জাবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু: আটক রিকশাচালককে ফাঁসানোর অভিযোগ

জাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:০৪ পিএম

আটক রিকশাচালক আরজু মিয়া
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থী রাচির মৃত্যুর ঘটনায় আটক রিকশাচালক আরজু মিয়াকে নির্দোষ দাবি করেছে পরিবার। রাচির মৃত্যুর ঘটনায় রিকশাচালক জড়িত ছিলেন না, তাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ফাঁসিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তারা।
শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) এক সাক্ষাৎকারে আটক রিকশাচালক আরজু মিয়ার পরিবার এ অভিযোগ করেন।
আরজু মিয়ার মেয়ে আরজিনা আক্তার বলেন, তার বাবা একজন টেইলারিং কাটিং মাস্টার। এর পাশাপাশি তিনি পুরাতন অটোরিকশা কিনে সেটাকে রং এবং সংযোজন-বিয়োজন করে লাভে বিক্রি করেন। যেদিন জাবি শিক্ষার্থী রাচি রিকশার ধাক্কায় নিহত হন, সেদিন আমার বাবা সেখানে ছিলেন না।
আরজিনা বলেন, এ ঘটনার তদন্তে গত বছরের ২৩ নভেম্বর আনুমানিক দুপুর ১টার দিকে একজন ব্যক্তি আমার বাবাকে ফোন করে প্রক্টর অফিসে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে সব সাক্ষীদের সামনে আমার বাবাকে বিভিন্ন ধরনের জিজ্ঞাসাবাদ করে আনুমানিক বিকাল ৪টার দিকে বাবাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। একইদিন রাত ১০টার দিকে আমার বাবা এবং আমাদের ড্রাইভার রফিকুল একসঙ্গে বসে রাতের খাবার মুখে দেবে, সেই সময় আমাদের কিছু জিজ্ঞাসা না করে ১০-১৫ জন লোক আমাদের ঘরে ঢুকে এবং জিজ্ঞেস করে তোমাদের মধ্যে রফিকুল কে? তোমাকে ফোন দেই ফোন ধরো না কেন? তাদের প্রশ্নের জবাবে রফিকুল বলে, ‘স্যার আমার ফোনে কোনো কল আসেনি। আমি রফিকুল। আপনি চেক করতে পারেন আমার ফোন।’
আরজিনা বলেন, পরবর্তীতে তারা আবার সেই নম্বরে ফোন দিয়ে নিশ্চিত হয়, তারা যে মানুষকে খুঁজছেন আসলে এটা এই রফিকুল না। ওই নম্বরের রফিকুলের বাড়ি গোপালগঞ্জ। তারপর তারা আমাদের ঘরে কালো রঙের হুডি এবং কালোর মধ্যে লাল চেকের ট্রাউজার খোঁজার জন্য সব কাপড় এবং জিনিস ওলটপালট করে। কিন্তু তারা কোনো কিছুই পায়নি। আমার বাবা হুডি পরে না। একপর্যায়ে আমার বাবাকে দুর্ঘটনার দিন কোথায় ছিল, সেটা জানার জন্য ইসলামনগর বাজার সংলগ্ন (ইঞ্জিনিয়ারিং মার্কেট) কামরুলের দোকান এবং শাহাদাতের দোকানে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে নিয়ে যায়। কিন্তু তারা প্রথমে সেখানে না নিয়ে প্রক্টর অফিসে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের জিজ্ঞাসাবাদ করেন এবং পরবর্তীতে তারা ইসলামনগর বাজার সংলগ্ন ইঞ্জিনিয়ারিং মার্কেটে যান সত্যতা যাচাইয়ের জন্য।
