জবির ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ছাত্রীকে নির্যাতন
জবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৩, ০৯:২৩ পিএম
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রী হলে এক শিক্ষার্থীকে আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। একই হলের একাধিক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতনের শিকার ওই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী বলে জানা গেছে।
এ ঘটনায় বুধবার জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে হল প্রভোস্টের মাধ্যমে উপাচার্য বরাবর অভিযোগপত্র দেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা হলেন- তন্বী, ইশিতা, ফাল্গুনী আক্তার, নিনজা শিকদার, ইরা ও নাজমুন নাহার স্বর্ণা।
জানা যায়, অভিযুক্ত এসব শিক্ষার্থী জবি শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে জুনিয়র রুমমেট রেবেকা খাতুনের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে রেবেকা হলের অন্য রুমের মেয়েদের সঙ্গে নিয়ে তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন এবং হেনস্তা করেন। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে হেনস্তার পর ওই ছাত্রী অজ্ঞান হয়ে যান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমি এসে ওই ছাত্রীকে রুম থেকে বের করে নিয়ে আসতে চেয়েছি। কিন্তু রেবেকা, নিনজা ও ফাল্গুনীসহ সবাই তাকে ঘেরাও করে ধরে যেন সে আসতে না পারে। সে মোবাইল নিতে গেলেও তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। এরা রাজনৈতিক দাপট দেখিয়ে প্রায়ই হলে অনেক সাধারণ শিক্ষার্থীদের হেনস্তা করে থাকে। এমনকি সিনিয়রদের সঙ্গে একের পর এক খারাপ আচরণ করেই যাচ্ছে তারা। কিন্তু এগুলোর প্রতিবাদ করার কেউ নেই। সাধারণ শিক্ষার্থীরা এদের কাছে এক প্রকার জিম্মি।
এ বিষয়ে অভিযোগকারী বলেন, এটা আমাদের রুমের অভ্যন্তরীণ ঘটনা। দুই ব্যাচ জুনিয়র উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের রেবেকা অন্য রুমের ৭-৮ জন মেয়ে নিয়ে এসে আমাকে শারীরিক-মানসিকভাবে লাঞ্ছিত ও মারধর করে। হল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেয়। তারা সবাই মিলে রাত সাড়ে ৮টা থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত আমার ওপর মানসিক নির্যাতন চালায়। নিনজা শিকদার নামে এক মেয়ে পুরো ঘটনা মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে। একপর্যায়ে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। শুধু তাই নয়, এই রেবেকার কর্মকাণ্ডে আমাদের অন্যান্য রুমমেটরাও শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্তার আশঙ্কার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
বিষয়টি সম্পর্কে নাজমুন নাহার স্বর্ণার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, বিষয়টি জানার পর আমি গিয়ে ওদের শান্ত করার চেষ্টা করি। কিন্তু ওই আপুকে মারধরের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। একপর্যায়ে আমি ওদের রুমে ম্যামকে রেখে নিচে চলে আসি। তারপর নাকি ওই আপু আমাদের ছাত্রলীগের মেয়েদের গায়ে হাত দেন।
ঘটনার সময় উপস্থিত হলের আবাসিক শিক্ষক মানসুরা বেগম বলেন, ঘটনাটি জেনে আমি সেখানে উপস্থিত হই। আমি যাওয়ার পরও তারা আক্রমণাত্মক আচরণ করছিল। ওই ছাত্রীকে তারা রুমের বাইরে যেতে ও ফোনটাও ধরতে দিচ্ছিল না। আমি সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হই। তারা আমার সামনেই আরও উত্তেজিত হয়ে যায়।
এ বিষয়ে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. দীপিকা রাণী সরকার বলেন, হলে বেশ কিছুদিন ধরে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। এ ধরনের নানান ঘটনায় আমি শঙ্কিত। অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা আলোচনায় বসেছি। তারপর দুপক্ষকে ডেকে বিষয়টি সমাধান করে দিয়েছি। পরবর্তীতে কেউ এ ধরনের কাজের সঙ্গে জড়িত হলে, তার সিট বাতিল হবে।