ছুটির দিন শুক্রবার অসহনীয় যানজটে পড়েছে রাজধানীবাসী। কয়েকটি সড়কে আধা ঘণ্টার দূরত্বে পৌঁছতে সময় লেগেছে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা।
গাড়িতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকে ত্যক্তবিরক্ত হয়ে পরে হেঁটেই গন্তব্যে পৌঁছেছেন কেউ কেউ। চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ঢাকা ছাড়ার উদ্দেশে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষ।
রাজধানীর বাড্ডায় শ্রমিক দলের পদযাত্রা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করেই মূলত যানজট তীব্র আকার ধারণ করেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, এই কর্মসূচির কারণে রামপুরা, আবুল হোটেল, মালিবাগ, মৌচাক, শান্তিনগর, মতিঝিল এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে বাড্ডার উত্তর দিকে নতুন বাজার, নর্দ্দা, কুড়িল, বিশ্বরোড, এয়ারপোর্ট হয়ে উত্তরা এলাকাতেও যানজট লেগে যায়।
অবস্থা এমন হয়, ৩টায় শুরু হওয়া এ কর্মসূচির ফলে ৪টার দিকে যান চলাচল একেবারেই থেমে যায়। একই স্থানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয় যাত্রীদের। রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত সড়কে এ যানজটের প্রভাব ছিল। এ নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
যানজটে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই কর্মসূচির বিষয়ে তারা কিছুই জানতেন না। এজন্য স্বাভাবিক সময়ের মতোই গাড়িতে ওঠেন। কিছুক্ষণ পরে দেখেন গাড়ি আর চলছে না। ঢাকা ছেড়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়া অনেকে নির্ধারিত সময়ে বাস টার্মিনাল, লঞ্চঘাট ও ট্রেন স্টেশনে পৌঁছতে পারেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গুলশান ট্রাফিক বিভাগের একাধিক পুলিশ সদস্য জানান, এ সমাবেশ ঘিরে তাদেরকে আলাদাভাবে কোনো ট্রাফিক নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। ফলে তারা বিশেষ কোনো ব্যবস্থাও গ্রহণ করতে পারেনি। একদিকে সমাবেশ শুরু হয়েছে, অন্যদিকে গাড়ি চলাচল থেমে গেছে। তখন তারা অনেকটা নিরুপায় হয়ে গেছেন। কিছু কিছু জায়গায় গাড়িগুলো ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তবে তা খুবই সামান্য। তারা আরও বলেন, ছুটির দিন হওয়ায় যানজট রাজধানীর কিছু এলাকার মধ্যে সীমাবব্ধ ছিল। অন্যান্য দিনে এমন হলে পুরো রাজধানীতে এর প্রভাব পড়তো। গাজীপুর ছাড়িয়ে টাঙ্গাইলেও যানজট চলে যেত।
খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা নেসারুল হক বলেন, ছুটির দিনে তার বাসা থেকে নতুন বাজার পৌঁছতে আধা ঘণ্টার মতো সময় লাগে। একই দূরত্বে এদিন তার সময় লেগেছে তিন ঘণ্টা।
কুড়িল এলাকায় কথা হয় রাজিয়া বেগমের সঙ্গে। তিনি লঞ্চে গ্রামের বাড়ি যাবেন। অথচ একই জায়গায় দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় গাড়ি থেমে আছে বলে জানান। গিয়ে লঞ্চ পাবেন কিনা সেই চিন্তায় ক্ষণ কাটছিল তার।
রামপুরা এলাকায় কথা হয় মগবাজারের বাসিন্দা নাঈম করিমের সঙ্গে। তিনি কুড়িলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছিলেন। যানজটে পড়ে বিরক্ত হয়ে বাস থেকে নেমে যান। তিনি বলেন, ছুটির দিনে অন্যান্য দিনের চেয়ে অর্ধেক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো যায়। অথচ এদিন একই সময়ে গন্তব্যের চার ভাগের এক ভাগ দূরত্বেও যেতে পারিনি। যেকোনো দল রাজনৈতিক কর্মসূচি করতেই পারে। কিন্তু সেটা নগরবাসীকে জানিয়ে দিলেই তো হয়। তাহলে এতগুলো মানুষ ভোগান্তিতে পড়ত না। মানুষ বিকল্প সড়ক ব্যবহার করতে পারত অথবা কর্মসূচির আগে সময় নিয়ে বের হতো।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) আব্দুল মোমেন শুক্রবার রাত ৮টায় যুগান্তরকে বলেন, আমরা যান চলাচল স্বাভাবিক করতে কাজ করছি। কর্মসূচি শেষ হওয়ার পরেও সড়কে দীর্ঘ সময় এর প্রভাব ছিল।