Logo
Logo
×

রাজধানী

লিফট ও এসকেলেটরের ওপর অতিরিক্ত আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার দাবি

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৩, ১২:৩৮ এএম

লিফট ও এসকেলেটরের ওপর অতিরিক্ত আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার দাবি

ডলার সংকট ও রেট বেড়ে যাওয়া এবং আমদানিতে ৫ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধির কারণে আগে থেকেই সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে দেশের লিফট আমদানিকারক ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। এমন অবস্থার মধ্যেই গত অর্থবছরে লিফটকে ক্যাপিটাল মেশিনারিজ থেকেও অব্যাহতি দেয়া হয়। এতে ক্ষতির মুখে পড়েন তারা। এর রেশ কাটতে না কাটতেই ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে লিফটকে ক্যাপিটাল মেশিনারিজ ক্যাটাগড়ি থেকে বাদ রেখেই আমদানি পর্যায়ে বিদ্যমান শুল্ক আরও ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করে সর্বমোট ২৫.৭৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। 

একইসঙ্গে এস্কেলেটরকে ক্যাপিটাল মেশিনারিজ ক্যাটাগরি থেকে অবমুক্ত করে আমদানি পর্যায়ে বিদ্যমান মোট শুল্ক ১১ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে সর্বমোট ৪৩ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে তাদের সংকট আরও প্রকট হয়েছে। এসব তথ্য জানিয়েছে লিফট আমদানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ এলিভেটর, এস্কেলেটরস অ্যান্ড লিফট ইম্পোর্টার্স এসোসিয়েশন (বেলিয়া)। 

তাদের দাবি, এমনিতেই ডলার সংকটের কারণে এলসি খুলতে খুবই সমস্যা হচ্ছে। কোনভাবে এলসি খোলা গেলেও ডলার রেট অনেক বেশি। তাই আমদানি করতে বেগ পোহাতে হচ্ছে। এ অবস্থায় লিফটের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক বহাল থাকলে অধিকাংশ লিফট কোম্পানি বন্ধ হয়ে যাবে। এতে ব্যবসায়ীরা যেমন বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে পারে, তেমনি লিফ্ট ব্যবহারকারীদের রক্ষনাবেক্ষণে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

লিফট আমদানিকারকরা আরও দাবি করছেন, তারা বিক্রয় পর্যায়ে সরবরাহের বিপরীতে ভ্যাট প্রদান করে থাকে। পক্ষান্তরে লিফট উৎপাদনকারীরা ২০২৫ সাল পর্যন্ত ভ্যাট মওকুফ সুবিধা ভোগ করছেন।  সরকারের বিভিন্ন অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্পের লিফট এবং এস্কেলেটরের বর্তমানে চলমান কার্যাদেশের মূল্য ৪০০-৫০০ কোটি টাকা। একইভাবে বেসরকারি খাতে যা ১২০০-১৫০০ কোটি টাকা। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া, বিভিন্ন ব্যাংকে ডলার/ইউরোর মুদ্রা বিনিময়মূল্যের জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা কার্যকরী না থাকায়, ডলার/ইউরোর অনিয়ন্ত্রিত মূল্য বৃদ্ধিতে সরবরাহকারী ও আমদানিকারকদের নাভিশ্বাস উঠেছে। তার উপর বাজেটে প্রস্তাবিত অতিরিক্ত শুল্ক যেন “মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা” হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশ এলিভেটর, এস্কেলেটর অ্যান্ড লিফট ইম্পোর্টার্স এসোসিয়েশনের (বেলিয়া) সাধারণ সম্পাদক মো. শফিউল আলম উজ্জ্বল বলেন, বাংলাদেশে এই শিল্প সব সময়ই ক্যাপিটাল মেশিনারিজ ক্যাটাগরির মধ্যে ছিল। কিন্তু ক্যাপিটাল মেশিনারিজ ক্যাটাগড়ি থেকে এটাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে প্রতি বছর শুল্ককর বৃদ্ধি করা হচ্ছে। শ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে এমনিতেই আমরা নানা সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। এই অবস্থার মধ্যেই আমাদের উপর শুল্কের চাপ এসে পড়ছে। 

তিনি বলেন, লিফট হলো এমন একটি পণ্য, যেটা আমদানিতে একটা লম্বা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আসতে হয়। কিন্তু এর আগে বা পরে হঠাৎ শুল্ক আরোপ হলে এটার প্রভাব খুব বেশি হয়। ইতিমধ্যে অনেকেই মুখ থুবড়ে পড়েছে। 

