সন্তানদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ দুরভিসন্ধিমূলক: বুয়েটের আটক শিক্ষার্থীদের অভিভাবক
![Icon](https://cdn.jugantor.com/uploads/settings/icon_2.jpg)
ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২৩, ০৬:১২ পিএম
![সন্তানদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ দুরভিসন্ধিমূলক: বুয়েটের আটক শিক্ষার্থীদের অভিভাবক](https://cdn.jugantor.com/assets/news_photos/2023/08/01/image-702256-1690896879.jpg)
সুনামগঞ্জ থেকে আটক হওয়া বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যায়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও দুরভিসন্ধিমূলক বলে দাবি করা হয়েছে তাদের অভিভাবদের পক্ষ থেকে।
মঙ্গলবার বুয়েটের শহিদ মিনার এলাকায় তাদের অভিভাবকদের পক্ষ থেকে করা এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অভিভাবকদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আলি আহসান জুনায়েদ। তিনি বলেন, ‘সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওড়ে ঘুরতে যাওয়া আমাদের সন্তান, আপনজন বুয়েটের ২৪ জন শিক্ষার্থীসহ মোট ৩৪ জন পর্যটককে পুলিশ আটক করে মামলা দায়ের করেছে। হঠাৎ এমন অনাকাঙ্ক্ষিত সংবাদ আমাদেরকে মর্মাহত করেছে। আমাদের সন্তানদের অন্যায়ভাবে আটক করা, সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দায়ের আমাদের সন্তানদের শিক্ষাজীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। ফলে নিরুপায় হয়ে আজকে অভিভাবক হিসেবে আপনাদের সহযোগিতা পেতে আপনাদের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের জ্ঞাতসারে গত ২৯ জুলাই ২৩ (শনিবার) আমাদের সন্তান/স্বজনেরা ক্যাম্পাসের বন্ধুদের সঙ্গে সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওড়ে বেড়াতে যায়। যাওয়ার পরে সুনামগঞ্জ গিয়ে আরও বেশ কয়েকজন বুয়েটিয়ানকে পেয়ে তারা আনন্দিত হয় এবং তারা সবাই একত্রে ঘুরার কথা জানায়। রোববার সন্ধ্যার পর থেকে তাদেরকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছিল না। আমরা মনে করেছি ট্যুরে আছে, হাওড় এলাকায় হয়ত নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে ফোনে কল যাচ্ছে না। দীর্ঘক্ষণ তাদেরকে ফোনে না পেয়ে আমরা শঙ্কিত হয়ে পড়ি। এরপর প্রায় ৩ ঘণ্টা পরে রাত ১০টার দিকে হঠাৎ ফোন করে আমাদের অনেকের কাছেই সন্তানরা তাদের নিজের ও গার্ডিয়ানের ন্যাশনাল আইডি কার্ডের নাম্বার জানাতে বলে। তারা জানায় যে তাদেরকে পুলিশ হাওড়ে নৌকায় ভ্রমণের সময় জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে আটক করে তাহিরপুর থানায় নিয়ে এসেছে এবং জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, এরপর আইডি কার্ডের নাম্বার নেওয়ার পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে। তারা ফোনে শুধু এতটুকুই বলতে পারে। কিন্তু এর বেশি আর কথা বলতে দেওয়া হয়নি, ফোন নিয়ে নেওয়া হয়। ফলে আমরা এরপর থেকে তাদের বিষয়ে খোঁজখবর জানার জন্য ওসি ও এসপিকে বারবার ফোন করেছি, কিন্তু উনারা কেউ ফোন রিসিভ করেননি। তাই আমরা জানতেও পারছিলাম না কেন তাদেরকে আটক করা হয়েছে।’
আলি আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘অনেক উদ্বিগ্নতার পরে গতকাল (সোমবার) বিকালে সংবাদ মাধ্যমের বরাতে আমরা জানতে পারি যে, তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দেওয়া হয়েছে। তারা নাকি নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনার জন্য সেখানে গেছে। আমাদের সন্তানদের ব্যাপারে এমন অকল্পনীয় অভিযোগ শুনে আমরা যারপরনাই আশ্চর্যান্বিত হই। আমরা মনে করি, এরকম হাস্যকর ও বানোয়াট অভিযোগ সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও দুরর্ভিসন্ধিমূলক। উল্লেখ্য, স্থানীয় ওসি এবং এসপিকে ফোন দেওয়ার পাশাপাশি আমরা রাত থেকে ভিসি স্যারকেও ফোন দিয়েছি অসংখ্যবার। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা কারো সঙ্গেই যোগাযোগে সক্ষম হইনি।’
