চাঁদা না পেয়ে ফার্মগেটে তাণ্ডব স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার, হোটেল লেগুনা ভাঙচুর
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৪, ১০:৩৯ পিএম
রোববার সকাল সোয়া ৬টা। রাজধানীর ফার্মগেট ইন্দিরা রোডের টিঅ্যান্ডটি মাঠের পাশে সহযোগী টুটুলকে নিয়ে গাড়ি থেকে নামেন ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মিথুন ঢালি। ফুটপাতে চায়ের দোকানদার ও হকারদের কাছে চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা দিতে কেউ অস্বীকার করলেই শুরু করেন এলোপাথাড়ি মারধর ও হামলা। এক দোকানিকে মারধর করে বুকের ওপর দাঁড়িয়ে থাকেন ঢালি। ভাঙচুর করা হয় কয়েকটি চায়ের দোকানে। পরে তিনি জান্নাত খাবার হোটেলে হামলা চালিয়ে মারধর করেন স্টাফদের। ভেঙে দেওয়া হয় এক কর্মচারীর হাত। পাশে থাকা বন্ধ বিকাশের দোকানের তালাও ভাঙার চেষ্টা করা হয়।
এরপর সহযোগীকে নিয়ে ঢালি যান খেঁজুরবাগান এলাকার লেগুনা স্ট্যান্ডে। সেখানেও তিনি চাঁদার দাবিতে ইন্দিরা পরিবহনের লেগুনাচালক ও হেলপারদের মারধর শুরু করেন। ভাঙচুর চালাতে থাকেন লেগুনায়। পরে ইন্দিরা পরিবহনের লোকজন গণধোলাই দেয় ঢালি ও তার সহযোগীকে। এ খবরে ঢালির সহযোগীরা এসে ৩০-৩৫টি লেগুনায় ভাঙচুর চালায়।
এ অবস্থায় ইন্দিরা পরিবহণের মালিক দেলোয়ার হোসেন চুন্নুর ফোনে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় আহত হয়েছেন ৩০ জনের বেশি। গুরুতর অবস্থায় বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন মিথুন ঢালি এবং আব্দুস সাত্তারসহ কয়েকজন। এদের মধ্যে সাত্তারকে বাসা থেকে ডেকে এনে তার ওপর হামলা চালানো হয়। ঘটনার তিনদিন পেরিয়ে গেলেও এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। এমনকি এখনো কাউকে আটক বা গ্রেফতারও করা হয়নি।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুই গ্রুপের হামলা, ভাঙচুর ও মারামারি হয়েছে। এ কারণে এখনো মামলা হয়নি। শেরেবাংলা নগর থানার ওসি আহাদ আলী যুগান্তরকে বলেন, খবর শোনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। লিখিত অভিযোগ না থাকায় আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারিনি।
জানা যায়, ফার্মগেট এলাকার দখলদারি ও চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ওই নেতার দুই অনুসারীর মধ্যেই হামলা-পালটা হামলার ঘটনা ঘটেছে। স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় নেতার নির্দেশেই ক্যাডার সাত্তারের লেগুনা স্ট্যান্ড দখল করতে গিয়েছিল মিথুন ঢালি।
এ বিষয়ে ইন্দিরা পরিবহণের মালিক দেলোয়ার হোসেন চুন্নুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি। একই পবিহণের অপর মালিক আ. সাত্তার মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যুগান্তরকে বলেন, ঢালি বাহিনী অবৈধভাবে লেগুনাস্ট্যান্ড দখল করতে এসেছিল। এলাকায় ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করার কারণে স্থানীয়রা তাকে গণধোলাই দিয়েছে।
মিথুন ঢালি যুগান্তরকে বলেন, গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য আমি টুটুলকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়েছিলাম। রাস্তায় এলোপাথাড়িভাবে লেগুনা রাখার কারণে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা হচ্ছিল। হর্ন দেওয়ার পরও লেগুনা সরানো হচ্ছিল না। পরে টুটুল গাড়ি থেকে নামলে তাকে আঘাত করা হয়। পরে আমি নেমে বেতের লাঠি দিয়ে কয়েকজনকে আঘাত করি। আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই সাত্তারের লোকজন আমার ওপর হামলা চালায়। এ খবর শুনে আমার লোকজন এসে কিছু লেগুনায় ভাঙচুর চালিয়েছে।