আনসারদের ‘রেস্ট টাইম প্রথা’ বাতিল, জাতীয়করণে কমিটি গঠন
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২৪, ১০:০১ পিএম
আনসারদের চলমান আন্দোলনের মধ্যে বাহিনীটির সদস্যদের রেস্ট টাইম প্রথা বাতিল করেছে সরকার। রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
তিনি জানান, চাকরি জাতীয়করণসহ আনসার সদস্যদের অন্যান্য দাবিগুলোর বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করে সাত কার্যদিবসের মধ্যে সরকারের কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। আনসার ও ভিডিপির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আব্দুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদকে কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। পরে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি প্রতিবেদনের সুপারিশগুলো পরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত নেবে।
আন্দোলনরত আনসার সদস্যদের সাত সদস্যের প্রতিনিধিদের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এদিন ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন।
রেস্ট টাইম প্রথা সম্পর্কে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আনসার আইনে বলা হয়েছে, একজন আনসার সদস্য টানা তিন বছর কাজ করার পর তাকে ছয় মাসের ছুটিতে পাঠানো হয়। এটাকে রেস্ট টাইম প্রথা বলা হয়। তারা ছয় মাস পর আবার কাজে যোগ দিতে পারবে। কিন্তু রেষ্ট টাইম সময়ে তারা সরকারি বেতন পায় না। ফলে অর্থিকভাবে অভাব অনটনের মধ্যে তাদের দিন কাটাতে হয়। তাই এ প্রথা বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে তাদের চাকরি নিয়মিত করা হলো।
চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে বিক্ষোভরত কর্মকর্তারা জানান, অন্তত ৭০ হাজার আনসার সদস্যের বেতন দেয় না সরকার। তাদের যে কার্যালয়ে মোতায়েন করা হয়, সেখান থেকে তাদের বেতন দেওয়া হয়। আনসার ও ভিডিপি সদরদপ্তরের কাছে প্রতি বছর বিভিন্ন সরকারি দপ্তর বা ইনস্টিটিউট থেকে গড়ে প্রায় ৫৫ হাজার সদস্য চাওয়া হয়। ৯০ দিনের প্রশিক্ষণ শেষে তিন বছরের জন্য আনসার সদস্যদের ওইসব প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তায় নিয়োগ দেওয়া হয়। একজন আনসার সদস্য দৈনিক বেতন পান ৫৪০ টাকা। এছাড়া বাহিনীটির পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাদের জন্য রেশন সুবিধা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
ব্রিফিংয়ের সময় উপস্থিত ছিলেন তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, যেহেতু কমিটি গঠন করা হয়েছে, প্রতিবেদনগুলো বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমরা জাতীয় সংকটে আছি। অনেক কাজ আছে। এ দুর্যোগের মধ্যেও কমিটি সবকিছু বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেবে। তবে প্রাথমিকভাবে রেস্ট টাইম প্রথা বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
আশ্বাসের প্রেক্ষিতে আনসার আন্দোলনের আহ্বায়ক মো. নাসিম মিয়া গণমাধ্যমকে জানান, তারা সাময়িকভাবে বিক্ষোভ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। তিনি বলেন, আমরা আন্দোলন স্থগিত করছি। আনসার সদস্যরা তাদের কাজে ফিরে যাবে। আমরা তাদের সিদ্ধান্ত খতিয়ে দেখব এবং তারপরে আমরা আমাদের পরবর্তী কর্মপন্থা ঘোষণা করব। আমাদের এক দফা দাবি চাকরি জাতীয়করণ করা।
কমিটি গঠন:
