Logo
Logo
×

রাজধানী

দখলদারদের হাত থেকে জামি’আ রাহমানিয়া মাদ্রাসা উদ্ধারের দাবি

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪১ পিএম

দখলদারদের হাত থেকে জামি’আ রাহমানিয়া মাদ্রাসা উদ্ধারের দাবি

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সাত মসজিদ এলাকায় অবস্থিত জামি’আ রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসায় সম্পূর্ণ বেআইনি ও অবৈধভাবে মাওলানা মাহফুজুল হকের নেতৃত্বে তার পরিবারের লোকজনসহ শতাধিক সন্ত্রাসী গত ৫ আগস্ট ওই মাদ্রাসার শিক্ষক-ছাত্রদের উপর হামলা চালিয়ে তাদের বের করে দিয়ে অবৈধ ও বেআইনিভাবে দখল করে নেয়। 

পরবর্তীতে ওয়াকফ প্রশাসনকে ব্যবহার করে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বৈধ কমিটিকে উচ্ছেদ করে তাদের দখলদারিত্ব অব্যাহত রাখতে ষড়যন্ত্র করছে। তাদের হাত থেকে মাদ্রাসাটি উদ্ধারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন মাদ্রাসার বৈধ পরিচালনা পরিষদ।

বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান ভুক্তভোগী বৈধ মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সদস্য ও শিক্ষার্থীরা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, মাদ্রাসার মুতাওয়াল্লি ও পরিচালনা পরিষদের সভাপতি আব্দুর রহিমসহ অন্যান্যরা।সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পরিচালনা কমিটির সহসভাপতি হারুনুর রশিদ। 

তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার বিস্ফোরণে আগস্টের যে তারিখে উড়ে গিয়েছিল ফ্যাসিবাদী রেজিমের ক্ষমতার মসনদ, ঠিক সে দিনই অরাজক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে জামি’আ রাহমানিয়া আরাবিয়া জবর দখল করে নেয় মাওলানা মাহফুজুল হক এবং তার ভাই মাওলানা মামুনুল হক ও তার অনুসারীরা। ৫ আগস্ট বিকেল ৩টার পর মাদ্রাসায় অবস্থানরত ছাত্রদের বড় একটি অংশ আনন্দ-মিছিলে অংশগ্রহণ করতে মাদ্রাসা থেকে বের হয়। গণস্রোত যখন গণভবনের দিকে। মুক্তির এই আনন্দের ক্ষণকে কালিমালিপ্ত করে অকল্পনীয়ভাবে সুযোগ-সন্ধানীদের আরেকটি স্রোত ছিল জামি’আ রাহমানিয়ার ভবনমুখী। এদের হাতেই চরম দুঃখজনক ও নিন্দনীয় ঘটনাটি ঘটে যায়। দখল করে নেয় তারা মাদ্রাসার ভবন।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ২০০১ সালের ৩ নভেম্বর এই জবরদখলকারী শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকের ঘোষিত অবৈধ আহবায়ক কমিটির কার্যক্রমের ওপর আদালত স্থগিতাদেশ জারি করেন। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ১০ জানুয়ারি হাইকোর্ট তার আবেদনটি খারিজ করে দিয়ে শাইখুল হাদিসের সন্তানদের থার্ড পার্টি হিসেবে উল্লেখ করে তাদের আবেদনও নাকচ করে দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তীতে ঢাকা জেলার ডিসি তাদেরকে উচ্ছেদ করে মাদ্রাসার বৈধ পরিচালনা পরিষদের কাছে দখল বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু মাদ্রাসা নিয়ে তাদের ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। গত ৫ আগস্ট আদালতের আদেশ অমান্য করে দখলদার মাওলানা গিয়াস উদ্দিন অসত্য তথ্য দিয়ে ওয়াকফ প্রশাসনের কাছে আবেদন করেন। যে কমিটিকে ৩ বছরের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল সেই কমিটিকেই অদৃশ্য কারণে তিন মাসের মাথায় কোনো নোটিশ না দিয়েই বাতিল করে দেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে মাদ্রাসার ইতিহাস তুলে ধরে বলা হয়, ২০২১ সালে জামিআর মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ আদালতের আদেশে সম্পূর্ণ আইনিভাবে প্রতিষ্ঠানটির দখল বুঝে নেয়। বৈধ পরিচালনা পরিষদ ভবনটির দখল বুঝে পাওয়ার পর মাওলানা মাহফুজুল হকের নেতৃত্বে আরেক পক্ষ প্রতিষ্ঠানটি পুনরায় ফিরে পেতে কোনো আইনি কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেননি। বরং মাওলানা মাহফুজুল ২০২১ সালে বছিলাসংলগ্ন বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে ‘জামিয়া রাহমানিয়া আজিজিয়া’ নামে সম্পূর্ণ নতুন একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন, যার কার্যক্রম এখনো চলছে।