আরজিনা জানান, ঘটনার সময় তার বাবা কামরুলের দোকানে বসে ছিলেন। সিসিটিভি ফুটেজও তারা দেখেন। কিন্তু সেই ফুটেজ তারা সঙ্গে করে মেমোরি কার্ডসহ নিয়ে আসে। ঘটনার সময় তার বাবা ক্যাম্পাসে ছিল না, এর সত্যতা জানার পর রাত আনুমানিক ৩টার দিকে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু পরদিন রাত ১১টার দিকে আরজিনার বাবার ফোনে একটা কল আসে। তিনি যার কাছে রিকশা বিক্রি করেছিলেন তাকে ও রিকশাটি দেখতে চাওয়ার কথা বলা হয়। পরে তার বাবা রিকশাসহ মালিককে ফোন করে ডেকে নিয়ে আসে।
আরজু মিয়া যে রিকশাটি বিক্রি করেছিলেন, সেটি দুর্ঘটনার ২ দিন আগে বিক্রি করা হয়। তবে সেই লোকটা হয়তো ভয়ে বলেছিলেন যে তিনি রিকশাটি দুর্ঘটনার ২ দিন পর কিনেছেন। আর ওই রিকশা বিক্রি করার কয়েকদিন পর রিকশার কাগজ করে দেওয়া হয়।
আরজিনা বলেন, আমরা জানি ২৪ নভেম্বর দিবাগত রাতে আমার বাবাকে রিকশা দেখানোর জন্য ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু পরবর্তীতে শুনি আমার বাবার নামে একটি মামলা হয়েছে। এমনকি তারপরের দিন সকালেই কোর্টে তোলা হয়েছে। এ মামলায় বলা হয়েছে, আসামির অটোরিকশায় আবুল হায়াত ও নাহিদ আলী নামের দুজন যাত্রী ছিলেন। এছাড়া ঝালমুড়ি বিক্রেতা রফিকুল ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী। আমরা ঝালমুড়ি বিক্রেতাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম আপনি কি সত্যি সেই দিন আরজু মিয়াকে দেখেছিলেন? তখন ঝালমুড়ি বিক্রেতা বলেছিলেন, ‘না আমি দেখিনি তবে আমাকেও ফাঁসানো হয়েছে সাক্ষী দেওয়ার জন্য’।
আরজু মিয়ার পরিবারের দাবি, যখন অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে তখন আনুমানিক সন্ধ্যা ৬টা ৫০ বাজে। অর্থাৎ সেই সময় অনেক অন্ধকার ছিল, যেহেতু তখন শীতকাল। রিকশাচালক লোকটা কালো হুডি পরা ছিল বলে তারা জেনেছেন। ক্যাম্পাসে লাইটিং ব্যবস্থাও তেমন ভালো ছিল না। আর দুর্ঘটনার পর রিকশা যদি দাঁড়াতো, তাহলে মেয়েটাকে নিয়ে হাসপাতালে যেত।
তার পরিবার প্রশ্ন রেখে বলেন, দুর্ঘটনার পর ওই ২ যাত্রী তখন কেন চালককে আটকালো না? আর তারা যদি ওই রিকশায় থাকতো তাহলে নিশ্চয়ই চালকের চেহারা স্পষ্টভাবে দেখেছে। তাহলে আগেই কেন আরজু মিয়াকে শনাক্ত করতে পারলো না? দুইবার যখন আরজু মিয়াকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন তাকে কেন শনাক্ত করতে পারলো না। কিন্তু যেদিন গ্রেফতার করা হলো সেদিন কিভাবে তাকে শনাক্ত করলো আর দোষী সাব্যস্ত করলো?
আটক রিকশাচালক আরজু মিয়ার স্ত্রী বলেন, আমার স্বামীকে অন্যায়ভাবে ফাঁসানো হয়েছে। আমরা প্রভাবশালী নই বলে আমাদের সঙ্গে যেভাবে ইচ্ছা ব্যবহার করা হচ্ছে। কয়েকবার ভিসি স্যারের দপ্তরে গিয়েছি। আমাদের সঙ্গে দেখা করেননি। একজনের কাছে গেলে আরেকজনের কাছে যেতে বলে। এভাবে গত তিনমাসে অনেক দপ্তর ঘুরেছি। আমার স্বামী খুবই অসুস্থ। আমি তার মুক্তি চাই। আমাদের সঙ্গে হওয়া অন্যায়ের বিচার চাই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, এ ঘটনার ব্যাপারে কথা বলতে হলে রোববার দুপুরের দিকে প্রক্টর অফিসে আসতে হবে।