মুঠোফোন ঘেঁটে বিএনপি নেতাকর্মীদের আটকের অভিযোগ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৩, ০২:৪০ পিএম
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশ কেন্দ্র করে রাজধানীর গাবতলী ও আমিনবাজার এলাকায় তল্লাশি করছে পুলিশ। আজ সকাল থেকে এ তল্লাশি শুরু করে ঢাকা জেলা পুলিশ ও ঢাকা মহানগর পুলিশ। সমাবেশে যোগ দিতে আসা বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর মুঠোফোন ঘেঁটে দেখার পর তাদের আটক করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পুলিশ বলছে, এটি নিয়মিত তল্লাশির অংশ। তবে বাসের যাত্রী ও চালকরা বলছেন, গত এক মাসেও আমিনবাজার ও গাবতলী এলাকায় এ ধরনের কোনো তল্লাশি দেখেননি তারা। ধামরাই থেকে গুলিস্তানগামী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসের চালক বলেন, ‘গত এক-দুই মাসে এ ধরনের তল্লাশি হয়নি। তিন ঘণ্টা ধরে বসে আছি। গ্যাস খরচ হচ্ছে, যাত্রীদের কষ্ট হচ্ছে।’
দুই দলের এ কর্মসূচি কেন্দ্র করে সাভারের আমিনবাজার এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের চলাচলকারী বিভিন্ন পরিবহণে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। একই সঙ্গে যাত্রীসহ পথচারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
পুলিশের এ তল্লাশি চলাকালে সড়কের ঢাকামুখী লেনে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। তারা অভিযোগ করে বলছেন, দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত তাদের আটকে থাকতে হচ্ছে। অনেকেই বাস থেকে নেমে পায়ে হেঁটে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।
বুধবার সকাল ১০টার দিকে সরেজমিন দেখা যায়, সাভারের বলিয়ারপুর থেকে আমিনবাজার বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত ঢাকাগামী লেনে পরিবহণে যানজটে আটকে রয়েছে। অপর লেন দিয়ে বিপরীত দিকে যাওয়া পরিবহণগুলোও চলছে ধীরগতিতে। বেশ কয়েকজন বিএনপির সমর্থককে স্লোগান দিতে দেখা যায়।
আমিনবাজার বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন এলাকায় সাভার মডেল থানা ও আমিনবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা বাসের যাত্রী, সন্দেহভাজন পথচারীদের জিজ্ঞাসাবাদসহ তল্লাশি চালাচ্ছেন। ১০-১৫ মিনিট পর পর ৬-৭টি করে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।
দীর্ঘক্ষণ যানজটে আটকে থাকার পর বাস থেকে নেমে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দেন মো. সাইদুর রহমান। নিজেকে বিএনপির সমর্থক পরিচয় দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের কোনো সভা-সমাবেশ করতে দেয় না কেউ। আজকে যাচ্ছি, তাও পুলিশ আটকে দিল।’
আশুলিয়া থেকে রাজধানীতে ব্যক্তিগত কাজে আসছিলেন জাফর। যানজটের কারণে একই এলাকায় তিনিও বাস থেকে নেমে পায়ে হেঁটে রওনা দেন। তিনি বলেন, ‘আন্দোলন করলে তারা করুক। আমরা সাধারাণ মানুষ। আমাদের তো ভোগান্তিতে ফেলানোর কোনো দরকার ছিল না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাভার মডেল থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এটি আমাদের নিয়মিত তল্লাশিরই অংশ। তবে সমাবেশকে ঘিরে রাজধানীতে যাতে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে না পারে, সে জন্য তল্লাশিতে জোর দেওয়া হচ্ছে।’
প্রিজন ভ্যানে কাদের নেওয়া হয়েছে—এমন প্রশ্নে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, তল্লাশিতে কাউকে আটক করা হয়নি। তারা অন্য কোনো ঘটনায় আটক বা গ্রেফতার হয়ে থাকতে পারে।
রাজধানীর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলেন, ‘বেলা একটা থেকে পরীক্ষা। তল্লাশির কথা শুনে বাসা থেকে আগেই বের হয়েছি। পরীক্ষার প্রবেশপত্র দেখিয়ে দেড় ঘণ্টার যানজট ঠেলে আমিনবাজার পর্যন্ত আসতে পেরেছি।’
ঢাকার মিরপুরে একটি বায়িং হাউসে চাকরি করেন বইলাপুরের বাসিন্দা নাজমুল হাসান। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সাড়ে ৯টায় অফিস ছিল। এক ঘণ্টার বেশি সময় পায়ে হেঁটে অফিসের দিকে যাচ্ছি। আমি তো ভাই কাজে যাচ্ছি, কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগ দিতে যাচ্ছি না। তা হলে আমাকে কেন এই ভোগান্তি পোহাতে হবে?’
কালিয়াকৈর বিএনপির নেতা মতিয়ার বলেন, ‘সমাবেশে যোগদান আমার রাজনৈতিক অধিকার। পুলিশ আমার সেই রাজনৈতিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করছে। আমি পায়ে হেঁটেই সমাবেশে যোগ দিতে নয়াপল্টনে যাচ্ছি।’
সমাবেশে যোগ দিতে আসা নেতাকর্মীদের মুঠোফোন তল্লাশি করা হচ্ছে, এ অভিযোগ করে বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘অনেককেই গাড়ি থেকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’