কচ্ছপ গতিতে চলছে কাওলা থেকে কতুবখালী রুটে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের কাজ। তিন থেকে সাড়ে ৩ বছর সময়ে বাস্তবায়নযোগ্য প্রকল্প ১৫ বছরেও শেষ হয়নি।
বিদেশি তিন কোম্পানির অর্থনৈতিক জটিলতায় গত ৯ মাস ধরে প্রকল্পের কাজ বন্ধ। সব ধরনের জটিলতা নিরসন শেষে আগামী মাস থেকে প্রকল্পের কাজ শুরু হবে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি) মূলক এই প্রকল্পের ৫১ শতাংশের মালিকানা ছিল ইতালিয়ান থাই (ইতালথাই) ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি। শুরু থেকে এই কোম্পানির অর্থনৈতিক সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। শুরুতে ইতালথাই পুরো অংশের মালিকানা থাকলেও পরে ৪৯ শতাংশ চায়নিজ দুটি কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেয়। প্রকল্পে যথানিয়মে অর্থায়ন না করায় আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে তারা হেরে গেছেন। এই প্রক্রিয়া দ্রুততম সময়ে শেষ হলে বিদ্যমান সমস্যার সমাধান হতে পারে।
পিপিপি প্রকল্প হিসাবে যে ধরনের আর্থিক সক্ষমতা থাকা দরকার ছিল ইতালিয়ান কোম্পানির তা ছিল না। যে জন্য শুরু থেকে নানা অজুহাত দেখিয়ে থেমে থেমে কাজ করেছে। এতে করে সময় বেশি লেগেছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ) উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান বাছাইয়ে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।
একইভাবে পিপিপি প্রকল্প হওয়ায় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান যত্রতত্র র্যাম্প স্থাপন করেছে। যেটা শহরের জন্য নেতিবাচক হয়েছে। শহরকে বাইপাস করার কথা থাকলেও যত্রতত্র র্যাম্প করায় তা ফ্লাইওভারে পরিণত হয়েছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকা শহরে যানজটের ভোগান্তি কমাতে ২০০৯ সালে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ২০১১ সালে এই প্রকল্প অনুমোদন পায়। ২০১৭ সালে প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়। আর ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার চালু করে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। প্রকল্পের বর্তমান অগ্রগতি প্রায় ৭৫ শতাংশ। মোট খরচের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৯৩৪ কোটি টাকা।
নানা সমস্যায় ধুঁকতে থাকা ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের মেয়াদ আগামী জুন পর্যন্ত থাকলেও তা আবারও বাড়ানো হতে পারে। কেননা, গত ৯ মাসেরও বেশি সময় ধরে প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকায় নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হবে না।
সূত্র জানায়, এ প্রকল্পের ৩১টি র্যাম্পের দৈর্ঘ্য ২৭ কিলোমিটার। মূল এক্সপ্রেসওয়ের ২০ কিলোমিটার ও র্যাম্পের দৈর্ঘ্য মিলিয়ে প্রকল্প দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৭ কিলোমিটার, যা এই প্রকল্পের বড় বেমানান দিক, মূল প্রকল্পের চেয়ে র্যাম্পের দৈর্ঘ্য বেশি। পিপিপি প্রকল্পে সাধারণ উদ্যোক্তা বা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান পুরো টাকা বিনিয়োগ করে। তবে এ প্রকল্পে বাংলাদেশ সরকার ২ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে।
প্রকল্প চালু হওয়ার সময় থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ের টোল আদায় করবে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে’র ৩১টি র্যাম্পের মধ্যে ওঠার জন্য ১৫টি এবং নামার ১৬টি। চালু হওয়া অংশের র্যাম্পের সংখ্যা ১৫টি। সেগুলো হলো-বিমানবন্দরে ২টি, কুড়িলে ৩টি, বনানীতে ৪টি, মহাখালীতে ৩টি, বিজয়সরণিতে ২টি ও ফার্মগেটে ১টি।
সরেজমিন দেখা গেছে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র্যাম্পে কর্মব্যস্ত দিনের সকাল, বিকাল ও সন্ধ্যায় তীব্র যানজট থাকে। র্যাম্প বা ওঠানামার পথে যানজট মাড়িয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উঠতেই অনেক সময় নষ্ট হচ্ছে। কাওলা, ফার্মগেট, বনানী পয়েন্টে নিত্যদিনই র্যাম্পের পয়েন্টেও তীব্র যানজট দেখা যায়।
এ প্রসঙ্গে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. মো. হাদিউজ্জামান যুগান্তরকে জানান, ফিজিবিলিটি স্টাডি রিপোর্ট অনুযায়ী প্রকল্পটি ৩ থেকে সাড়ে ৩ বছরে বাস্তবায়ন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা ১৫ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি (২০০৯-২০২৪)। এজন্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সক্ষমতা না থাকা বড় কারণ। এটাও দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার ব্যর্থতা। কেননা, তাদের দায়িত্ব ছিল উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান খুঁজে বের করা।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) প্রধান প্রকৌশলী কাজী মো. ফেরদৌস যুগান্তরকে বলেন, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের আর্থিক জটিলতা নিরসন হয়েছে। আশা করছি ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শুরু হবে এবং আগামী বছরের মধ্যে পুরো অংশ চালু করা সম্ভব হবে।