পুরান ঢাকার ধুপখোলা খেলার মাঠের দখল পুনরায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে (জবি) ফিরিয়ে দিয়েছে ঢাকা জেলা প্রশাসন।
রোববার বিকাল ৪টায় ঢাকা জেলা প্রশাসক (ডিসি) এ মাঠের দখল হস্তান্তর করেন।
এদিন বিকাল তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হেঁটে ধুপখোলা মাঠে যান ডিসি আনিসুর রহমানসহ জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তা এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবির চৌধুরী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
ধুপখোলা মাঠের ৫.৩২ একরের মধ্যে সাড়ে চার একর জমি জবিকে হস্তান্তর করে ঢাকা জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসকের উপস্থিতিতেই মাঠের ফটকে ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ’ লেখা সংবলিত নামফলক ব্যানার টানিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে ফুটবল পাসিংয়ের মাধ্যমে মাঠ উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ।
ঢাকা জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান বলেন, আজকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠ তাদেরকে হস্তান্তরের মাধ্যমে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্তের সূচনা হলো। আমি চাই, এখানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা স্থায়ী সাইনবোর্ড হোক। আপনাদের অসংখ্য হল বেদখল হয়ে গেছে, দুর্বৃত্তরা দখল করে নিয়েছে। আপনারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা নির্বাচন করুন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে ঢাকা জেলা প্রশাসন আপনাদের সব হল উদ্ধার করবে।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ঢাকা শহরে ১৭ শতকের অধিক বাড়ি আছে, যেসব দুর্বৃত্তরা দখল করে আছে। তারা অনেক সময় লিজ নবায়ন করে না। সেসব বাড়িতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করে দিতে পারি। বৈষম্যের বিরুদ্ধে আপনারা যে বিজয় দেখিয়েছেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরের ইতিহাসে আমরা আর দেখিনি।
কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. হুমায়ুন কবীর চৌধুরী বলেন, এই ধুপখোলা মাঠে দীর্ঘদিন ধরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করে আসছে। কিন্তু করোনাকালীন হুট করে মাঠটি আমাদের কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হলো। কী কারণে মাঠটি আমাদের কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হলো, তা আমি এখনো বুঝে উঠতে পারিনি। আমি আশা করব, জেলা প্রশাসন আমাদেরকে সর্বোচ্চ সহায়তা করবে।
এ সময় কোষাধ্যক্ষ ধুপখোলা মাঠে খুব দ্রুত একটি টুর্নামেন্টে আয়োজন করার ঘোষণা দেন।
জানা যায়, গত ২০২১ সালের জুনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে মার্কেট নির্মাণের উদ্যোগ নেয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এর প্রেক্ষিতে ১৭ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে মার্কেট নির্মাণের শঙ্কায় ডিএসসিসিকে চিঠি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে সিটি মেয়রের সঙ্গে দেখা করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে কোনো স্থাপনা নির্মাণ না করার আশ্বাস দেওয়া হয়। সে সময় খেলার মাঠ থেকে খুঁটি সরিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু ২ অক্টোবর গভীর রাতে আবার পুরো মাঠ ঘিরে রাখা হয়। মাঠের গোলপোস্ট ও সীমানা প্রাচীরগুলো তুলে ফেলে সিটি করপোরেশনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরবর্তীতে ২০২৩ সালের ১১ অক্টোবর ধুপখোলা মাঠটিকে আধুনিকায়ন করে উদ্বোধন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ফজলে নূর তাপস।
সে সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দাবি করেছিল, সিটি করপোরেশনের মেয়র আশ্বাস দিলেও তাদের না জানিয়েই মাঠে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। তখন কাজ বন্ধ করতে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
১৯৮৪ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার নিজস্ব কোনো মাঠ না থাকায় ধুপখোলা খেলার মাঠটি তিন ভাগ করেন। এর মধ্যে এক ভাগ তৎকালীন সরকারি জগন্নাথ কলেজকে ব্যবহারের জন্য মৌখিকভাবে অনুমতি দেন। তখন থেকেই প্রতিষ্ঠানটির খেলার মাঠ হিসেবে ধুপখোলা মাঠটিকে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই মাঠেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে।