ক্ষতিগ্রস্ত হল পরিদর্শন শেষে ভিসি
তিনশ কক্ষ ভাঙচুর সংস্কারের পর খোলা হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ১০:১০ পিএম
শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। তিনি বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩০০ কক্ষ ভাঙচুর করা হয়েছে। এগুলো সংস্কারের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হবে। ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হলগুলোর ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হয়েছে।
শুক্রবার সকালে ক্ষতিগ্রস্ত রোকেয়া হল ও স্যার এ এফ রহমান হল পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়া, সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক আবু হোসেন মুহম্মদ আহসান এবং সংশ্লিষ্ট হলের প্রাধ্যক্ষরা উপস্থিত ছিলেন।
অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কাছ থেকে আর্থিক বরাদ্দ পাওয়ার পর হলগুলো সংস্কার করে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হবে। তিনি বলেন, ৩০০টি রুম যখন আমরা সংস্কার শেষ করব, দেশব্যাপী যখন একটা স্থিতিশীলতা আসবে, শিক্ষার্থীদের যখন আমরা আশ্বস্ত করতে পারব পাশাপাশি হলগুলো প্রস্তুত হবে তখন আমরা বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব।
কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্র করে ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলকারী শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগের মধ্যে প্রথম সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার সূত্রপাত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হল থেকে। সেদিন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভ‚মিকা আর প্রস্তুতি নিয়ে উপাচার্য বলেন, সেদিন সংস্কারপন্থি শিক্ষার্থীদের প্রোগ্রাম ছিল দুপুর ১২টার সময় রাজু ভাস্কর্য আর ছাত্রলীগের প্রোগ্রাম ছিল বিকাল ৩টায়। আমাদের প্রক্টরিয়াল টিম শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রস্তুত ছিল। ৩টার কাছাকাছি সংস্কারপন্থি শিক্ষার্থীদের একটি অংশ যখন হল পাড়ার দিকে আসে তখন আমাদের প্রভোস্টরাও হলে ছিলেন না, প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যদেরও বিষয়টি জানা ছিল না।
তিনি বলেন, আমি খবর পাওয়ার পর প্রক্টরিয়াল টিম এবং প্রভোস্টদের বিষয়টি অবহিত করি। ততক্ষণে মারামারি শুরু হয়ে যায়, তখন দেখি দুপক্ষের হাতেই লাঠি। এই সময় প্রক্টরিয়াল টিমও সেখানে পৌঁছাতে পারেনি। আর প্রভোস্টরাও আটকা পড়েন বিভিন্ন জায়গায়। তার ওপর শিক্ষার্থীরা বেশির ভাগই অপরিচিত, তাদের অনেকেই প্রক্টরিয়াল টিমকে চেনে না।
তিনি বলেন, আমাদের প্রস্তুতির কোনো ঘাটতি ছিল না। সংস্কারপন্থি শিক্ষার্থীদের প্রোগ্রাম শেষে অন্যরা তাদের প্রোগ্রাম করবে সেজন্য আমাদের প্রক্টরিয়াল টিম প্রস্তুত ছিল। কিন্তু আমাদের যদি জানা থাকত যে, সেখানকার একটি মিছিল এদিকে (হল পাড়া) আসবে তখন আমাদের সেই প্রস্তুতিটাও থাকত। আকস্মিকভাবে এটি ঘটেছে। এ ধরনের মভকে কন্ট্রোল করা- যখন সবার হাতে লাঠি তখন আমাদের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এই মভটি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। উপাচার্য বলেন, দুপুরে আমাদের প্রভোস্টরা যখন খেতে গেছে সেই সময় এ ঘটনাটি ঘটে যায়।
পুলিশকে হলে প্রবেশের অনুমতি দেইনি : উপাচার্য বলেন, ১৫ জুলাই বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত শহীদুল্লাহ হলের সামনে যে ঘটনা ঘটেছে সে সময়ও আমরা পুলিশকে হলে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছি। হলের সামনে পুলিশ ৬ ঘণ্টা অবস্থান করেছে, তারপরও আমরা তাদের ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেইনি। পরের দিন আমরা যখন হলগুলো বন্ধ করে দিয়েছি, সেদিনও পুলিশ হলগুলোতে প্রবেশ করতে চেয়েছিল, আমরা তাদের অনুমতি দেইনি। পুলিশ তাদের নিজস্ব কোর্স অফ অ্যাকশন হিসাবে যা করেছে তা তারা নিজেরাই করেছে।
শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্যই ক্যাম্পাসে পুলিশ : উপাচার্য বলেন, পুলিশ যে ক্যাম্পাসে এসেছে সেটি আমাদের কোটা সংস্কারপন্থি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই। তিনি বলেন, ১৬ জুলাই সংস্কারপন্থি শিক্ষার্থীদের প্রোগ্রাম ছিল শহিদ মিনারে আর ছাত্রলীগের প্রোগ্রাম ছিল রাজু ভাস্কর্যে। দুপক্ষ সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্যই শেখ রাসেল টাওয়ারের সামনে আমরা পুলিশকে অবস্থান নিতে বলেছি। তাদেরকে এও বলেছি, তারা যেন কোনো টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ না করে। উপাচার্য বলেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্যই পুলিশ ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়েছে।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে ১৬ জুলাই রাত থেকে পরদিন দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন হল থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বের করে দিয়ে হলগুলোতে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করা হবে মর্মে একাধিক বিজ্ঞপ্তিতে হল প্রাধ্যক্ষের স্বাক্ষর নেয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি চলবে’ মর্মে উপাচার্য বক্তব্য দিয়েছেন দাবি করে শুক্রবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বেসরকারি একটি টিভি চ্যানেল। এ বিষয়ে উপাচার্য বলেন, চ্যানেলটির সেই প্রতিবেদক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ তথ্যটি ছড়িয়েছে। ছাত্ররাজনীতি সংক্রান্ত কোনো বক্তব্য আমি দেইনি। কোনো সাংবাদিক আমাকে এটি নিয়ে কোনো প্রশ্নও করেনি।