন্দোলনকারীরা বলেন, বৈধ অধিকার নিশ্চিত করতে এনটিআরসিএর স্বচ্ছতা প্রয়োজন। দুর্নীতি ও বৈষম্য বন্ধ করে বৈধ প্রার্থীদের ন্যায্য নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।