পুরোনো পোস্টপেইড মিটার স্থাপনের দাবি
মো. মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া, ডেমরা (ঢাকা)
প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২৩ এএম
রাজধানীর ডেমরা ও আশপাশের থানা এলাকায় প্রিপেইড মিটার নিয়ে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। এ মিটার বর্তমানে গ্রাহকদের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে। অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিলে গ্রাহকের নাভিশ্বাস; অভিযোগ- প্রিপেইড মিটারে আগের অ্যানালগ মিটারের চেয়ে চার-পাঁচগুণ খরচ হচ্ছে। পুরোনো পোস্টপেইড মিটার স্থাপনের দাবি ডেমরার বাসিন্দাদের। তাই সাবেক অ্যানালগ পোস্টপেইড মিটার স্থাপনের জন্য ডিপিডিসির অফিসগুলোয় আবেদনসহ মানববন্ধন করছেন এলাকাবাসী। তবে কোনো কাজ না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করছেন ভুক্তভোগীরা।
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, বর্তমান ডিজিটাল প্রিপেইড মিটার ও পুরোনো অ্যানালগ পোস্টপেইড মিটারে বিদ্যুৎ বিলের পার্থক্য হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। পরীক্ষামূলকভাবে একই সংযোগে পুরোনো অ্যানালগ ও বর্তমান ডিজিটাল প্রিপেইড মিটার স্থাপন করে বিলের কোনো পার্থক্য পাওয়া যায়নি বলে জানান বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা। তবে পর্যায়ক্রমে বিদ্যুৎ বিল ও অন্যান্য সরকারি চার্জ বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রিপেইড মিটারে টাকা বেশি কেটে নিচ্ছে বলে মনে করছেন গ্রাহকরা।
সরেজমিন দেখা যায়, ডেমরা, খিলগাঁও, সবুজবাগ ও রামুপরা থানাধীন অধিকাংশ এলাকায় পর্যায়ক্রমে বিদ্যুতের অ্যানালগ পোস্টপেইড মিটার পরিবর্তন করে ডিজিটাল প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হচ্ছে। আর এর পরপরই শুরু হয়েছে নানা বিড়ম্বনা। একদিকে বাড়তি খরচের বোঝা, অন্যদিকে একাধিকবার প্রিপেইড কার্ড রিচার্জ জটিলতায় অতিষ্ঠ মানুষ। অধিবাসীদের অভিযোগ, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) অধীনে ২০১৮ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে শুরু হয়েছে প্রিপেইড মিটারভিত্তিক বিদ্যুৎ সরবাহের কার্যক্রম। করোনাকালীন এ কার্যক্রম বন্ধ ছিল। বর্তমানে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন এলাকার অধিবাসীরা প্রিপেইড মিটার পাচ্ছেন। ভাড়াটিয়ারাও এ নিয়ে পড়েছেন সমস্যায়। বিদ্যুৎ বিলের বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে বলে তাদের অভিযোগ। বর্তমানে বিদ্যুৎ বিলের সঙ্গে ভ্যাট ও মিটার ভাড়া পর্যন্ত দিতে হচ্ছে ভাড়াটিয়াদের, যা আগে বাড়িওয়ালা বহন করতেন।
গত ২৪ নভেম্বর এনওসিএস, ডেমরা ডিপিডিসি অফিসের অন্তর্ভুক্ত এলাকার নারী ও পুরুষ গ্রাহকরা বিদ্যুৎ অফিসে দ্বিতীয় দফায় বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন। বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে তারা সড়ক অবরোধ করেন প্রায় এক ঘণ্টা। এতে সড়কে যান চলাচল ব্যাহত হয়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এর আগে ২৫ সেপ্টেম্বর সানারপাড় ও মুক্তিনগর এলাকার অধিবাসীরা প্রিপেইড মিটার পরিবর্তনের জন্য ৭ দিনের আলটিমেটাম দিয়ে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন।
