বাংলাদেশে বসবাসরত উর্দুভাষীদের উচ্ছেদ বন্ধ করে পুনর্বাসনসহ ৬ দফা দাবি জানিয়েছেন এসপিজিআরসি বাংলাদেশ।
শনিবার জাতীয় রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের আব্দুস সালাম হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান সংগঠনের নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এসপিজিআরসি বাংলাদেশের সভাপতি এম শওকত আলী, সহ-সভাপতি এসকে গোলাম জিলানী, সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর-রশিদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ইকবাল হোসেন, আইনবিষয়ক উপদেষ্টা মো. আইয়ুব, চট্টগ্রাম বিভাগের জোনাল সেক্রেটারি সোহেল আক্তার খান, খুলনা জোনের সেক্রেটারি হুমায়ুন কবীর প্রমুখ।
শওকত আলী বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর হতে দেশের ১৩টি জেলায় ৭০টি ক্যাম্পে উর্দুভাষী জনগোষ্ঠী সব রকমের মৌলিক অধিকার হতে বঞ্চিত হয়ে অসহায় ও মানবেতর জীবনযাপন করে আসছে।
সংগঠনের সভাপতি বলেন, তাদের সমস্যা সমাধানে আশ্বস্ত করা ছাড়া সহযোগিতা করেনি কোনো সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে আমাদের সংগঠন এস.পি.জি.আর.সি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রথমবার সাক্ষাৎ করে পুনর্বাসনের দাবি জানায়।
তিনি বলেন, ২০১৪ সালে প্রধামন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিতীয় বার সাক্ষাৎ করলে তিনি আমাদেরকে দৃঢ়ভাবে আশ্বস্ত করেন যে তিনি এই দেশেই আমাদেরকে পুনর্বাসন করে দেবেন। ২০২৩ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি কালশী ফ্লাইওভার উদ্বোধনের সময় প্রকাশ্যে জনসম্মুখে ঘোষণা করেন, উর্দুভাষী জনগোষ্ঠীকে পাকিস্তান সরকার ফিরিয়ে নেয়নি, আমি তাদেরকে এদেশে সম্মানজনক পুনর্বাসন করে দেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদেরকে আদেশ দিয়েছি।
সংগঠনের সভাপতি বলেন, আমরা উর্দুভাষী জনগোষ্ঠী প্রধানমন্ত্রীর ওপর শতভাগ আস্থাশীল। পুনরায় সরকার গঠন করলে তিনি তার বক্তব্যের প্রতিফলন ঘটাবেন, ইনশআল্লাহ। এ সময় তিনি ৬ দফা দাবি জানান।
দাবিগুলো হলো- বাংলাদেশে বসবাসকারী উর্দুভাষীদের পুনর্বাসনের ঘোষণা করা। সারা দেশে বসবাসরত উর্দুভাষীদের যতদিন পর্যন্ত স্থায়ীভাবে পুনর্বাসন না হয়, ততদিন পর্যন্ত তাদেরকে কোনো রকম হয়রানি বা উচ্ছেদ করা যাবে না বলে একটি সরকারি আদেশ জারি করা।
যতদিন পর্যন্ত উর্দুভাষী জনগোষ্ঠিদের পুনর্বাসন হচ্ছে না, ততদিন পর্যন্ত প্রণীত বিধি অনুযায়ী ক্যাম্পের সব সুযোগ- সুবিধাসহ বিদ্যুৎ, পানি ও নিরাপত্তা বহাল রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আদেশ দেওয়া।
খালিশপুর (খুলনা), ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ যে সব জেলায় দেশ বিভক্তির পর ভারত থেকে যারা হিজরত করে এ দেশে এসেছিলেন তাদের জন্য হাউজিং নির্মাণ করে প্লট বরাদ্দ করা হয়েছিল, যা বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর মোহাজির পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসাবে সরকারের আওতাভুক্ত হয়ে রয়েছে। জানা গেছে, বরাদ্দকৃত প্লটে এখনো বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তি ওয়ারিশ হিসাবে তাদের উত্তরসূরীরা (সন্তান, ভাই-বোন ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা) বসবাস করছেন। সেই হাউজিংয়ে বসবাসরত উর্দুভাষীদেরকে বিনামূল্যে অথবা স্বল্পমূল্যে বরাদ্দ দিয়ে পুনর্বাসন কার্যক্রমের আওতায় আনা।
শিক্ষিত বেকার যুবকদের সরকারি উদ্যোগে চাকরি এবং কারিগরি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যুবকদের শিক্ষাবৃত্তির আওতায় আনা। তাদেরকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদানসহ বিদেশ পাঠানোর বিষয়টি মানবিক বিবেচনায় রাখা। সারা বাংলাদেশ হতে কমপক্ষে ১০০০ জন শিক্ষিত বেকার যুবকদের চাকরির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে বাংলাদেশের যে কোনো জেলায় বসবাসরত ক্যাম্পবাসী ১০০০ পরিবারকে প্রথম ধাপে পুনর্বাসনের প্রক্রিয়ায় আনা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে উর্দুভাষীদের নানাবিধ সমস্যা অবহিতকরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ।