উন্নয়নের জন্য সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে: স্থানীয় সরকারমন্ত্রী
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২৩, ০১:৫২ এএম
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, মুদ্রার যেরকম এপিঠ-ওপিঠ উভয় দিকই রয়েছে তেমনি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ইতিবাচক দিকের সাথে সাথে নেতিবাচক প্রভাবও রয়েছে। সেই নেতিবাচক প্রভাবকে কিভাবে কমিয়ে আনা যায় সেজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। দেশটা আমাদের সবার এবং এ দেশের উন্নতির জন্য সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।
শনিবার রাজধানীর বাংলামোটরস্থ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) ভবনে ইনস্টিটিউট আয়োজিত ‘২৮ বছরে রাজধানীর জলাধার ও সবুজ নিধন: বাস্তবতা ও উত্তরণের পথনকশা’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ ও গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব বলেন। নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরামের সহযোগিতায় এই আয়োজন হয়।
মন্ত্রী বলেন, নানা ধরনের অব্যবস্থাপনা ও দুর্বৃত্তায়ন উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্তির ফলে পরিবেশ দূষণসহ দখলদারিত্বের সংস্কৃতি থেকে মুক্ত হতে আমাদের সময় লাগছে। মানুষই পরিবেশের দূষণ করে এবং মানুষই পারে দূষণ প্রতিরোধ করতে। দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ না হলে ঢাকার নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা যাবে না। এছাড়া অসংখ্য মানুষের চাপে যেকোনো ভালো পরিকল্পনা ও নাগরিক সুবিধা ভেঙ্গে পড়তে বাধ্য। সীমার অতিরিক্ত মানুষ ঢাকায় বসবাস করাকে নিরুৎসাহিত করতে নানা ধরনের পরোক্ষ নীতিমালাও নেওয়ার সময় হয়েছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) সভাপতি পরিকল্পনাবিদ ফজলে রেজা সুমনের সভাপতিত্বে আলোচনার সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী, বাংলাদেশ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সভাপতি সুলতানা কামাল।
আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন রাজউকের সদস্য (উন্নয়ন) মেজর শামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, সোসাইটি অব এক্সপার্টস অন এনভায়রনমেন্ট ডেভেলপমেন্টের সভাপতি মো. আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. ইসরাত ইসলাম, বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সহ-সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নকী, স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ডিন অধ্যাপক ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার, নগদ উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি অমিতোষ পাল।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান।
বিআইপি-র যুগ্ম সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ মোহাম্মদ রাসেল কবির এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মো. সোহেল মামুন বলেন, ঢাকা মহানগরীর জলাশয় ও সবুজভূমির পরিমাণ ক্রমাগত কমছে যা বাসযোগ্য শহরের জন্য হুমকি স্বরূপ। ঢাকাকে বাসযোগ্য শহর হিসেবে গড়তে নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরাম তার সূচনা লগ্ন থেকে কাজ করে যাচ্ছে।
গোলটেবিল আলোচনায় সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, সঠিক পরিকল্পনায় অভাবে আমাদের ভবিষ্যতকে ব্যর্থতার দিকে ধাবিত করে। বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে স্পষ্টত জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের কথা বলা আছে তাই সর্বপ্রথম আমাদের দেশের বাস্তবতার আলোকে জলাধার, সবুজ এলাকা সহ নগর পরিকল্পনা ও পরিবেশগত সকল নির্দেশকের মানদণ্ড নির্ধারণ করতে হবে। জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের লক্ষ্যে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, তথা জলাধার ও সবুজ এলাকার সংরক্ষণ ও পরিচর্যার উদ্দেশ্যে সকলকে কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সভাপতি সুলতানা কামাল ঢাকার সবুজ ভূমি ও জলাভূমি রক্ষায় রাষ্ট্রকে আরও শক্তিশালী ও কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, একটি দেশের উন্নয়ন বলতে শুধুমাত্র অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নকে বুঝায় না বরং দেশের সকল মানুষ যেন সুষ্ঠুভাবে বাঁচতে পারে সেই সভ্য দেশ গঠন করাকেই প্রকৃত উন্নয়ন বলে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)র প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন,পুরনো ঢাকার গেন্ডারিয়া দিঘী ভরাট, হাতিরঝিলের লেক ভরাট এবং গাবতলীতে বিএডিসির জন্য নিম্নভূমি ভরাট এখনই বন্ধ করতে হবে। পূর্বাচলে ১৯ শতাংশ বনভুমি সংরক্ষণের কথা বলা থাকলেও পর্যায়ক্রমে রাতের আধারে ধীরে ধীরে পুড়িয়ে উজাড় করা হয়েছে। অপরদিকে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে জলাধার ভরাট করে উন্নয়ন করার জন্য রাজউক থেকে অনুমোদন নেয়া হয়। কিন্তু জলাধার ভরাট করে উন্নয়ন এটি কখনো সমাধান হতে পারেনা।
নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি অমিতোষ পাল বলেন, নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে একটি পার্কে ৫ শতাংশের বেশি কনক্রিট আচ্ছাদিত এলাকা থাকা যাবে না। কিন্তু বিভিন্ন পার্ক ও উদ্যানের বর্তমান অবস্থা এবং উন্নয়নের নামে সেখানকার জলাধারের সংকোচন ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। এছাড়া ঢাকার বায়ুমান ও তাপমাত্রা বিদ্যমান সবুজভূমি ও জলাধারের সাথে বিশেষ ভাবে সম্পর্কিত। ঢাকায় সবুজভূমি ও জলাধারের তুলনায় কংক্রিট আচ্ছাদিত এলাকার তাপমাত্রা স্থানভেদে ৩-৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।নগরের জলজীবন ও সবুজায়ন রক্ষার্থে দায়িত্বরত কর্তৃপক্ষের সমন্বয়হীনতা দৃশ্যমান।
বিআইপি সভাপতি পরিকল্পনাবিদ ফজলে রেজা সুমন বলেন, ঢাকাকে টেকসই ও বাসযোগ্য করার জন্য ১৪৭ বর্গমিটারের ঢাকার কেন্দ্রীয় নগর অঞ্চলের বাইরে যে বর্ধিঞ্চু এলাকা রয়েছে, সেখানে বিদ্যমান পার্ক বা খেলার মাঠ ও জলাভূমিসমূহ ল্যান্ড ব্যাংকিং এর দখল হওয়ার পূর্বেই সিল করতে হবে। কারণ উক্ত সবুজ ও জলাভূমি একবার দখল বা ভরাট হয়ে গেলে তা পুনরুদ্ধার করা কঠিন, সময় ও অর্থসাপেক্ষ। এছাড়া জলাধার ভরাট ও সবুজ এলাকা নিরসন রোধে বিভিন্ন প্রকল্পে পরিকল্পনাবিদদের সংশ্লিষ্টতা থাকার প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন তিনি।