তিনি আরও বলেন, গত বছর ৫ শতাংশ শুল্ক বাড়ানোর পরেও আমরা যেকোনোভাবে হোক চালিয়ে নিয়েছি। এবার আবার বাড়ানো হয়েছে ১০ শতাংশ।যা টোটাল হিসাব করলে ২৫.৭৫ শতাংশ হয়ে যায়। এখন এই অবস্থায় আমদানি করতে গেলে আমাদের ব্যবসায়ীরা চাপের মধ্যে পড়ে যাচ্ছে।

শফিউল আলম উজ্জল আরও বলেন, আমরা সবাই জানি লিফট এমন একটি পণ্য যেখানে দেশীয় শিল্প উদ্যোক্তাদের এই পণ্যের সিংহভাগ যন্ত্রাংশ আমদানি নির্ভর এবং তা বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ভোক্তা পর্যায়ে সরবারহ করতে হয়। যেখানে সিংহভাগ যন্ত্রপাতি আমদানি নির্ভর সেখানে তারা যদি বলে আমদানি ব্যয় হ্রাস হলে দেশে রিজার্ভের ওপর চাপ কমবে; এটি আসলে কতটা যৌক্তিক সেই প্রশ্ন আমাদের। এটি কীভাবে সম্ভব? তা আমাদের জানা দরকার। উপরন্তু আমদানি ব্যয় তো হ্রাস হবেই না বরং চাহিদার বিপরীতে আমদানি ঠিকই থাকবে এবং দেশীয় শিল্প উদ্যোক্তাদের অসম সুবিধা দিতে গিয়ে সরকার হারাবে বিপুল রাজস্ব আয়। বিষয়টি ভাবতে সরকারের সংশ্লিষ্টদের বিনীত অনুরোধ করছি।

স্থানীয় শিল্পের প্রসার এবং স্বার্থ রক্ষার জন্য স্থানীয় শিল্পকে উৎসাহ এবং সুরক্ষা প্রদান যেকোনো দেশের জন্যই মঙ্গলজনক। তবে দেশীয় শিল্পের সুরক্ষায় নিয়ন্ত্রণ সংস্থা গঠন ও তদারকি এবং তার সঙ্গে আমদানিকারকদের অস্তিত্ব রক্ষার মধ্যে সামঞ্জস্য বা ভারসাম্য রাখা অত্যন্ত জরুরি।  ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেটে সম্পূর্ণ তৈরি লিফটের আমদানি ১০ শতাংশ বাড়ানোর কারণে সম্পূর্ণ প্রস্তুত করা আমদানি লিফট ও দেশীয় শিল্পে উৎপাদিত লিফটের দামের পার্থক্য হচ্ছে প্রায় ৩৭ থেকে ৪০ শতাংশ। যা যার পর নেই অসম হচ্ছে। 

এসব চিত্র তুলে ধরে বাংলাদেশ এলিভেটর, এস্কেলেটরস অ্যান্ড লিফট ইম্পোর্টার্স এসোসিয়েশন (বেলিয়া) সরকার তথা প্রধানমন্ত্রীর সদয় বিবেচনার জন্য লিফট এবং স্কেলেটরকে অত্যাবশ্যক ক্যাপিটাল মেশিনারি ক্যাটাগরিতে রেখে আগের শুল্ক কর হার বহাল রাখার অনুরোধ জানায়। 

সংশ্লিষ্টরা আরও বলেন, বেলিয়া সরকারের সঙ্গে একযোগে এই আমদানি নির্ভর সেক্টরের বিকল্প পন্থা উদ্ভাবন, লিফট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন, আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ডের আলোকে বাংলাদেশ লিফট স্ট্যান্ডার্ড প্রণয়ন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা তৈরি এবং প্রয়োজনীয় সক্ষমতা অর্জন, সেফটি এবং স্ট্যান্ডার্ড নীতিমালা প্রণয়ন ইত্যাদি কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণে একযোগে কাজ করতে বদ্ধপরিকর। 

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বেলিয়ার সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার অচিন্ত্য বিশ্বাস, সাইফুল ইসলাম। এছাড়া আরও বক্তব্য রাখেন মনজুর হাসান, মাহফুজুর রহমান, জাকিরুল হক,  সাইদুল হক সাদী, আহমেদ আলী, কবীর মোল্লা, মোজাম্মেল হক, নূর আহমেদ, মো: হানিফ শামীম, তৌহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রমুখ। 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম