উপবৃত্তির প্রলোভন ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে টাকা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ৩১ মার্চ ২০২৪, ০৯:২৮ পিএম
উপবৃত্তির টাকা দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন কৌশলে টাকা হাতিয়ে নেওয়া এক চক্রের সন্ধান পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। শনিবার রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা থেকে চক্রের সদস্য সাজ্জাত হাওলাদারকে (২৬) গ্রেফতার করা হয়েছে। তার কাছ থেকে ৩টি মোবাইল ফোন এবং ৩টি সিম উদ্ধার করা হয়েছে।
রোববার দুপুরে রাজধানীর মিন্টু রোডে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, ফরিদপুরের বাসিন্দা সাজ্জাত ঢাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করে। স্বল্প পরিশ্রমে অধিক টাকা আয়ের লোভে এলাকার সমবয়সি বন্ধুরা মিলে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের টাকা আত্মসাৎ করার কৌশল রপ্ত করে। পরে তারা সংঘবদ্ধ চক্র গড়ে ব্ল্যাকমেইলিং বা বৃত্তির টাকা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে অনেকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
তিনি বলেন, এক আইনজীবীর মেয়ে গত বছর এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। গত ২২ জানুয়ারি ওই আইনজীবীর ফোনে একটি মেসেজ আসে। সেখানে জানানো হয়, ভালো রেজাল্টের জন্য তার মেয়ে প্রতি মাসে ৫ হাজার ২০০ টাকা করে উপবৃত্তি পাবে।
এজন্য উল্লেখিত ফোন নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়। সে অনুযায়ী ২৩ জানুয়ারি ওই নম্বরে ফোন করলে রাজধানীর বকশিবাজার শিক্ষা বোর্ডের অফিস বলে জানানো হয়। এরপর সেখান থেকে জানানো হয়, তার মেয়ে প্রতি মাসে ৫ হাজার ২০০ টাকা করে ৭ মাস এবং ১ বছর পর থেকে তিন বছর পর্যন্ত মাসিক ১২ হাজার ৫০০ টাকা করে উপবৃত্তি পাবে। এ সময় ভুক্তভোগীর ব্যাংকের নাম, হিসাব নম্বর ও শাখার নাম জানতে চায়। যে অ্যাকাউন্টে মেয়ের স্কলারশিপের টাকা জমা হবে সেজন্য একটি বিকাশ নম্বর ও মেয়ের মোবাইল নম্বর এবং এনআইডি নম্বর জানতে চায়। ভুক্তভোগী প্রয়োজনীয় তথ্য দিলে তাকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ফোন করে আরও কিছু তথ্য চাইবে বলে জানানো হয়।
হারুন অর রশীদ বলেন, পরে ভুক্তভোগীর বিকাশ নম্বরে বিভিন্ন মেসেজ আসে এবং একাধিক কোড ভুক্তভোগী সরবরাহও করেন। এক পর্যায়ে ফোন করে মোবাইলে ক্যালকুলেটর দেখতে বলে। নির্দিষ্ট একটি নম্বরের সঙ্গে অপর একটি নম্বর এবং মামলার বাদীর বিকাশের পিন যোগ করে যোগফল জানতে চাইলে ভুক্তভোগী যোগফল জানান।
তখন তাকে ১২ ঘণ্টা তার বিকাশ লেনদেন বন্ধ রাখতে বলা হয় এবং অ্যাকাউন্ট চেক করতেও নিষেধ করা হয়। সন্দেহ হলে ১০-১৫ মিনিট পর ভুক্তভোগী বিকাশ অ্যাকাউন্ট চেক করে দেখেন তার এক লাখ টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে। এভাবে পরে আরও এক লাখ এবং ৮০ হাজার টাকাসহ মোট ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে শাহবাগ থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগী। তদন্তে নেমে সাজ্জাতকে গ্রেফতার করে ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম দক্ষিণ বিভাগ।
তিনি বলেন, চক্রটি বিভিন্ন ব্যক্তিকে টার্গেট করে মোবাইল ব্যাংকিং অফিসের লোক আবার কখনো শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে ফোন করে প্রতারণা করে আসছিল। টার্গেট করা ব্যক্তির বিশ্বাস অর্জন করে মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের তথ্য হাতিয়ে নিয়ে টাকা হাতিয়ে নিত।
এ সময় মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের তথ্য, পাসওয়ার্ড অপরিচিত কাউকে না দিতে অনুরোধ করেন ডিএমপির ডিবি প্রধান। প্রতারিত হলে পুলিশের সহযোগিতা নেওয়ারও অনুরোধ জানান তিনি।