মামলা নিয়ে অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গতকাল (সোমবার) বিকালে আমাদের হাতে পৌঁছানো মামলার বিবরণীতে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ঘটিয়ে জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করা, জানমালের প্রতি ক্ষতি সাধন, রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মকাণ্ডসহ ধর্মীয় জিহাদ সৃষ্টির মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার অপরাধ ইত্যাদি অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই পুরো বিষয়টি আমাদেরকে প্রচণ্ড উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।’
‘নাশকতার অভিযোগ হাস্যকর’ উল্লেখ করে আলি আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘একটি বিষয় পরিষ্কারভাবে বলতে চাই- জব্দকৃত মালামাল হিসেবে কতগুলো জিনিসপত্র তাদের কাছ থেকে উদ্ধারের যে প্রসঙ্গ অবতারণা করা হয়েছে, এটি অত্যন্ত হাস্যকর এবং পরিষ্কারভাবে বানোয়াট বিষয়। তারা টার্ম-ব্রেকের ছুটির মাঝে বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে ঘুরতে ওখানে গেছে। সদ্য এসএসসি পাশকৃত কয়েকজন আত্মীয়কেও বেড়ানোর জন্য সঙ্গে নিয়ে গেছে। আর এভাবে করে টাঙ্গুয়ার হাওড়ে যেয়ে কেউ নাশকতার পরিকল্পনা করবে এমন অভিযোগও হাস্যকর। আমরা চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি, কোনো ধরনের রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের সঙ্গে আমাদের সন্তানেরা জড়িত নয়।’
তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে মেধাবী ছাত্র হিসেবে এবং ভালো সন্তান হিসেবে আমরা তাদের ব্যাপারে গর্ব অনুভব করি। ছোটবেলা থেকেই তাদের পড়ালেখার প্রতি ঝোক ছিল; রাজনীতিসহ এ জাতীয় কোনো কাজের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা ছিল না কখনই। উপরন্তু বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ায় আমরা সর্বদাই তাদেরকে এ ব্যাপারে সাবধান করে গিয়েছি এবং তারাও রাজনীতিমুক্ত হিসেবেই ছিল।তারা কোনো ধরনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, এ ধরনের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’
আলি আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা পরিষ্কার ভাষায় বলছি- তারা সাধারণ শিক্ষার্থী মাত্র। কোন ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তাদের বিরুদ্ধে এমন ভয়ঙ্কর মামলা সাজানো হলো, আমাদের বোধগম্য নয়।’
দ্রুত জামিনের আবেদন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে ভিকটিম শিক্ষার্থীদের পরিবার হিসেবে আমরা মানসিকভাবে বেদনাদায়ক সময় পার করছি ও তাদের ভবিষ্যত জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় আছি। দ্রুত তাদের জামিন প্রদান ও মামলা থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য বিচার বিভাগ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে দাবি জানাচ্ছি।’
এ ব্যাপারে রুয়েট প্রশাসন, বুয়েটের শিক্ষার্থীদের অভিভাবক, বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী এবং সাংবাদিকদের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে তাদের ‘নিরাপরাধ সন্তানদের’ পাশে থাকার জন্য সহযোগিতা ও দোয়া চেয়েছেন।