অচলাবস্থা কাটেনি, আশুলিয়ায় ৫৫ কারখানা আবার বন্ধ
যুগান্তর প্রতিবেদক (ঢাকা উত্তর)
প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:২৭ পিএম
গত কয়েক দিন ধরে পরিস্থিতি তুলনামূলক স্বাভাবিক থাকলেও বকেয়া বেতন ও ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোসহ বিভিন্ন দাবিতে ফের অচলাবস্থায় পরেছে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বন্ধ হয়ে পড়েছে আশুলিয়ার জিরাবো, নরসিংহপুর, জামগড়া এলাকার বৃহৎ কয়েকটি পোশাক কারখানা।
সোমবার থেকে ফের অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এখনও বাকি কারখানাগুলোতে উৎপাদন প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শিল্প পুলিশ আশুলিয়া জোনের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারওয়ার আলম।
রোববার অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ২২টি কারখানা থেকে সোমবার এক ধাক্কায় ৫৫ টিতে উন্নীত হওয়ায় বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে উৎপাদন ব্যবস্থা। বিদেশি ক্রেতাদের কার্যাদেশ হারানোর পাশাপাশি রপ্তানি বাজারে বড় ধরনের প্রভাব তৈরির আশঙ্কা পোশাক কারখানার মালিকদের।
শিল্পাঞ্চলে ১ হাজার ৮৬৩টি তৈরি পোশাক কারখানার মধ্য চলমান সংকটের আগে থেকেই বন্ধ ছিল ১৬৭টি কারখানা। নতুন করে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ৫৫ টিসহ ২১৯টি শিল্প কারখানা বন্ধ থাকায় গভীর অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন তৈরি পোশাক শ্রমিকরা।
স্থানীয়রা জানান, বোনাস, টিফিন বিল, নাইট বিল বৃদ্ধি বাস্তবায়ন না হওয়ায় গতকাল রোববার বিভিন্ন কারখানায় বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। এরপর ছুটি ঘোষণা করার পর সোমবার থেকে দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী হা-মীম গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের মালিকানাধীন দ্যাটস ইট স্পোর্টস ওয়ার লিমিটেড, অ্যাপারেল গ্যালারি লিমিটেড, রিফাত গার্মেন্টস লিমিটেড, এক্সপ্রেস ওয়াশিং অ্যান্ড ডাইং লিমিটেড, আর্টিস্টিক ডিজাইন লিমিটেড, নেক্সট কালেকশন লিমিটেড নামের তৈরি পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের ঘোষণা দেয়।
এ ব্যপারে হামিম গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অ.) মঈন আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, শত বাধা সত্ত্বেও আমরা উৎপাদনের চাকা সচল রাখার চেষ্টা করছি। শ্রমিকদের ২৭ টি দাবি মেনে নেওয়ার পরও তারা কাজে যোগদান না করায় আমরা বিকল্প ব্যবস্থায় রাত দিন কাজ করছি যেন আমাদের শিপমেন্ট নিয়ে বিদেশি বায়াররা হতাশ না হন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হা-মীম গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ।
তিনি জানান, চলমান সহিংসতা ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিবেচনায় শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থেই এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি। শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা ১৩ (১) অনুযায়ী দৈনিক ভিত্তিক ‘কাজ নেই মজুরি নেই’ নীতিমালায় অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ করায় শ্রমিকরা কোনো বেতন ভাতা পাবেন না।
কারখানার পরিবেশ নিরাপদ হলে শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কর্মপরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে করে কারখানা খুলবে তা নোটিশের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে বলেও জানান এ কে আজাদ।
এদিকে, নজিরবিহীন নিরাপত্তা সত্ত্বেও শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হওয়া কারখানার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় শ্রম খাত ও পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন বিদেশি ক্রেতারা।
হামিম কে অনুসরণ করে এনভয়, দ্য রোজ গার্মেন্টস, ইউকোরি। একই সঙ্গে অ্যাপারেলস, জেবারেস নেক্সট, সিন সিন অ্যাপারেল, টেক্সট ম্যাক্স, মেহনাজ স্টাইল ও রেডিয়ান্স যোগ না দেবার কারণে শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় শ্রম পরিস্থিতি ক্রমশ ঘোলাটে হয়ে পড়েছে।
অনিশ্চয়তায় নতুন করে কার্যাদেশ আসছে না বলেও জানিয়েছেন বেশ কয়েকটি কারখানার মালিক।
তৈরি পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, পর্যাপ্ত নিরাপত্তাসহ নানা উদ্যোগ নেওয়ার পরও পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হচ্ছে না। কোথাও কোথাও ন্যূনতম বেতন ২৫ হাজার টাকা দাবি করায় নতুন করে অস্থিরতার তৈরি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে কারখানা চালু রাখার মতো অবস্থা নেই।
শিল্প মালিকদের অভিযোগ, আর্মড পুলিশ, র্যাব-বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সহায়তা পেয়েও পুলিশ আগের মতো সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে না। তবে শিল্প পুলিশ আশুলিয়া জোনের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারওয়ার আলম বলেছেন, ‘বল প্রয়োগ করে শ্রমিকদের দাবি দেওয়া মোকাবিলার কৌশল আগেও ফল দেয়নি, এবারও দেবে না। বরং, পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হবে।’
মালিক-শ্রমিকদের আন্ত-সম্পর্ক বৃদ্ধি ও পরস্পরের সমঝোতার মাধ্যমেই এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করার পরামর্শ দেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।
এদিকে যেকোনো ধরনের সহিংসতা এড়াতে শিল্পাঞ্চলে মোতায়েন রয়েছে পুলিশ, আর্ম পুলিশ, শিল্প পুলিশ, বিজিবি ও সেনা সদস্যদের যৌথ টহল। শিল্প প্রতিষ্ঠানের সুরক্ষায় বিভিন্ন কারখানার সামনে মোতায়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যান, র্যাব, পুলিশের রায়ট কার ও জলকামান।