Logo
Logo
×

রাজধানী

মালামাল রক্ষার্থে রাত জেগে পানি সেচ

পানিবন্দি ডিএনডি বাঁধের অভ্যন্তরের ২০ লক্ষাধিক বাসিন্দা

Icon

খোরশেদ আলম শিকদার, যাত্রাবাড়ী (ঢাকা)

প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৪, ১২:২৪ পিএম

পানিবন্দি ডিএনডি বাঁধের অভ্যন্তরের ২০ লক্ষাধিক বাসিন্দা

পানিবন্দি ডিএনডি বাঁধের অভ্যন্তরের ২০ লক্ষাধিক বাসিন্দা, মসজিদসহ ঘরবাড়িতে পানি

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে লাগাতার বর্ষণ ও ড্রেনেজের পয়ঃবর্জ্য মিশ্রিত দুর্গন্ধময় পানিতে ডুবে আছে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) বাঁধের অভ্যন্তরের ২০ লক্ষাধিক বাসিন্দা। বাসাবাড়ির ফ্রিজ, ওয়্যারড্রপ, শোকেজসহ মূল্যবান মালামাল রক্ষার্থে রাতভর পানি সেচ বাসিন্দাদের।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫২, ৫৩ ও ৫৮ থেকে ৭০ নম্বরসহ ১৮টি ওয়ার্ড এবং নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লার কুতুবপুর ইউনিয়ন এলাকার মুন্সিবাগ প্রধান সড়ক, অলি-গলি, নিচতলার বাসাবাড়ি, রান্নার চুলা, মসজিদ, মাদ্রাসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট, শিল্প-কারখানাসহ বিভিন্ন স্থাপনা পানিতে ডুবে গেছে। 

অনেক স্থানে ভেঙে পড়েছে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা। বন্ধ হয়ে গেছে নিচতলায় বসবাসরত বাসাবাড়ির রান্না-বান্নার কাজ। অনেকে পয়ঃবর্জ্য পানির মধ্যে খাট উঁচু করে, অনেকে আবার বালতি ও মোটর দিয়ে সেচ দিয়ে বসবাস করছেন। এতে দুর্ভোগের পাশাপাশি রোগ জীবাণুতে আক্রান্তের ঝুঁকিও বাড়ছে বাসিন্দাদের। ভুক্তভোগীদের আকুতি কবে দূর হবে ডিএনডিবাসীর দুর্ভোগ।
 
ডিএনডির অভ্যন্তরের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫২ নম্বর ওয়ার্ডের লালমিয়া সরকার রোড, মুরাদপুর মাদ্রাসা রোড, মুরাদপুর মেডিকেল রোড, মুরাদপুর হাইস্কুল রোড, মসজিদে আমানসহ ওয়ার্ডের প্রধান সড়ক ও অলিগলি বাসাবাড়ি, দোকানপাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিচতলার সবকিছুই পানিতে ডুবে আছে। ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাগানবাড়ি এলাকার অলিগলি, বাসাবাড়ি, কিবরিয়ার বাড়ির মোরসহ ওয়ার্ডের নিচতলা দোকানপাট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ৫৮ নম্বর ওয়ার্ডের নামা শ্যামপুর, মাদবরবাজার, শাহী মসজিদ রোড, সালাউদ্দিন স্কুল রোড, সবুজবাগ, ৫৯ নম্বর ওয়ার্ডের মেরাজনগর এ ব্লক, মেরাজনগর জামে মসজিদ, ঢাকা ম্যাচ, মেরাজনগর, ডি ব্লক ১-২-৩ নম্বর গলি, সি ব্লক শিশু কানন গলি, পূর্ব কদমতলী, মোহাম্মদবাগ নামাশ্যামপুর সড়কসহ পুরো ওয়ার্ডের নিচতলার সড়ক, দোকানপাট, কারখানা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিতে ডুবে আছে।

৬০ নম্বর ওয়ার্ডের জিয়াস্মরণি সড়ক, পলাশপুর বাইতুর রিয়াজ জামে মসজিদ রোড, ৫নং মাদ্রাসা রোড, গ্যাসরোড, জনতাবাগ, স্মৃতিধারা, রসুলবাগ, মেরাজনগর, পলাশপুর বাইতুর রিয়াজ জামে মসজিদ,স্মৃতিধারা আজিজিয়া জামে মসজিদ, রইসনগরসহ ওয়ার্ডের পুরো এলাকা। ৬১ নম্বর ওয়ার্ডের রসুলপুর, পাটেরবাগ, নোয়াখালী পট্রি, দক্ষিণ দনিয়া, বর্ণমালা স্কুল রোড, এ,কে স্কুল, শাহী মসজিদ,দনিয়া বড় মসজিদ,বাইতুস সালাম জামে মসজিদ, নিচতলার দোকানপাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। 

৬২ নম্বর ওয়ার্ডের  শেখদি স্কুল রোড,নয়ানগর, কুতুবখালী, ছনটেক, গোবিন্দপুর, বাগানবাড়ি, শনিরআখড়া আন্ডার পাস, মৃধাবাড়ি সড়ক, শেখদী আব্দুল্যাহ মোল্লা স্কুল, শেখদি জামে মসজিদ। ৬৩ নম্বর ওয়ার্ডের দরবার শরীফ রোড, মাতুয়াইল বহুমুখী ও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সড়ক ও আশপাশের বাসাবাড়ি। ৬৪ নম্বর ওয়ার্ডের মাতুয়াইল মেন্দিবাড়ি শহীদ অলি রোড,বাঁশেরপুল, মোমেনবাগ, দরবার শরীফ রোড, সুলতান মেম্বার বাড়ির রোড, আশরাফুল মাদ্রাসা রোডসহ নিচতলার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, স্কুল,মাদ্রাসাসহ নিচতলা। 

