অবৈধ জমি উদ্ধারে সফল ঢাকার ডিসি বিদায় নিলেন
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৩, ১০:৩২ পিএম
অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে যোগ দিয়েছেন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও অবৈধ দখলে থাকা সরকারি জমি উদ্ধারে আপসহীন ভূমিকা রাখা ঢাকা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান। বুধবার তার নতুন কর্মস্থলে যোগদান করেছেন তিনি।
গত ৮ মাসে মমিনুর রহমান ঢাকা মহানগরীসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে ভূমিদস্যু এবং অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন এবং সফলতার সঙ্গে একের পর এক মূল্যবান সরকারি জমি অবৈধ দখলমুক্ত করেন।
জেলা প্রশাসক হিসেবে ঢাকায় যোগদান করে জটিল ও বৃহৎ রাজস্ব প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার ও উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন মমিনুর। ঢাকা জেলার সর্বস্তরের সেবা প্রত্যাশীদের চাহিদা পূরণে কার্যকর ভূমিকা পালন করেছেন তিনি।
২০২২ সালের ৮ ডিসেম্বর ১৮৫তম জেলা প্রশাসক হিসেবে ঢাকা জেলায় যোগদান করেন মমিনুর। ইতোপূর্বে তিনি চট্টগ্রামে জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
কর্মকালে ঢাকা মহানগরে ঘটে যাওয়া সিদ্দিকবাজার বিস্ফোরণ, বঙ্গবাজার অগ্নিকাণ্ড ও নিউমার্কেট অগ্নিকাণ্ডে সময়োপযোগী ভূমিকা পালন করে সার্বিক ব্যবস্থাপনাসহ ক্ষতিগ্রস্তদের বিপুল আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করেন মমিনুর রহমান।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ অধীনস্থ অন্যান্য অফিস আধুনিকায়ন, জেলা প্রশাসনের শূন্য পদে নিয়োগ প্রদান, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন, তথ্য প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো উন্নয়ন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন তিনি।
মমিনুর রহমান ঢাকা জেলায় যোগদানের পরপরই অন্যান্য সকল বিষয়ের মতো ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থাপনা খাতেও ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। সরকারি সম্পত্তির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, অবৈধ দখলে থাকা খাস জমি এবং অর্পিত সম্পত্তি উদ্ধার এবং সাধারণ মানুষের কল্যাণে উদ্ধারকৃত এ সব সম্পত্তির ব্যবহার নিশ্চিতকরণে তিনি অত্যন্ত কঠোর ও আপসহীন ভূমিকা পালন করেছেন।
গত ৮ মাসে ঢাকা জেলায় ৫৭.৫৯ একর খাসজমি উদ্ধার করা হয়েছে যার বাজারমূল্য প্রায় ২,০০০ কোটি টাকা। ঢাকা শহরের মিরপুর, পুরানা পল্টন, নবাবপুর রোড, তোপখানা রোড, ডুমনীসহ বিভিন্ন এলাকায় সরকারের মূল্যবান সম্পত্তি হতে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হয়েছে।
গত ৮ মাসে প্রায় ৪.৫২ একর অবৈধ দখলে থাকা স্থাপনাসহ অর্পিত সম্পত্তি দখল মুক্ত করেন, যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা। উদ্ধারকৃত এ সব সম্পত্তি জনকল্যাণে ব্যবহার নিশ্চিতকরণের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন মমিনুর রহমান।
মমিনুর রহমানের দৃঢ় নেতৃত্বে নবাবগঞ্জ উপজেলার কলাকোপা ইউনিয়নের নয়নাভিরাম জমিদার বাড়ি ব্রজনিকেতন অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়েছে যা সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা হয়েছে।
ইতোমধ্যে ঢাকা জেলার সাভার, কেরানীগঞ্জ, নবাবগঞ্জ, দোহার উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে ভূমিহীন গৃহহীন মুক্ত উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। গত ৮ মাসে ৫৭০টি ঘর নির্মাণ করে গৃহহীনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
নাগরিক পর্যায়ে ভূমি সেবা প্রদানে ঢাকা জেলা সারা দেশের মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করেছে। প্রতি মাসে প্রায় ৩০,০০০ নামজারি মামলা স্বল্পতম সময়ে নিষ্পত্তি করা হচ্ছে।
একটি আধুনিক, সময়োপযোগী ও ডিজিটালাইজড অর্পিত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণের নিমিত্ত জেলা প্রশাসক, ঢাকার নির্দেশনায় অর্পিত সম্পত্তি শাখার জন্য অনলাইন ভিত্তিক অ্যাপস ডেভেলপ করা হয়েছে, যার মাধ্যমে অর্পিত সম্পত্তির লিজ নবায়ন ও লিজমানি আদায়, অর্পিত সম্পত্তির ইজারা প্রদান, অর্পিত সম্পত্তি চিহ্নিতকরণ ইত্যাদি কাজ অত্যন্ত সহজে স্বল্পসময়ে নির্ভুলভাবে করা হচ্ছে।
ঢাকা জেলায় এনজিওগুলোর সঙ্গে জেলা প্রশাসন সমন্বয় সাধনের জন্য ও এনজিও সংক্রান্ত কার্যক্রমের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য এনজিও পোর্টাল চালু করা হয়েছে। এনজিও সংস্থাগুলোকে নিয়ে ৩০০ সদস্যের ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে।
২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে ঢাকা জেলায় নিবন্ধনকৃত লাইসেন্স প্রদান ও ব্যবস্থাপনা সহজ করার জন্য সুরক্ষা প্রযুক্তির ১৮ ধরনের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সম্বলিত ‘স্মার্ট ফায়ার আমর্স ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ অ্যাপস চালু করা হয়েছে।
ঢাকা জেলায় যোগদানের পূর্বে চট্টগ্রাম জেলায় ২ বছর জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে মোহাম্মদ মমিনুর রহমান দুর্নীতি বিরোধী অভিযান, ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে সাহসিকতাপূর্ণ সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে হাজার কোটি টাকা মূল্যের সরকারি জমি উদ্ধার করেছেন।