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর অধীন সাধারণ আনসার সদস্যদের দাবি-দাওয়ার বিষয়টি পর্যালোচনা করে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে সরকারের কাছে প্রতিবেদন পেশ করতে বলা হয়েছে। রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের আনসার শাখা-২ এর উপসচিব কে এম আল আমীন স্বাক্ষরিত আদেশে এ কমিটি গঠন করা হয়।
এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর অধীন সাধারণ আনসার (পুরুষ/মহিলা), অ্যাসিস্ট্যান্ট প্লাটুন কমান্ডার (এপিসি) ও প্লাটুন কমান্ডার (পিসি) কর্তৃক উত্থাপিত দাবি-দাওয়ার বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক সুপারিশ প্রণয়নের লক্ষ্যে নির্দেশক্রমে কমিটি গঠন করা হলো। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদকে।
কমিটির সদস্যরা হলেন- আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর উপ মহাপরিচালক (প্রশাসন) কর্ণেল তসলিম এহসান, ২৭ আনসার ব্যাটালিয়ন বান্দরবান সুয়ালকের পরিচালক রাসেল আহমেদ, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সহকারী পরিচালক (রেকর্ড) মো. আবুল কালাম আজাদ, ১৩ আনসার ব্যাটালিয়ন রাঙ্গামাটি বাঘাইছড়ি মারিশ্যার কোম্পানি কমান্ডার মো. হুমায়ুন কবির শরীফ, সাধারণ অঙ্গীভূত আনসার সদস্য কর্তৃক গঠিত আহ্বায়ক কমিটি থেকে চার জন এবং সদস্য সচিব আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর পরিচালক (প্রশাসন) জাহানারা আক্তার।
রোববার সকাল সাড়ে ৮টা থেকেই চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে টানা চতুর্থ দিনের মতো রাস্তায় নেমেছেন সাধারণ আনসার সদস্যরা। কয়েক হাজার আনসার সদস্য জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ শুরু করেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা সচিবালয়ের দিকে আগ্রসর হলে কর্তব্যরত নিরাপত্তা কর্মীরা সচিবালয়ের সব কয়টি গেট বন্ধ করে দেয়। এ সময় আনসার সদস্যরা কাউকে সচিবালয়ে প্রবেশ এবং বের হতে দেয়নি। এক পর্যায়ে বেলা দেড়টার দিকে দুই শতাধিক আনসার সদস্য ঢুকে পড়েন সচিবালয়ে। তারা সচিবালয়ের অভ্যন্তরে চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন।
আনসার সদস্যদের সড়ক অবরোধের ফলে সচিবালয়ের ভেতরে আটকা পড়েন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা কাউকে ঢুকতে এবং বের হতে দেয়নি। স্বারষ্ট্র উপদেষ্টাসহ অন্যান্য উপদেষ্টা এবং আনসার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পরও তারা সচিবালয় গেট অবরুদ্ধ করে রাখেন।
সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্তও আনসার সদস্যরা সচিবালয়ের সবগুলো গেটের সামনে অবস্থান করছিলেন। তারা ঘোষণা দিয়েছেন, চাকরি জাতীয়করণের দাবি পূরণ না হলে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। ৬টার দিকে আন্দোলনকারী আনসাররা মাইকে ঘোষণা দিয়েছেন, আমরা মাঠ ছাড়ছি না। আমাদের লাশের ওপর দিয়ে আপনাদের যেতে হবে। রেস্ট প্রথা তুলে নেওয়ার যে সিদ্ধান্ত, সেটা আমরা মানি না। আমাদের একটাই দাবি জাতীয়করণ। আমরা প্রয়োজনে আজ রাতে এখানে ঘুমাবো।
দুপুর থেকেই সেখানে আনসাররা বসে পড়ে বিক্ষোভ করছেন। বন্ধ রয়েছে সচিবালয়ের পূর্ব পাশের জিরো পয়েন্টের দিকের সড়কের একাংশ। সচিবালয়ে প্রবেশ এবং বের হওয়ার পাঁচটি গেটের সামনেই আনসাররা অবস্থান নিয়েছেন। সন্ধ্যা ৬টা পার হয়ে গেলেও সচিবালয় থেকে কেউ বের হতে এবং প্রবেশ করতে পারেননি। সচিবালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা কর্মচারীরা আনসার সদস্যদের অপেশাদার আচরণকে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি হিসাবে বর্ণনা করেছেন।