সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবি হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেছেন, বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেছেন- আল্লাহর নবি আদম (আ.) তার বংশধর হযরত দাউদকে (আ.) ৪০ বছর হায়াত দিয়ে ভুলে গিয়েছিলেন। যে কারণে আমরাও পড়ালেখা করে, কাউকে ওয়াদা দিয়ে বা কোনো কাজ করে ভুলে যাই। এই হাদিসটি তিরমিযী শরীফে বর্ণনা করা হয়েছে।
তবে একবার করা কাজ বা মুখস্ত করা পড়া ভুলে গেলে তা যাতে সহজে স্মরণ হয় সেজন্য মহানবি (সা.) কানের উপর কলম রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। এতে করে হয়তো ভুলে যাওয়া বিষয়টি মনে পড়ে যেতে পারে। এই হাদিসটি যায়েদ ইবনে সাবিত (রা.) থেকে বর্ণিত।
আমাদের জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য আল্লাহ তাআলা সুন্দর একটি দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন; ‘রব্বি জিদনি ইলমা’ এটি সূরা ত্বাহার ১১৪নং আয়াত। এর অর্থ- হে আমার প্রতিপালক, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন।
যাই হোক আজ আমরা জানব কোন সহজ উপায় বা কৌশল অবলম্বন করলে সহজেই পড়া মনে রাখা সম্ভব।
১. মস্তিষ্কের জন্য উপকারী খাদ্য গ্রহণ
পরিমিত ও সুষম খাদ্য গ্রহণ আমাদের মস্তিষ্কের সুস্বাস্থ্যের জন্য একান্ত আবশ্যক। অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ আমাদের ঘুম বাড়িয়ে দেয়, যা আমাদের অলস করে তোলে। ফলে আমরা জ্ঞানার্জন থেকে বিমুখ হয়ে পড়ি। তাছাড়া কিছু কিছু খাবার আছে যেগুলো আমাদের মস্তিষ্কের জন্য খুবই উপকারী।
সম্প্রতি ফ্রান্সের এক গবেষণায় দেখা গেছে যয়তুনের তেল স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে। স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির জন্য ইমাম আয-যুহরি মধু খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, ‘তোমাদের মধু পান করা উচিত কারণ এটি স্মৃতির জন্য উপকারী। আর যে ব্যক্তি হাদিস মুখস্থ করতে চায়, তার উচিত কিসমিস খাওয়া।’
২. পরিমিত পরিমাণে বিশ্রাম নেওয়া
আমরা যখন ঘুমাই তখন আমাদের মস্তিষ্ক অফিসের মতো কাজ করে। এটি তখন সারাদিনের সংগৃহীত তথ্যসমূহ প্রক্রিয়াজাত করে। তাছাড়া ঘুম মস্তিষ্ক কোষের পুনর্গঠন ও ক্লান্তি দূর করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে অতিরিক্ত ঘুম আর গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকার অভ্যাস দূর করতে হবে।
৩. বারবার পড়া
আমরা সবাই এ ব্যাপারে একমত যে, কোনো একটি বিষয়ে যতো বেশিবার পড়া হয় তা আমাদের মস্তিষ্কে ততো দৃঢ়ভাবে জমা হয়।
৪. অন্যকে শেখানো
অন্যকে শেখালে নিজের জানা বিষয়টি মস্তিষ্কে দৃঢ়ভাবে জমা হয়। কাজেই মনে রাখার উত্তম উপায় হলো তা অন্যকে শেখানো। এজন্য আমাদের একই বিষয় বারবার ও বিভিন্ন উৎস থেকে পড়তে হয়।
৫. হাল ছেড়ে দেওয়া যাবে না
কোনো পড়া মুখস্থ করা কষ্টসাধ্য হলেও হাল ছেড়ে না দিয়ে বারবার চেষ্টা করে যাওয়া এবং আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করা।
৬. নিয়মিত পড়া
প্রতিদিন সময় নির্ধারণ করে পড়ার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। সময় নির্ধারিত থাকলে পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
৭. পঠিত বিষয়ে বারবার প্রশ্ন করা
কোনো একটি অধ্যায় পড়ার পরে, সে সম্পর্কে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলে মস্তিষ্কে দৃঢ়ভাবে জমা হবে।
৮. জোরে জোরে পড়া
একটু আওয়াজ করে পড়লে বাহিরের আওয়াজ আর কানে আসবে না। সেক্ষেত্রে পঠিত বিষয়টি দ্রুত মুখস্ত হবে। এতে উচ্চারণও সঠিক হবে।
৯. পঠিত বিষয়টি বারবার পড়া
পাঠ করা বিষয়টি বারবার পড়লে তা মস্তিষ্কে দৃঢ়ভাগে গেঁথে যাবে। তাহলে ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
১০. কল্পনা করতে শেখা
শিক্ষার্থীদের কল্পনা করতে শেখাতে হবে। এটি বাস্তব বিবরণ মনে রাখার ক্ষেত্রে খুবই সহায়ক হতে পারে।
সর্বোপরি কথা হলো স্মৃতিশক্তি ধরে রাখতে হলে পাপ থেকে দূরে থাকতে হবে। মালিক ইবনে আনাস বলেছেন- স্মৃতিকে শক্তিশালী করতে হলে পাপ করা ছেড়ে দিতে হবে। কারণ পাপ উদ্বেগ ও দুঃখের দিকে ধাবিত করে। এতে অনুভূতি নষ্ট হয়ে যায়।