সাফল্য ধরে রেখেছে রাজউক কলেজ, শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস
উত্তরা পশ্চিম (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:১৫ পিএম
এইচএসসি পরীক্ষায় সাফল্য ধরে রেখেছে রাজধানীর রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের প্রায় শতভাগ পরীক্ষার্থীই উত্তীর্ণ হয়েছে। এতে আনন্দ-উদ্দীপনায় মেতে উঠতে দেখা গেছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী-অভিভাবক ও শিক্ষকদের।
মঙ্গলবার দুপুরে উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, এইচএসসি পাশের আনন্দে শিক্ষার্থীরা একে-অপরকে জড়িয়ে ধরছে। সন্তানরা ভালো ফলাফল করায় অভিভাবকরাও হাসিমাখা মুখে একে-অপরের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন।
পরীক্ষায় ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে অংশগ্রহণ করে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী শাফায়াত নিজ অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে যুগান্তরকে জানায়, এবারের পরীক্ষা অনেকটা চ্যালেঞ্জের ছিল। আন্দোলন-বন্যার মতো পরিস্থিতির মধ্যে পড়াশোনা নিয়ে খুব চিন্তিত ছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ এখন রেজাল্ট পেয়ে খুব ভালো লাগছে।
বিজ্ঞান বিভাগের এইচএসসি উত্তীর্ণ ছাত্রী ফাইজা জানায়, সব বিষয়ের পরীক্ষা না হওয়ায় রেজাল্ট নিয়ে খুব চিন্তায় ছিলাম। রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারিনি। রেজাল্ট ভালো হওয়ায় এখন খুব ভালো লাগছে।
অনুভূতি জানতে চাইলে বুশরা ইসলাম নামের অপর এক ছাত্রী জানায়, আলহামদুলিল্লাহ আমি জিপিএ-৫ পেয়েছি। আমার এই কৃতিত্বের পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান আমার মায়ের। মায়ের অনুপ্রেরণায় এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি। ভবিষ্যতে আমি ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করতে চাই।
এদিকে ভালো ফলাফল করে এইচএসসি উত্তীর্ণ হলেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বন্ধু-সহপাঠীদের হারানোয় ব্যথিত শিক্ষার্থীদের অনেকেই।
এ বিষয়ে আফতাব নামের এক ছাত্র জানায়, আন্দোলনের সময় আমি একদিন গ্রেফতার ছিলাম। আমার অনেক বন্ধু এখনো অসুস্থ অবস্থায় বিছানায় পড়ে আছে। সেই সময় চোখের সামনে রক্তাক্ত অবস্থায় অনেককে পড়ে থাকতে দেখেছি। তারাও তো আমার মতো ছাত্র ছিল। এখন পরীক্ষায় পাশ করলেও সেই বন্ধুদের জন্য খারাপ লাগছে।
ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ছাত্র শাফায়াত জানায়, পরীক্ষার মতো এবারের রেজাল্টও আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জের। কারণ আন্দোলনের কারণে সবকিছুই অনিশ্চিত মনে হচ্ছিল। আমাদের অনেক বন্ধুই আন্দোলনে শহীদ হয়েছে। আমি পাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন দেখছি কিন্তু তারা কেউ কেউ এখন কবরে। এটা ভেবে কষ্ট হয়।
অপরদিকে এইচএসসি পরীক্ষা ঘিরে নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থাকলেও শেষপর্যন্ত সন্তানদের ফলাফল ভালো হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা।
সন্তান উত্তীর্ণ হওয়ায় অনুভূতি জানাতে গিয়ে মা লিপি বেগম বলেন, আমার ছেলে জিপিএ-৫ পেয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ এটা অনেক বড় পাওয়া। পরীক্ষার সময়গুলোতে আন্দোলন চলায় তখন খুব উদ্বিগ্ন ছিলাম। তবে ফলাফল ভালো হওয়ায় আমি খুশি।
আয়েশা হীরা নামের অপর এক অভিভাবক বলেন, মেয়ে পাশ করেছে এটাই আমার জন্য সবচেয়ে বড় খুশি। আমি চাই ও ভালো মানুষ হোক। আমার মেয়েকে আমি ডাক্তার বানাতে চাই। যাতে মানুষের সেবা করতে পারে।
এদিকে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ কর্তৃপক্ষ জানায়, এ বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ১ হাজার ৬৭৪ শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থী ভালো ফলাফল পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। এদের মধ্যে জিপিএ-৫ অর্জন করেছে ১ হাজার ৪৭৯ জন শিক্ষার্থী। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অংশ নেওয়া ১ হাজার ১১৮ জন শিক্ষার্থীর সবাই পাশ করেছে। এছাড়া ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ৪২৩ এবং মানবিক বিভাগ থেকে অংশ নেওয়া ১৩২ জনের সবাই কৃতকার্য হয়।
দুপুরে কলেজ প্রাঙ্গণে এইচএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে উপদেশ দিতে গিয়ে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের অধ্যক্ষ এএসএম বাহাউদ্দিন বলেন, সামনে তোমাদের আরও বড় ধাপ রয়েছে। যেখানেও সুযোগ পাও আশা করি তোমরা ভালো করবে। এ সময় তিনি শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকমণ্ডলীকে বিশেষ ধন্যবাদ জানান।