৬৫ নম্বর ওয়ার্ডের মাতুয়াইল কবরস্থান রোড, ফার্মের মোর, মুসলিমনগর, মোগলনগর, পশ্চিম মোমেনবাগ, পাড়াডগার, ইনুপট্রি, হাসেম রোড, রায়েরবাগ, খানবাড়ি, মোগলনগর, কেরানিপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার অলি-গলি, নিচতলার বাসাবাড়ি, দোকানপাট, মসজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিল্প-কারখানা এবং বিভিন্ন স্থাপনা পানিতে ডুবে গেছে। নষ্ট হয়ে গেছে অনেক মালামাল। এতে মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। 

বৃহত্তর ডেমরা থানা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মো. এনামুল ইসলাম এনাম যুগান্তরকে বলেন, শুকনা সময় ড্রেনেজগুলো সঠিকভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না করা ও কাউন্সিলরের গাফিলতির কারণে বাসিন্দাদের পয়ঃনিষ্কাশনের পানিতে ওয়ার্ডের অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। সাধারণ ও ভারি বর্ষণ হলে দুর্ভোগ চরম আকারে পৌঁছে। খাল খনন ও ড্রেনেজ পরিষ্কার করার জন্য মেয়র মহোদয় থেকে যে বরাদ্ধ দেয়া হয় তার সঠিক কাজ না করে লোক দেখানো কাজ করা হয়। যার ফলে ৬৫ নম্বর ওয়ার্ডের রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতায় সৃষ্টি হয়। আর টানা বৃষ্টি হলে চরম ভোগান্তিতে পড়েন ওয়ার্ডের বাসিন্দারা।

৬৩ নম্বর ওয়ার্ডের একাধিক বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, ‘ড্রেনেজগুলো ময়লায় ভরে গেছে। পরিষ্কার না করার কারণে বাসিন্দাদের পয়ঃনিষ্কাশনের পানিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। বৃষ্টি হলে দুর্ভোগ বেড়ে যায়।’

৬০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সাবেক মেম্বার হাছান মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর যুগান্তরকে বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের মাছের আড়ত থেকে শুরু করে ৬২, ৬৩, ৫২, ৫৩, ৫৮ ও ৫৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবহৃত পানি জিয়া স্মরণি খাল দিয়ে ৫৯ নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদবাগ খাল হয়ে নারায়ণগঞ্জের শিমরাইল পাম্পে যায়। খালগুলোর ওপর যে ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে, তা পানি নিষ্কাশনের তুলনায় সরু করা হয়েছে। সে কারণে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি নিষ্কাশন হতে না পেরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।’ তাছাড়া ডিএনসিসি মেয়র খাল খননের জন্য যে বরাদ্দ দেয় তা ঘষামাজা করে খনন করা হয়। সঠিকভাবে খাল  ও ড্রেনেজগুলো খনন কাজ করা হলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতো না।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আকাশ কুমার ভৌমিক যুগান্তরকে বলেন, ‘ডিএনডি অধ্যুষিত এলাকাগুলো নিম্নাঞ্চলে অবস্থিত। এসব ওয়ার্ডগুলো ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর ১৮টি ওয়ার্ডের রাস্তা, ড্রেনেজ, সড়কবাতি স্থাপনসহ পর্যাপ্ত উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ঢাকা দক্ষিণ কর্পোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডকে জলাবদ্ধতা নিরসন, রাস্তাঘাট উন্নয়ন করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ওয়ার্ডের উন্নয়ন কাজে বরাদ্দ দিচ্ছেন।’ আমরা কাউন্সিলররা মেয়রের নেতৃত্বাধীন এলাকাবাসীকে যথাযথ সেবা দিতে বদ্ধপরিকর।

৬২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজী মোস্তাক আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, ‘শনিরআখড়া আন্ডারপাসের নিচের খাল দিয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় ৬২ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।’

৬৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাসুদুর রহমান মোল্লা বাবুল যুগান্তরকে বলেন, ‘৬৪ নম্বর ওয়ার্ডের পানি ৬৫ নম্বর ওয়ার্ডের ড্রেনেজ দিয়ে নিষ্কাশন হয়। ৬৫ নম্বর ওয়ার্ডের ড্রেনেজগুলো সরু ও পরিষ্কার না থাকায় আমাদের ওয়ার্ড এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে রাস্তা-বাড়িঘর তলিয়ে যায়। এতে বাসিন্দাদের দুর্ভোগ বেড়ে যায়।’

ঢাকা-৫ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ মশিউর রহমান মোল্লা সজল যুগান্তরকে বলেন, ‘সামান্য বৃষ্টি হলেই ডিএনডি অধ্যুষিত বেশ কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এর মূল কারণ মেয়র সাহেব ওয়ার্ডের খাল ও নালা নর্দমা পরিষ্কারের জন্য যে বরাদ্ধ দেন তার যথাযথ কাজ না করা। সেজন্য আমার পরামর্শ থাকবে অর্থ বরাদ্দের পর সঠিকভাবে বরাদ্ধকৃত কাজ হচ্ছেন কিনা তিনি যেন সঠিকভাবে তদারকির ব্যবস্থা নেন। তাছাড়া আমাদের নিজেদের সচেতন হতে হবে। যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা না ফেলে নির্ধারিত স্থানে ফেলতে হবে। এতে করে জলাবদ্ধতা ও ভোগান্তি কমে আসবে।’

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম