৮২ চিকিৎসকের চেষ্টায় জোড়া লাগা শিফা-রিফাকে পৃথক
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:০২ এএম
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে বুকে-পেটে জোড়া লাগা শিশু শিফা-রিফাকে সফলভাবে পৃথক করা হয়েছে। এতে অংশ নেন বিভিন্ন বিভাগের ৮২ চিকিৎসক। ঢামেক হাসপাতালে কনফারেন্স রুমে সোমবার ‘শিফা-রিফা থেকে শিফা ও রিফা’ পৃথকীকরণ সফলতার পরবর্তী অনুষ্ঠানে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, বরগুনার বেতাগী উপজেলার গার্মেন্টকর্মী বাদশা মিয়ার স্ত্রী মাহমুদা বেগম। তারা বর্তমানে মিরপুরের বাসিন্দা।
গত বছরের ৭ জুন স্থানীয় হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে জোড়া লাগা শিশুর জন্ম দেন। ১৪ জুন ঢামেক হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাহানুর ইসলামের কাছে নিয়ে আসেন তার বাবা-মা। চিকিৎসকের অধীনে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাদের। সে সময়ে শিশুদের চিকিৎসার জন্য বোর্ড গঠন করা হয়। সেই থেকে শুরু হয় তাদের চিকিৎসা কার্যক্রম বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা।
বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থাকায় চিকিৎসকদের পরামর্শে তাদের বাসায় রেখে চিকিৎসা চলতে থাকে। মাঝেমধ্যে ফলোআপে থাকে। জন্মগতভাবে দুই শিশুর মাথা, দুই হাত, দুই পা, মলদ্বার, প্রস্রাবের রাস্তা যৌনিপথ রয়েছে, কিন্তু বুক পেট জোড়া লাগা অবস্থায় ছিল।
চলতি বছরের ৭ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে ১০ ঘণ্টাব্যাপী সফল পৃথকীকরণ অপারেশন সম্পন্ন করা হয়। অপারেশন শেষে তাদের আইসিইউতে (ভেন্টিলেটরে) রাখা হয়। ৮ সেপ্টেম্বর রিফাকে ভেন্টিলেটর থেকে মুক্ত করা হয়। ৯ সেপ্টেম্বর শিফাকে মুক্ত করা হয়। ১১ সেপ্টেম্বর শিফা কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। পরে তাকে ন্যাশনাল হার্ড ফাউন্ডেশনের প্রধান শিশু কার্ডিয়াক সার্জন অধ্যাপক আরিফুজ্জামানের সহযোগিতায় তার অধীনে সেখানে নিয়ে রাখা হয়। সেখান থেকে ঢামেক হাসপাতালে ফেরত আসেন ১৮ সেপ্টেম্বর। সেই থেকে শিফা ঢামেকের আইসিইতে রয়েছে। রিফা পুরোপুরি সুস্থ আছে।
চিকিৎসকরা জানান, দুজনের হৎপিণ্ডের পর্দা সাধারণ যকৃত নালি, পোর্টাল শিরা, ক্ষুদ্রান্ত্রের কিছু অংশ একে অন্যের সঙ্গে জোড়া লাগা। তা সত্ত্বেও অপারেশন-পরবর্তী ফলাফল ভালো ছিল। এত সব সমস্যার মধ্যেও তারা সফলভাবে শিশুদের পৃথক করতে পেরেছেন সবার সমন্বয়ে, একটি টিমওয়ার্কের মাধ্যমে। এ অপারেশন করতে আর্থিক সহযোগিতা করে আকিজ গ্র“প, সমাজসেবা ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, চিকিৎসকসহ অন্যরা।
শিফা-রিফার বাবা বাদশা মিয়া বলেন, আমি নিতান্ত গরিব, আমার পক্ষে এ চিকিৎসা করানো সম্ভব হতো না। ঢামেকের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. কামরুল আলম বলেন, অন্য কোনো বিদেশি সাহায্য-সহযোগিতা ও চিকিৎসক ছাড়াই সফলভাবে শিফা-রিফাকে পৃথক করতে পেরেছি। এটা শুধু ঢাকা মেডিকেলের সফলতা না, এটা বাংলাদেশের সফলতা।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, জুলাই থেকে আমরা একটি যুদ্ধের মধ্যে ছিলাম। এর মধ্যেও এত বড় একটি সফলতা অর্জন করেছেন চিকিৎসকরা। অধ্যাপক ডা. সাহনুরের নেতৃত্বেধীন পুরো টিমকে তিনি ধন্যবাদ জানান। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, ঢামেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক আশরাফুল আলম, কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. কামরুল আলম, বিভিন্ন বিভাগের অধ্যাপক, চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।