সংবাদ সম্মেলনে যে ছয়টি দাবি তুলে ধরা হয় সেগুলো হলো—

# মাওলানা মাহফুজুল হক বেআইনি পথে জামি’আ রাহমানিয়ার ভবন জবরদখল করেছেন। এর প্রতিকারে তাকেই নিজ দায়িত্বে ভবন ত্যাগ করে প্রকৃত কর্তৃপক্ষের কাছে চাবি বুঝিয়ে দিতে হবে।

# ওয়াকফ প্রশাসককের জারি করা অবাস্তব, অন্যায্য ও বেআইনি নোটিশ বাতিল করতে হবে এবং প্রকৃত কমিটিকে বহাল রাখতে হবে। দখলদাররা স্বেচ্ছায় ভবন ত্যাগ না করলে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে উচ্ছেদ করে প্রতিষ্ঠানটি প্রকৃত কমিটিকে বুঝিয়ে দিতে হবে।

# ভবন জবরদখলের সময় লুটপাট, ভাঙচুর এবং সম্পদ ও নগদ অর্থ তছরুপ করা হয়েছে। জরুরি জিনিসপত্রের পাশাপাশি শিক্ষকদের বেতনের জন্য ব্যাংক থেকে তুলে রাখা নগদ আট লাখ টাকাও লুট করা হয়েছে। সরকারকে এর প্রতিকার ও ক্ষতিপূরণে ব্যবস্থা নিতে হবে; ন্যায় বিচার করতে হবে। 

# জবরদখলকারী ও বেআইনিভাবে জারি করা ওয়াকফ প্রশাসনের নোটিশ বিষয়ে আদালতের কাছ থেকে যথাযথ সিদ্ধান্ত চেয়েছেন তারা।

# সরকারের পক্ষ থেকে ধর্ম উপদেষ্টা ঘোষণা দিয়েছেন, ওয়াকফ প্রশাসনের দুর্নীতি বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এই পদক্ষেপ ত্বরান্বিত করা ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কেউ দুর্নীতিতে জড়িত থাকলে সে বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।

# গত ৫ আগস্ট জামি’আর ভবনে দখলকাণ্ড চলাকালে প্রশাসনের সহায়তা চেয়েও পাওয়া যায়নি। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে এবং এর প্রতিকারে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সিনিয়র সহ সভাপতি কাজী মুজাম্মেল হোসেন, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি মুনীর সাঈদ, কোষাধ্যক্ষ হাফিজ আব্দুল গাফফার, সদস্য আব্দুর রব, আলহাজ আব্দুল মতিন। 

আরও উপস্থিত ছিলেন- জামি’আ রাহমানিয়া আরাবিয়ার সিনিয়র ভাইস প্রিন্সিপাল মুফতি ইবরাহীম হেলাল, ভাইস প্রিন্সিপাল মুফতি সাঈদ আহমাদ, সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা আব্দুল কাইয়ূম আল মাসউদ, মুফতি বুরহানুদ্দীন কাসেমী, মাওলানা ক্বারী মুনীরুজ্জামান কাসেমী, মুফতি মীযানুর রহমান কাসেমী প্রমুখ।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম