মানববন্ধন করলেন সন্তান হারানো সেই চবি শিক্ষক

চবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৫:৫৭ পিএম

বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার বেহালদশা ও অবনতি প্রসঙ্গে সংস্কার প্রস্তাব দিয়ে এবার মানববন্ধন করেছেন সন্তান হারানো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষক আবু বকর ছিদ্দিক।
মঙ্গলবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে চবির শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে ‘ভুক্তভোগী পরিবারবৃন্দ’র ব্যানারে তিনি এ মানববন্ধন করেন। এতে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
এর আগে গত ১৯ ডিসেম্বর এভারকেয়ার হাসপাতালে গর্ভাবস্থায় ওই শিক্ষকের সন্তান মারা যান। এতে তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতির অভিযোগ এনে ২৩ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলন করেন।
মানববন্ধনে ভুক্তভোগী বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবু বকর ছিদ্দিক বলেন, আমাদের দেশে এক শিক্ষকের ক্যানসার হয়েছে বলে কেমোথেরাপি দেওয়া শুরু করেন। পরে তিনি দেশের বাহিরে গেলে দেখা যায় তার কোনো ক্যানসার হয়নি। এই হলো বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা! বাংলাদেশের চিকিৎসকরা দুই ধরনের, একজন সত্যিকারের ডাক্তার অন্যজন কসাই।
মানববন্ধনে প্রতিবাদস্বরূপ কুমার বিশ্বজিৎয়ের ‘ও ডাক্তার’ গান পরিবেশন করেন এক শিক্ষার্থী।
এসময় চিকিৎসা ব্যবস্থার সংস্কারে যেসব প্রস্তাব করেন তা হলো-
১. সরকারিভাবে চিকিৎসা ব্যবস্থাকে অব্যবসায়িক ও সেবামূলক পেশা হিসেবে ঘোষণা করতে হবে।
২. দেশের সুনাগরিকদের মাধ্যমে হাসপাতাল মনিটরিং বোর্ড গঠন করতে হবে। তারা যেকোনো হাসপাতালে, যেকোনো রোগীর ব্যবস্থাপনা যাচাই করার অধিকার পাবেন এবং ডাক্তার তাদের কাছে রোগীর ব্যবস্থাপত্রের ব্যাখ্যা দিতে বাধ্য থাকবেন।
৩. প্র্যাকটিসরত ডাক্তাররা অন্য পেশায় জড়িত হতে পারবেন না। যেমন: সাহিত্যচর্চা, রাজনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রভৃতি। এর ব্যত্যয় হলে ডাক্তারের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে।
৪. এমবিবিএস পাস ও ইন্টার্নি করার পর প্র্যাকটিস ইচ্ছুক ডাক্তারদের ইউজিসির তত্ত্বাবধানে একটি প্র্যাকটিস নিবন্ধন পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হবে। এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে ওই ডাক্তার রোগী দেখতে পারবেন।
৫. কোনো ডাক্তার দুই বছর প্র্যাকটিস থেকে দূরে থাকলে তার প্র্যাকটিস নিবন্ধন বাতিল করতে হবে। তাকে পুনরায় প্র্যাকটিস নিবন্ধন পরীক্ষায় পাস করে রোগী দেখার কাজ করতে হবে।
৬. প্র্যাকটিস নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর ডাক্তারদের সম্পত্তির বিবরণ সরকারের কাছে দাখিল করতে হবে। প্র্যাকটিসরত ডাক্তাররা ওয়েবসাইট প্রোফাইলে ডিগ্রির পাশাপাশি সম্পত্তির বিবরণও উল্লেখ করবেন।
৭. একজন রোগীর জন্য কমপক্ষে ১০ মিনিট সময় বরাদ্দ রাখতে হবে।
৮. কোনো রোগী তাকে দেওয়া টেস্টসমূহের কারণ জানতে চাইলে ডাক্তার ব্যাখ্যা করতে বাধ্য থাকবেন।
৯. হাসপাতালে রাজনৈতিক নেতাদের দৌরাত্ম বন্ধ করতে হবে।
১০. মেডিকেলে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে সেবার মানসিকতা সম্পন্ন ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাধান্য দিতে হবে।
১১. প্রত্যেক সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরকারি বরাদ্দের হিসেব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে।
১২. সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ব্যবহৃত সকল চিকিৎসা সরঞ্জাম সব সময় আপডেট থাকতে হবে। হাসপাতালের যন্ত্রপাতি নষ্ট করে বাইরে টেস্ট করানোর জন্য বাধ্য করা হলে এটি কর্তৃপক্ষের ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
১৩. যারা ডাক্তারের ভুলে পঙ্গু, অন্ধ কিংবা উপার্জনে অক্ষম হয়ে পড়েছেন, প্রমাণ সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে ওই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির আর্থিক দায়ভার বহন করতে হবে। ভবিষ্যতে এই নিয়ম বহাল রাখতে হবে।