পুলিশ কর্মকর্তার বাবা-মা খুন, ‘ক্লু’ নিয়ে বিপাকে তদন্ত দল
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৪, ১০:৫০ পিএম
ফাইল ছবি
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে শফিকুর রহমান-ফরিদা ইয়াসমিন দম্পতিকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র।
তবে কী কারণে এবং কারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে সে বিষয়টি এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি তদন্ত কর্মকর্তারা।
হত্যকাণ্ডের তিনদিন পেরিয়ে গেলেও রহস্য বের করতে পারছে না পুলিশ। যোগসূত্র মেলাতে পারছে না ছায়া তদন্তে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য ইউনিটের সদস্যরাও। পারিবারিক জমিসংক্রান্ত বিরোধ সামনে রেখে তদন্ত শুরু হলেও শনাক্ত হয়নি খুনিরা।
ঘটনাস্থল থেকে সংগ্রহ করা আলামত, প্রযুক্তিগত মাধ্যমে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ এবং পরিবার ও প্রতিবেশীদের জিজ্ঞাসাবাদেই ঘুরপাক খাচ্ছে তদন্ত।
সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভিকটিম শফিকুরের চাচাতো ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে জমিসংক্রান্ত বিরোধ ছাড়া অন্য কোনো শত্রুতার বিষয় প্রাথমিকভাবে সামনে আসেনি। এজন্য তদন্তের শুরুতে এই বিষয়টি বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে খুনিদের শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছিল। তবে এখন পর্যন্ত ওই পরিবারের তথ্য পর্যালোচনায় খুনিদের শনাক্ত করার মতো কোনো তথ্য মেলেনি।
এছাড়া ঘটনাস্থল কোনাপাড়ার ওই বাড়ির অন্য বাসিন্দাদের থেকেও সূত্র পাওয়া যায়নি। ফলে তদন্তের এ পর্যায়ে এসে যোগসূত্র মেলাতে আলামত ও অন্য তথ্য বার বার যাচাই করে দেখা হচ্ছে।
এছাড়াও ভিকটিমের সঙ্গে মসজিদ কমিটির দ্বন্দ্ব ছিল সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার সকালে ৯৯৯-এর মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে কোনাপাড়ার আড়াবাড়ি বটতলার বাড়িতে যায় পুলিশ। সেখানে তারা বাসার নিচতলায় শফিকুরের লাশ দেখতে পান।
তার গলা ও মাথায় অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল। এরপর দ্বিতীয়তলায় একটি কক্ষে মশারির ভেতর স্ত্রী ফরিদার লাশ পাওয়া যায়। তার মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারাল অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল। এ ঘটনায় তাদের ছেলে পুলিশের বিশেষ শাখার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল্লাহ আল মামুন ওরফে ইমন যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করেন। ওই মামলার এজাহারে তিনি বলেন, বুধবার রাত ১টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টার মধ্যে তাদের বাড়িতে দুষ্কৃতকারীরা ঢুকে তার মা-বাবাকে কুপিয়ে হত্যা করে। পূর্বশত্রুতার জেরে এ হত্যা করা হয়েছে।
নিহত শফিকুর রহমান জনতা ব্যাংকের গাড়িচালক হিসাবে ২ বছর আগে অবসরে যান। পরিবার নিয়ে তিনি ওই এলাকায় দীর্ঘদিন বসবাস করছিলেন। সেখানে তিনি চারতলা ওই বাড়িও নির্মাণ করেছেন। নিচতলার এক পাশ এবং তৃতীয় ও চতুর্থতলা ভাড়া দেওয়া, তিনি নিজে দ্বিতীয়তলায় থাকতেন। তার ছেলে ও তার স্ত্রী একই বাসায় থাকতেন। বুধবার রাতে ইমন দাদার বাড়ি ফেনী ও পরে তার স্ত্রী বাবার বাড়িতে বেড়াতে যান।
এদিকে জমি সংক্রান্ত বিরোধে মূল সন্দেহভাজনদের একজন মো. তানভীর। তিনি বলেন, শফিকুর রহমান (ভিকটিম) চাচার সঙ্গে আমাদের কোনো দ্বন্দ্ব নেই। ভাগিদার হিসেবে মামলার নোটিশে তার নাম এসেছে। আমাদের মূল ঝামেলা সিদ্দিকুর রহমানের (ভিকটিমের সৎভাই) ছেলে সিহাব উদ্দীনের সঙ্গে।
যাত্রাবাড়ী থানার ওসি আবুল হাসান বলেন, আমরা সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সঙ্গে এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে কাজ করছি। কাজ করতে গিয়ে যা যা সামনে আসছে সবই আমরা গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিচ্ছি। এখন পর্যন্ত চার থেকে পাঁচটি বিষয় সামনে রেখে তদন্ত কার্যক্রম চলছে। জমি সংক্রান্ত বিরোধ, পারিবাহিক কলহ, প্রতিবেশীদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব ও মসজিদ কমিটি নিয়ে নিয়ে দ্বন্দ্বের মতো বিষয়গুলো সামনে এসেছে।