ঢাকার জলাশয় রক্ষায় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে: বিভাগীয় কমিশনার
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৬ জুন ২০২৪, ১০:০১ পিএম
ঢাকার প্রাকৃতিক জলাশয়গুলো উদ্ধার ও রক্ষায় সরকারের তরফ থেকে ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো. সাবিরুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে ভূমিসেবা সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, রাজধানী ও আশপাশের এলাকাগুলোতে প্রাকৃতিক জলাশয়গুলো ইতিমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ৬১টি পুকুর উদ্ধার করা হয়েছে। এখনো হাজারখানেক পুকুর ও জলাশয় চিহ্নিত করা হয়েছে। শীঘ্রই রাজউক ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়কে নিয়ে ভরাট ও দখলকৃত প্রাকৃতিক জলাশয় এবং পুকুরগুলো উদ্ধার অভিযানে নামা হবে। এছাড়া খাল নদী দূষণের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
ভূমিসেবা সহজ ব্যবস্থাপনায় আনার লক্ষ্যে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের কার্যক্রম তুলে ধরে সাংবাদিক তিনি জানান, প্রত্যেক জমির মালিকের মোবাইল নম্বর সার্ভারের সঙ্গে সংযুক্ত করা হচ্ছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে প্রত্যেক ভূমির মালিক ঘরে বসেই খাজনা, ই-নামজারি, পর্চাসহ যাবতীয় ভূমি সেবা নিতে পারবেন। এজন্য প্রত্যেকটি ভূমি অফিসে গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী আবেদন করার জন্য আলাদা লোকবল নিযুক্ত করা হয়েছে। যেন কোন ভূমির মালিক দালালের হয়রানির শিকার না হয়, এ বিষয়ে প্রত্যেকটি ভূমি অফিসে ও এসি ল্যান্ড অফিসকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
লিখিত বক্তৃতায় বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ঢাকা বিভাগের ৮৯টি উপজেলার মধ্যে ৭৪টি উপজেলা ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত হয়েছে। প্রথমবারের মতো ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪৮টি খাস পুকুর সংস্কার করা হয়েছে।
তাছাড়া ঢাকা বিভাগে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে ১ম থেকে ৫ম পর্যায়ে ৩২,২১২টি পরিবারকে একক গৃহ নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে এই সব পরিবারকে তাদের জমির নামজারি এবং কবুলিয়ত হস্তান্তর করা হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ঢাকা বিভাগে ২৮ দিনে ই-নামজারির মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে।
এছাড়া শতভাগ হোল্ডিংকে অনলাইনে এন্টি করা হয়েছে। এর ফলে ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের হার ছিল ৭৮.৬০ শতাংশ। গত দুই বছরে প্রায় পঁচিশ একর নদীর দখলকৃত জমি উদ্ধার করা হয়েছে। ভূমি আইনের সংস্কার এবং প্রযুক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিদ্যমান আইন ও বিধিগুলির সংস্কার, নতুন আইন প্রণয়ন এবং সেবা সহজিকরণে নতুন-নতুন পরিপত্র জারি করা হয়েছে। সারাদেশে শহর ও ইউনিয়ন ভূমি অফিস নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ১ম পর্বে ১০৪৩টি আধুনিক ইউনিয়ন ভূমি অফিস ভবন নির্মাণ করা হয়েছে এবং ২য় পর্বে আরও ১৩৩৩টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস ভবনের নির্মাণ কার্যক্রম চলমান আছে।
ই-রেজিস্ট্রেশন ও ডিজিটাল ভূমিসেবা সিস্টেমের আন্ত:সংযোগ ঘটানোর জন্য ১৭টি উপজেলায় পাইলট ভিত্তিতে ই-রেজিস্ট্রেশন ও ডিজিটাল ভূমিসেবা সিস্টেমের আন্তঃসংযোগ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এই সিস্টেমের ফলে সাব-রেজিস্ট্রারগণ জমি রেজিস্ট্রেশনের পূর্বে ডিজিটাল রেকর্ডরুম সিস্টেম হতে জমির রেকর্ড অনলাইনে যাচাই এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) রেজিস্ট্রেশনের সাথে-সাথেই ডিজিটাল পদ্ধতিতে রেজিস্ট্রেশন দলিল ও বিক্রীত জমির তথ্য ই-মিউটেশন সিস্টেমের মধ্যে পেয়ে যাবেন।
স্মার্ট ভূমি নকশা- (ডিজিটাল মৌজা ম্যাপের মোবাইল অ্যাপ এবং ওয়েব ভার্সন) নামজারি করার সঙ্গে ম্যাপ ও খতিয়ান সংশোধন করা না হলে মূল সমস্যাটি থেকেই যায়। এ সমস্যা দূর করার লক্ষ্যে সারাদেশের প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার মৌজা ম্যাপকে ডিজিটালাইজ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বছরের দুটি সময় গ্রীষ্ম ও বর্ষা মৌসুমের স্যাটেলাইট ইমেজ ক্রয় করা হয়েছে। এই ম্যাপের উপরে স্যাটেলাইট ইমেজ বসিয়ে প্লটভিত্তিক জমির শ্রেণীর একাটি তথ্যভান্ডার তৈরি হচ্ছে। ফলে মৌজা ম্যাপ ই-নামজারি সিস্টেমের সঙ্গে সংযুক্ত হচ্ছে।
তিনি বলেন, কোনো ভূমি সেবা সম্পর্কে জানতে বা অভিযোগ জানাতে হট লাইনে (১৬১২২) কল করতে পারছেন গ্ৰাহকরা। এমনকি ই-নামজারির আবেদনও ওই নম্বরের মাধ্যমে গ্রহণ করা হচ্ছে। ভূমি উন্নয়ন কর ও অন্যান্য ফি অনলাইনে লেনদেন করা হচ্ছে এবং এসএমএস বা ই-মেইলের মাধ্যমে সেবাগ্রহিতা তা জানতে পারছেন। নামজারির ফি অনলাইন পেমেন্টের ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিং ও ব্যাংকের ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে পেমেন্ট করা যাচ্ছে। নামজারির আবেদন নামঞ্জুর হলে মোবাইলে বার্তা মাধ্যমে কারণ জানতে পারছেন।
তাছাড়া নাগরিকদের ভূমি তথ্যজ্ঞান প্রদানকারী ও ভূমিসেবা সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে ভূমি মন্ত্রণালয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন ভূমি পিডিয়া চালু করেছে। ভূমিসেবা প্রত্যাশীদের মধ্যে জ্ঞানের ব্যবধান কমিয়ে একটি শক্তিশালী 'নলেজ নেটওয়ার্ক স্থাপন করাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভূমি পিডিয়ার মূল উদ্দেশ্য। স্মার্ট নাগরিক ভূমিসেবা কেন্দ্রে নাগরিকরা যাতে ভূমি অফিসে না গিয়েই একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সার্ভিস চার্জের বিনিময়ে বেসরকারি পেশাদার এজেন্সির প্রশিক্ষিত সেবা দানকারীর উন্নত ভূমি সেবা সহজ করতে ভূমি মন্ত্রণালয় কাজ করছে বলে জানান তিনি।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. মমিনুল রহমান, ঢাকা জেলা প্রশাসনের এডিসি (রাজস্ব) শিবলী সাদিকসহ বিভাগীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা।