পাঠ্যবইয়ে ‘আদিবাসী’ শব্দ সম্বলিত গ্রাফিতি বাতিলের প্রতিবাদে রাবিতে বিক্ষোভ
রাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪:০৭ এএম
পাঠ্যপুস্তকে ‘আদিবাসী’ শব্দ সম্বলিত গ্রাফিতি বাতিল করার প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘আদিবাসী’ শিক্ষার্থীরা। বুধবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে ‘রাবি ও রুয়েট আদিবাসী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। ক্যাম্পাসের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে মিছিলটি শেষ হয়। মিছিল থেকে তারা জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ভবনের সামনে আদিবাসী ছাত্রজনতার ওপর হওয়া হামলার প্রতিবাদ জানান।
মানববন্ধন থেকে তারা আরও কয়েকটি দাবি জানান। তাদের দাবিগুলো হলো- নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি বইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে ‘আদিবাসী’ শব্দ থাকা গ্রাফিতি পুনর্বহাল করা, আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি নিশ্চিত করা, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করা ও সমতল আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করতে হবে।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি চাই’, ‘আমার আত্ম পরিচয় নির্ধারণ করে দেওয়ার তুমি কে’, ‘বিচ্ছিন্নবাদী বলার আগে রাষ্ট্র কাঠামোতে সম্পৃক্ত করুন’, ‘পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হবে’, ‘বৈষম্যহীন বাংলাদেশে বৈষম্য কেন’, ‘আদিবাসীদের ভূমি অধিকার ফিরিয়ে দাও’, ‘উন্নয়নের নামে উচ্ছেদ অপচেষ্টা বন্ধ কর’, ‘পাহাড় কিংবা সমতলে লড়াই হবে সমানতালে’, ‘আমরা নই উপজাতি, আমরা সবাই আদিবাসী’, ‘আদিবাসী গ্রাফিতি বাতিল কেন, রাষ্ট্র তোমার জবাব চাই’ প্রভৃতি লেখা সম্বলিত প্লেকার্ড প্রদর্শন ও সোগ্লান দেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, তারা বৈচিত্র্যময় ও বহুমার্তৃক বাংলাদেশ চান। বাংলাদেশ থেকে তারা বিচ্ছিন্ন হতে চান না। তাদের ‘আদিবাসীদের’ নিজস্ব সংস্কৃতি ও স্বত্ত্বা রয়েছে। তারা সেটির স্বীকৃতি চান। যখনই তারা স্বীকৃতি চায়, তখনই তাদের অবহেলিত ও লাঞ্ছিত করা হয়। এই নতুন বৈষম্যহীন বাংলাদেশে আর বৈষম্য চলতে পারে না।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জুস্মিতা সরেন বলেন, ‘পাঠ্যপুস্তকে ‘আদিবাসী’ শব্দ সম্বলিত গ্রাফিতি বাতিলের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সেইসঙ্গে পাঠ্যপুস্তকে আদিবাসীদের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার জন্য আজকে আমরা এখানে উপস্থিত হয়েছি। স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টি নামে একটি উগ্রবাদী সংগঠনের দাবির প্রেক্ষিতে গ্রাফিতি বাতিল করা হয়েছে, যা হাস্যকর। একটা উগ্র জনগোষ্ঠীর দাবির কারণে আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে বাদ দিতে পারে, সেই রাষ্ট্র থেকে আমরা কী আশা করব? এজন্য আমরা সত্যিই হতাশ। বর্তমান বৈষম্যহীন বাংলাদেশেও কেন বৈষম্য তৈরি করা হচ্ছে, সেটি আমার বোধগম্য নয়।’
মানববন্ধনটি সঞ্চালনা করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ রাজশাহী মহানগর শাখা সভাপতি বিজয় চাকমা। এ সময় বক্তব্য দেন আদিবাসী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অনিল গজার ও সাধারণ সম্পাদক শীত কুমার উরাঁও, ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী মং ই সিং মারমা, আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী তন্ময় তঞ্চঙ্গা, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বিনয় কুমার চাকমা প্রমুখ। মানববন্ধনে দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।