ছবি: যুগান্তর
আগুনের লেলিহান থাবা থেকে যতটুকু বাঁচানো গেছে, ততটুকু মালামাল নিয়ে দোকান খুলে বসেছেন বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা। তবে ক্রেতা নেই বললেই চলে। ঈদের আগে এ সময়টা যে মার্কেটে ছিল ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাক, সেই মার্কেট এখন নিষ্প্রাণ। তবুও তীব্র গরমে শেষ সম্বলটুকু নিয়ে বসছেন ব্যবসায়ীরা কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়ানোর আশায়। তবে যে বেচাবিক্রি হচ্ছে তাতে দৈনিক খরচের টাকা তুলতেই হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত পণ্য না থাকা, রোদ ও তীব্র গরমের কারণে ক্রেতারা বঙ্গবাজারে আসছে না। যারাই আসছেন, তারাও পণ্যের দাম ঠিকমতো দিতে চাচ্ছেন না।
মঙ্গলবার সরেজমিন দেখা যায়, দোকানি-সেলসম্যান ও ম্যানেজাররা কেউ কেউ গল্প করে, কেউবা মোবাইল দেখে সময় পার করছেন। দুয়েকজন ক্রেতা দেখলেই দোকানিরা নিজেদের দোকানে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে কাস্টমার না থাকা এবং অতিরিক্তি গরমের কারণে অনেক ব্যবসায়ী সকাল থেকে দোকান খুলেননি।
এফএনএফ গার্মেন্টসের সেলসম্যান হিমেল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, অন্য বছর ঈদের আগের এক সপ্তাহ আমরা নিঃশ্বাস নেওয়ার সময় পেতাম না। কাস্টমারের চাপে ঠিকমতো ইফতার করতে পারতাম না। এখন তেমন কাস্টমার না থাকায় অনেকটা অলস সময় পার করতে হচ্ছে আমাদের।
তিনি জানান, তার বেতন ছিল ১৬ হাজার টাকা। ঈদ বোনাস, মালিকের বকশিস সব মিলিয়ে ৫০-৬০ হাজার টাকা নিয়ে বাড়ি যেতে পারতাম। এবার তো আমাদের ইফতারের টাকা দিতেই মালিকের কষ্ট হচ্ছে।
বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ী কামাল শেখ জানান, ভাবছিলাম চৌকিতে দোকান চালুর কথা শুনে পুরাতন কাস্টমারগুলো আসবে, কিন্তু এবার তেমন বিক্রি হচ্ছে না। দুপুর পর্যন্ত মাত্র দুই পিস প্যান্ট বিক্রি করেছি। দুপুর ১টা পর্যন্ত পুরো মার্কেটজুড়ে ১৫-২০ জন ক্রেতার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। অথচ চৌকি দোকান চালু হয়েছে ৬ শতাধিক।
কথা হয় কামাল হোসেন নামের একজন ক্রেতার সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে জানান, পরিবারের জন্য কেনাকাটা করেছেন এই মার্কেট থেকে। তেমন একটা দরকষাকষি করতে হয়নি। দুটি শাড়ি কিনেছি ৮০০ টাকা করে ১৬০০ টাকায়।
আরেক ক্রেতা আব্দুল কাইয়ূম বলেন, বাচ্চাদের জন্য ২ হাজার টাকার পোশাক কিনেছি এখান থেকে, অনেক কম দামেই পেয়েছি সবকিছু। দোকানিরা ভাবছিলেন, চৌকিতে দোকান পুনরায় চালু করলে অন্তত তিনভাগের একভাগ কাস্টমার পাওয়া যাবে। কিন্তু বিক্রিবাট্টা নেই বললেই চলে।
গত ৪ এপ্রিল সকালে ভয়াবহ আগুনে নিঃস্ব হয়ে যায় বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আগুনে পুড়ে ভস্মীভূত হওয়া সব মিলিয়ে ৩ হাজার ৮৪৫টি দোকানের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, বঙ্গবাজারে সব মিলিয়ে ৩০৩ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে মার্কেটগুলোর কাঠামোগত ক্ষতির পরিমাণ ১৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা। আর মালামালের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ২৮৮ কোটি টাকার বেশি।