যানজটে অর্থনৈতিক গুরুত্ব হারাচ্ছে পুরান ঢাকা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০২ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৪৭ পিএম
যানজটের কারণে পুরান ঢাকার অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক গুরুত্ব প্রতিনিয়ত হ্রাস পাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার কার্যকর ব্যবহার, গাড়ি পার্কিং সুবিধা নিশ্চিত, ফুটপাত অবৈধ দখলদারমুক্ত করা, একমুখী রাস্তা ও আধুনিক গণপরিবহণব্যবস্থা চালু এবং নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে পণ্য পরিবহণ নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। আর এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছা একান্ত অপরিহার্য।
মঙ্গলবার রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘পুরান ঢাকার ব্যবসা-বাণিজ্যে যানজটের প্রভাব ও উত্তরণের উপায় চিহ্নিতকরণ’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, জিডিপিতে পুরান ঢাকার অবদান প্রায় ২০ শতাংশ হলেও অপর্যাপ্ত অবকাঠমো, যানজট ও অপ্রতুল পরিষেবার কারণে এ এলাকার ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনায় নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। সড়কের খোঁড়াখুঁড়ি, অবৈধ ফুটপাত দখল, অপরিকল্পিত গাড়ি পার্কিং, অপ্রতুল সড়ক অবকাঠামো ও অকার্যকর প্রাফিক ব্যবস্থাপনার কারণে পুরান ঢাকায় সৃষ্ট অসহনীয় যানজট পরিস্থিতি ব্যবসা পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধি করছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে স্মার্ট ট্রাফিক সিস্টেম চালু, নদীপথের ব্যবহার বাড়ানো এবং পুরান ঢাকার সরু ও ব্যস্ত সড়কে একমুখী ট্রাফিক ব্যবস্থা চালুকরণের প্রস্তাব দেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ঢাকার যানজটের কারণে দেশের সামগ্রিক জিডিপি প্রায় ২.৯ শতাংশ হ্রাস পায় এবং প্রতিদিন ট্রাফিক জ্যামের কারণে নষ্ট হয়ে যাওয়া কর্মঘণ্টার আর্থিক মূল্য প্রায় ১৪০ কোটি টাকা।
মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ঢাকায় অপরিকল্পিত নগরায়ণের জন্য আমরা নিজেরাই দায়ী, আমরাই এটা সৃষ্টি করেছি। রাজধানীতে যানজট নিরসন ও ট্রাফিক আইন অমান্যকারীদের শনাক্তে ৬৪টি ইন্টারসেকশনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (আইওটি) প্রযুক্তি স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে সায়েদাবাদ বাসটার্মিনালকে আধুনিক সুবিধায় রূপান্তর করা হয়েছে। এর উদ্বোধনের পর আর কেউ টার্মিনালের বাইরে বাস কাউন্টার স্থাপন করতে পারবে না।
হকার প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ঢাকার ফুটপাত ও রাস্তা থেকে হকারদের উচ্ছেদ সহজ নয়। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন আটটি স্থানকে হলুদ ও সবুজ জোন হিসাবে চিহ্নিত করেছে। যেখানে হকাররা তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য চালাতে পারবেন। তবে সিটি করপোরেশনের চিহ্নিত লাল জোনে কেউ দোকান বসাতে পারবেন না।
তাপস বলেন, পুরান ঢাকায় তালিকাভুক্ত ১৯২৪টি রাসায়নিক দ্রব্যের গুদাম ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ২০১৭ সালের পর থেকে সেসব প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া ও নবায়ন বন্ধ রেখেছি। তারপরও বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা চলছে। ঈদের পরে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করে সব বন্ধ করে দেব। তিনি আরও বলেন, যেসব ভবনের নিচে গুদাম রয়েছে, সেগুলো অত্যন্ত বিপজ্জনক। এসব ভবন সিলগালা করে বিদ্যুৎ-পানি বন্ধ করে দেব।
সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মুনিবুর রহমান, ঢাকা পরিবহণ সমন্বয় কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার প্রমুখ। নির্ধারিত আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সিইও মিজানুর রহমান, যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ড. এসএম সালেহ উদ্দিন, ঢাক ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) আব্দুল বাকী মিয়া প্রমুখ।