গাড়িচাপায় নিরাপত্তাকর্মীর মৃত্যু, পরিকল্পিত হত্যা বলছে পরিবার
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৪, ১১:৪৩ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারে বাসার গ্যারেজে গাড়িচাপায় নিরাপত্তাকর্মীর মৃত্যুর ঘটনা পরিকল্পিত বলে দাবি করেছে নিহতের পরিবার। তাদের অভিযোগ, কোনো কারণে জেদ থেকে ফ্ল্যাটমালিক প্রকৌশলী মফিদুল ইসলাম (৬৯) পরিকল্পনা করে নিরাপত্তাকর্মী মো. ফজলুল হককে (২৫) হত্যা করেছেন।
ঘটনার পর থেকে বিষয়টি ম্যানেজের চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন পরিবারের সদস্যরা।
পুলিশ বলছে, গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গেট ভেঙে ফজলুলকে চাপা দেয় বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তবে এ ঘটনার পেছনে অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে কিনা তা জানতে বিভিন্ন বিষয় যাচাই করা হচ্ছে। এছাড়া আসামি মফিদুল ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
বৃহস্পতিবার সকালে গাড়িচাপায় নিহত হন ফজলুর হক। এ ঘটনায় ওইদিন রাতে নিহতের স্ত্রী শরিফা বেগম বাদী হয়ে মফিদুলকে আসামি করে শেরেবাংলানগর থানায় মামলা করেন।
শরিফা বেগম জানান, আমার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আসামিকে দ্রুত গ্রেফতার করলেই এর কারণ জানা যাবে। আমার বড় মেয়ের বয়স ৫ বছর আর ছোট মেয়ের বয়স ১৬ মাস। ওরা এতিম হয়ে গেল। আমি এখন এদের নিয়ে কিভাবে থাকব।
নিহতের বোন মিনারা বেগম জানান, ঘটনার পর পুরো বিষয়টি ম্যানেজের চেষ্টা করছে রাজাবাজারের স্থানীয় বড় ভাই পরিচয় দেওয়া চুন্নু ও শাহজাহান নামে দুই লোক। কয়েক দফায় কাউন্সিলরের অফিসে তাদের বুঝনো হয়েছে মীমাংসার জন্য। তাদের সঙ্গে মীমাংসার কথা বলে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে মফিদুলের গাড়ির চালক বলছেন, গাড়ির ব্রেকপ্যাড ক্ষয় হয়ে গিয়েছিল। স্যার সেটা চেক করতে গাড়িতে উঠে পা দিয়ে একসেলেটর চাপ দেন, এরপর গাড়ি চলতে শুরু করলে তিনি হয়তো থামাতে গিয়ে ব্রেকে পা না দিয়ে ভুলে একসেলেটরে আরও জোরে চাপ দেন। এতে গাড়ি মুহূর্তের মধ্যে গেট ভেঙে বাইরে গিয়ে ধাক্কা খায়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিএমপির শেরেবাংলা নগর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গেট ভেঙে ফজলুলকে চাপা দেয় আসামি মফিদুল। ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক। আমরা তাকে গ্রেফতারে কয়েক দফা অভিযান চালিয়েছি। খুব দ্রুতই আসামিকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে। তদন্ত শেষে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ভবন থেকে প্রাইভেটকার বের করার সময় হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন মালিক মফিদুল। এ সময় বাড়ির গেটের সামনে থাকা দারোয়ান ফজলুলকে সজোরে ধাক্কা মারেন তিনি। এতে নিরাপত্তাকর্মী ফজলুল মারা যান।
এদিকে প্রত্যক্ষদর্শীরাও এটিকে দুর্ঘটনা মানতে রাজি নন। তারা জানান, নিজের ড্রাইভারের সঙ্গে রাগারাগি করে গাড়ি চালাতে গিয়ে মফিদুল নিরাপত্তাকর্মীর ওপর গাড়ি উঠিয়ে দেন। এছাড়া দুর্ঘটনার পর নিরাপত্তাকর্মী ফজলুলকে হাসপাতালে নেওয়ার ক্ষেত্রে অবহেলার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান স্থানীয়রা।
বাড়িতে আহাজারি : নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানান, শুক্রবার সকালে নেত্রকোনা সদরের বাবনীকোনা গ্রামে ফজলুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার স্ত্রী শরীফা দেড় বছরের শিশুসন্তান লামিয়া আক্তারকে জড়িয়ে ধরে বিলাপ করছিলেন। ফজলুলের ভাই, বৃদ্ধ মা, স্বজনেরাও তখন কাঁদছেন। তার বৃদ্ধ মা রেজিয়া বেগম ছেলের শোকে স্তব্ধ হয়ে বারান্দায় বসে আছেন। এক সপ্তাহ আগে তিনি চোখের অস্ত্রোপচার করিয়েছেন। এজন্য তিনি ছেলের লাশটাও শেষ দেখা দেখতে পারলেন না! এলাকাবাসী তাদের বাড়িতে ভিড় করছেন। তারা শোকাহত পরিবারকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন। নিহতের স্ত্রী সন্তানসম্ভবা বলে জানিয়েছেন তার স্বজনরা।
ফজলুলের মা রেজিয়া বেগম যুগান্তরকে বলেন, ওই বাসায় কাজে যোগ দেওয়ার চতুর্থ দিন সকালে আমার ছেলেকে খুন করা হয়েছে।