দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদুল আজহা। আজ থেকে শুরু হয়েছে ঈদের ছুটি। পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে রাজধানী ছাড়ছেন ঘরমুখো মানুষ। ঈদযাত্রায় সড়ক ও রেলপথে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। কিন্তু ব্যতিক্রম চিত্র রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে। স্বাভাবিকের চেয়ে যাত্রীর উপস্থিতি কিছুটা বেশি হলেও তেমন ভিড় দেখা যায়নি লঞ্চঘাটে। সরকার নির্ধারিত ভাড়ায় ঠিক সময়ে ছেড়ে যাচ্ছে লঞ্চগুলো। শুক্রবার সকালে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিন দেখা যায়, টার্মিনালের পন্টুনে বাঁধা আছে চাঁদপুর-ইলিশাগামী সারি সারি লঞ্চ। লঞ্চগুলোতে যাত্রীদের বাড়তি কোনো চাপ নেই। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিকালের দিকে যাত্রীর চাপ বাড়তে পারে। যাত্রীর চাপ কম থাকায় লঞ্চ কর্মচারীদের তেমন কর্মব্যস্ততাও নেই।
ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে রাজধানীর প্রধান নদীবন্দর সদরঘাট টার্মিনালের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এ ছাড়া সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে যাত্রীদের সেবা দিতে চালু করা হয়েছে বিশেষ লঞ্চ। বিআইডব্লিউটিএ, জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা দায়িত্ব পালন করছেন।
ঈদ কেন্দ্র করে গত কয়েক দিনে ঘাটে যাত্রীর চাপ কিছুটা বাড়ায় বাড়ানো হয়েছে চলাচলকারী লঞ্চের সংখ্যা। লঞ্চমালিকরা বলছেন, যাত্রীর চাপ বাড়লে লঞ্চের সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে।
চাঁদপুরগামী লঞ্চ এমভি ঈগল-৯ এর এক কর্মী জানান, ডেকে বেশ ভালোসংখ্যক যাত্রী হলেও কিছু কেবিন ফাঁকা রয়েছে। লঞ্চ ছাড়ার আগে সেগুলোর টিকিট বিক্রি হতে পারে বলে প্রত্যাশা তার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ভোলাগামী লঞ্চের এক যাত্রী জানান, অনলাইনে অগ্রিম টিকিট কেটে রেখেছিলাম। এখানে এসে যেমন ভিড় প্রত্যাশা করেছিলাম, সেটা নেই। কোনো বাড়তি ভাড়াও লাগেনি।
ঢাকা-ভোলা রুটের এমভি গ্রিনলাইন-২ লঞ্চের এক কর্মী জানান, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে আমাদের যাত্রীর সংখ্যা একেবারে কমে গেছে। ঈদ উপলক্ষ্যে গত কয়েক দিনে যাত্রী বেশ বেড়েছে। আজ সকাল সাড়ে ৮টায় ভোলার উদ্দেশে এমভি গ্রিনলাইন-১ পূর্ণসংখ্যক যাত্রী নিয়ে ঘাট ছেড়েছে। আর গ্রিনলাইন-২ এর সব টিকিট বিক্রি শেষ। বেশিরভাগ যাত্রী অনলাইনে অগ্রিম টিকিট কেটে রেখেছেন।
এ ছাড়া ঘাটে এসেও অনেকে টিকিট কিনতে পেরেছেন। ভাড়ার বিষয়ে তিনি জানান, সরকার নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত কোনো ভাড়া নেওয়া হচ্ছে না।
এদিকে ঢাকা থেকে হাতিয়া রুটের লঞ্চ আসাদ এমভি ফারহান-১০ এর টিকিট মাস্টার আসাদ জানান, লঞ্চটির সব কেবিন অগ্রিম বুক করা। কেবিনের যাত্রীরা এলে নির্ধারিত সময় সন্ধ্যা ৬টার আগে যে কোনো সময় লঞ্চ ছেড়ে যাবে।
বরিশালগামী এক যাত্রী বলেন, লঞ্চে আগের মতো ভিড় নেই। যাত্রীও আছে কিন্তু অতিরিক্ত চাপ নেই। অন্য সময়ে কয়েক দিন আগেও টিকিট পাওয়া যেত না। আজ ঘাটে এসেই টিকিট নিতে পেরেছি। তাই আগের মতো ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে না। লঞ্চ ভাড়াও স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানান তিনি।
যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে টার্মিনালে অতিরিক্ত পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানান সদরঘাট নৌ থানার ওসি আবুল কালাম। তিনি বলেন, আমরা যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। স্থল ও নৌ উভয়পথেই পুলিশ, নৌপুলিশ ও আনসার সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছে। পাশাপাশি ঘাট এলাকায় র্যাবের একটি টিমও নিয়োজিত রয়েছে।
টার্মিনালে ফায়ার সার্ভিস কন্ট্রোলরুমে দায়িত্বরত ইন্সপেক্টর মাজহারুল ইসলাম বলেন, স্টাফদের প্রশিক্ষণ, লঞ্চে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে আমরা সচেষ্ট আছি। আমাদের টিম সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছে।
সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের ট্রাফিক কন্ট্রোল বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, নদীপথের বিভিন্ন রুটে গতকাল সকাল ৮টার পর থেকে আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত ১০৬টি লঞ্চঘাট ছেড়েছে এবং ৯৩টি লঞ্চ ঘাটে ভিড়েছে।
লঞ্চমালিক সমিতির পরিচালক গাজী সালাউদ্দিন বাবু বলেন, ঈদযাত্রা সামাল দিতে আমাদের পর্যাপ্ত লঞ্চ রয়েছে। যেসব রুটে যাত্রী বেশি থাকবে, সেসব রুটে প্রয়োজন অনুসারে লঞ্চের সংখ্যা বাড়ানো হবে।
ভাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ঈদের সময় আমরা সরকার নির্ধারিত ভাড়ায় লঞ্চ চালাই। অন্য সময় সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম ভাড়া নিয়ে থাকি। যার কারণে অনেকে মনে করে ঈদের সময় ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে।