ফ্যাটি লিভার প্রতিকারে হেপাটোলজি সোসাইটির ১০ সুপারিশ
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ০৭ জুন ২০২৩, ০৬:০০ পিএম
বাংলাদেশে ফ্যাটি লিভারের চিকিৎসার ন্যূনতম অর্থনৈতিক মূল্য ৭৫ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা, যা জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের দ্বিগুণ।
ষষ্ঠ আন্তর্জাতিক ন্যাশ দিবস উপলক্ষ্যে বুধবার সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে হেপাটোলজি সোসাইটি আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে এ তথ্য জানিয়েছেন সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শাহিনুল আলম।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন লিভার বিশেষজ্ঞ ও হেপাটোলজি সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক মবিন খান। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) অধ্যাপক ডা. এএসএম মতিউর রহমান।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- ন্যাশনাল লিভার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী, বাংলাদেশ একাউন্টিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম হারুন উর রশিদ, সিনিয়র সাংবাদিক আমির খসরু ও গ্লোবাল লিভার ইনস্টিটিউটের সভাপতি ডোনা ক্রাইয়ার।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলজি বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. মো. সাইফুল ইসলাম এলিন বাংলাদেশের ফ্যাটি লিভারের প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে বলেন, দেশে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি লোক ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত। দিনে দিনে তা বেড়েই চলেছে। তাই ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধে চিকিৎসকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।
ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধ বিষয়ে আলোকপাত করে একই বিভাগের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা বলেন, জীবনাচরণ পরিবর্তনের পাশাপাশি ৭ থেকে ১০ শতাংশ ওজন হ্রাস হচ্ছে ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধের মূলমন্ত্র।
ফ্যাটি লিভারের কারণে দেশে যে অর্থনৈতিক বোঝা তৈরি হচ্ছে তার একটি হিসেব দেখান হেপাটোলজি সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. শাহিনুল আলম । তার টিমের গবেষণালব্ধ উপাত্ত অনুযায়ী, প্রতিটি ফ্যাটি লিভার রোগীর হাসপাতালে একবার চিকিৎসা নিতে গড়ে ১৬ হাজার ৮১০ টাকা ব্যয় হয়। সে হিসেবে, সব রোগী এক বারের জন্য চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে গেলে মোট ব্যয় ৭৫ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা, যা জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের দ্বিগুণ।
অধ্যাপক আলম জানান, ফ্যাটি লিভারজনিত সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারের রোগী ক্রমাগত বাড়ছে। এ সংক্রান্ত জটিলতার ক্ষেত্রে শারীরিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ আরও অনেক বেশি।
বাংলাদেশের এই বিপুল অর্থনৈতিক বোঝা থেকে পরিত্রাণে ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধ এবং দ্রুত রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার ওপর জোর দিয়ে হেপাটোলজি সোসাইটি, ঢাকা গোলটেবিল বৈঠকে ১০টি সুপারিশ উত্থাপন করে-
১. প্রত্যেক ব্যক্তির সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন ৩০ মিনিট করে হাঁটতে হবে।
২. সম্ভব হলে দড়ি লাফ, সাইকেল চালানো এবং সাঁতার কাটার মাধ্যমে শরীরচর্চা প্রয়োজন।
৩. হাঁটা এবং শরীরচর্চার জন্য পর্যাপ্ত সবুজ জায়গার ব্যবস্থা করা আবশ্যক।
৪. ‘স্বাস্থ্যকর নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্যকর নগর’ স্লোগানের আওতায় শহরগুলোকে সবুজ, পরিচ্ছন্ন এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের উপযোগী করে তুলতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে।
৫. প্রক্রিয়াজাত খাবার, ভাজাপোড়া কমাতে হবে এবং দুধ, ফল ও শাক-সবজি খাওয়া বাড়াতে হবে।
৬. গণসচেতনতামূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে জাংক ফুড পরিহার এবং বাসায় বানানো স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
৭. প্রক্রিয়াজাত খাবারের ক্ষেত্রে প্রস্ততকারী প্রতিষ্ঠানকে পুষ্টিমাণ বজায় রাখার জন্য আদর্শমান সরবরাহ এবং আইন করে তা নিশ্চিত করতে হবে।
৮. দেশের প্রতিটি স্কুলে ‘স্কুল হেল্থ প্রোগ্রামের’ আওতায় খেলার মাঠ বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং ক্লাসের শুরুতে শরীরচর্চার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
৯. স্কুলভিত্তিত স্বাস্থ্যকার খাবার টিফিন হিসেবে প্রদান নিয়মে পরিণত করতে হবে।
১০. দেশি প্রতিটি বড় রাস্তার পাশে বাইসাইকেল চালানোর লেন করতে হবে এবং সবাইকে মোটরযানের পরিবর্তে বাইসাইকেল চালাতে উৎসাহিত করতে হবে।