এ বিষয়ে ডেমরা বাজার ও রাজাখালি এলাকার গ্রাহক মো. নাজিম, বাদশা মেম্বার, নজরুল হোসেন ও মনসুরা বেগমসহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, আগে মিটারভেদে যেখানে ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা বিদ্যুৎ বিল আসত, সেই মিটারে এখন ৪ থেকে ৬ হাজার টাকা বিল আসছে। ১টি ফ্যান ও ১টি বাতি চালালেই মাসে ২ হাজার থেকে ২২০০ টাকা কেটে নিচ্ছে। তাদের আরও অভিযোগ, কয়েকজন বিদ্যুৎ কর্মকর্তা গ্রাহকদের বলেছেন মিটারপ্রতি ১০ হাজার টাকা দিলে বিদ্যুৎ বিল কম করার সিস্টেম করে দেবে। তাই প্রি-পেইড মিটারের ভৌতিক বিলের মাধ্যমে জনগণের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা বিদ্যুৎ বিভাগ আত্মসাৎ করছে বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে। তবে বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, বিদ্যুৎ বিল কেউ কম করার সিস্টেম করে দিতে পারবে না। কোনোরকম প্রতারণার ফাঁদে পা না দিতে পরামর্শ দিয়েছেন তারা। এ বিষয়ে ডেমরা থানার ওসি মো. নাজমুল হোসাইন বলেন, প্রিপেইড মিটার পরিবর্তনের দাবিতে গ্রাহকরা সড়ক অবরোধ করেছিল বলে আমি তাদের আশ্বাস দিয়েছি, বিদ্যুৎ বিভাগের কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি চলবে না। কোনো কর্মকর্তা যদি অন্যায় করে, তাহলে অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে জবাবদিহিমূলক সেবা প্রদানে অভ্যস্ত করা হবে বিদ্যুৎ বিভাগকে।
এ বিষয়ে এনওসিএস, ডেমরা ডিপিডিসি অফিসের কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমান প্রিপেইড মিটার স্থাপনের ৫ মাস পর বিদ্যুৎ বিল দেওয়া হয়েছে বলে প্রথমে গ্রাহকরা মনে করেছেন বিল বেশি হচ্ছে। আর প্রতি বিলের সঙ্গে বকেয়া বিল যুক্ত করার কারণে প্রথম অবস্থায় গ্রাহকরা বিষয়টি বুঝে উঠতে পারেনি বলে আন্দোলনে নেমেছে। তবে আগের মিটারের পরিবর্তে ডিজিটাল মিটারে মোট বিলের ৫ শতাংশ ভ্যাট, মিটারপ্রতি ৪০ টাকা রেন্ট ও প্রতি কিলোওয়াট ডিমান্ড চার্জ ৪২ টাকা দিতে হচ্ছে গ্রাহকদের। আগে ডিমান্ড চার্জ প্রতি কিলোওয়াট ৩৫ টাকা দিতেন গ্রাহকরা। এসব মিলিয়ে বেশি বিদ্যুৎ বিল গুনতে হচ্ছে বলে গ্রাহকরা মনে করছেন প্রিপেইড মিটার পকেট কাটছে। এ বিষয়ে এনওসিএস, ডেমরা ডিপিডিসির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আহসানুজ্জামান বলেন, সরকারিভাবে নিয়ম অনুযায়ী প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হয়েছে। গ্রাহকদের নিশ্চিত করার জন্য ইতোমধ্যে ৫টি প্রিপেইড মিটারের সঙ্গে পুরোনো অ্যানালগ মিটার স্থাপন করে বিদ্যুৎ বিলের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। এতে করে গাণিতিকভাবে প্রিপেইড ও পোস্টপেইড মিটারের বিলের ব্যবধান পরীক্ষা করে কোনো ত্রুটি পাওয়া যায়নি। বিলের ক্ষেত্রে শতভাগ মিল পাওয়া গেছে বলে ওই গ্রাহকরা আর অভিযোগ করেননি। আর এ বিষয়টি সর্বস্তরে অভ্যস্ত হলে আর কোনো সমস্যা হবে না।