‘ভাগ্য আমার সব শেষ করে দিল’
মোহাম্মদপুর (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৫:০৫ পিএম
‘আমার সবশেষে একটি ভিটেবাড়ি ছিল। সেটিও বিক্রি করে আমার ছেলের দোকানের জন্য টাকা দিয়েছি। আমার দেশ গাঁওয়ে যা সম্বল ছিল সব বিক্রি করে ঢাকা চলে এসেছি। আমার জায়গা-জমি বা ব্যাংক ব্যালেন্স কোনো কিছু নাই। ঢাকাতে এসে ভাড়া বাসায় উঠেছি। ভাবছি ছেলে ব্যবসা করার পর আমার জায়গা-জমি, ভিটেবাড়ি আবারও হবে।’
‘কিন্তু ভাগ্য আমার সব শেষ করে দিল। আমি সব বিক্রি করে ছেলেকে একটি দোকান করে দিয়েছিলাম এই মার্কেটে। ভেবেছিলাম আবার নতুন করে পথচলা শুরু হবে। কিন্তু আগুন আমার স্বপ্নকে বাঁচতে দিল না।’
এভাবেই আহাজারি করে কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর কৃষি মার্কেটের ব্যবসায়ী বাবু বৌদ্ধের মা সন্ধ্যা বৌদ্ধ। বুধবার দিবাগত রাত পৌনে ৪টার দিকে আগুনে অন্যান্য অনেক দোকানের মতো বাবু বৌদ্ধের দুটি দোকান পুড়ে গেছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
সন্ধ্যা বৌদ্ধ বিলাপ করে বলেন, মাওয়া ঘাটের পর পদ্মার ওপারে আমাদের বাড়ি।ভিটেবাড়িসহ সব কিছু বিক্রি করে মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটে প্রায় আট থেকে দশ লাখ টাকা খরচ করে কাঁচামালের দোকান দিয়েছি। সব পুড়ে ছাঁই হয়ে যাওয়ায় এখন আর আমার মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই কোথাও।’
আরও পড়ুন: কৃষি মার্কেটে আগুনে পুড়ল শত শত ব্যবসায়ীর কপাল
ছেলে বাবু বৌদ্ধ বলেন, ভোর চারটার দিকে মার্কেট থেকে আমার মোবাইলে ফোন করে জানানো হয় মার্কেটে আগুন লেগেছে। বাসা থেকে দৌড়ে এসে দেখি মার্কেটে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। আগুনের তাপের কারণে মার্কেটের ভেতরে প্রবেশ করতে পারিনি। দোকানের কোনো মালামাল কিছুই বাঁচাতে পারিনি। সব পুড়ে শেষ হয়ে গেছে। এখন কী নিয়ে বাঁচব? ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা খরচ করে এই দোকান করেছি। এখানে আমার দুইটা দোকান ছিল। দুইটা দোকানেই আলু, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, মরিচ গুঁড়া ও হলুদ গুঁড়া পাইকারি এবং খুচরা বিক্রি করতাম। আগুনে কোনো কিছুই সরাতে পারি নাই। সব পুড়ে শেষ হয়ে গেছে।
উল্লেখ্য, ব্যবসায়ীরা জানান- মার্কেটটিতে পাঁচশর বেশি দোকান আছে। সেখানে ব্যবসা করেন কয়েক হাজার ব্যবসায়ী। কাঁচাবাজার ছাড়াও মার্কেটটিতে রয়েছে জুয়েলারি, প্লাস্টিক, কসমেটিকস ও জুতার দোকান। মার্কেটের ভেতরে থাকা এসির বিস্ফোরণে আগুন আরও দ্রুত ছড়ায় বলেও জানিয়েছেন কেউ কেউ।
এদিকে ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, মার্কেটে শাড়ি-কাপড়সহ বিভিন্ন দাহ্য পণ্যের দোকান থাকায় মুহূর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। টিনশেড মার্কেট হওয়ায় ভেতরে ধোয়া আবদ্ধ হয়ে আছে। তাই সহসাই ভেতরে প্রবেশের সুযোগ কম। এ কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া ফায়ার সার্ভিসের জন্য বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছিল।
সংস্থাটি আরও জানায়, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট বা কয়েলের আগুন থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। এখন পর্যন্ত কারও হতাহত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি।