পিপলস্ ইউনিভার্সিটি
ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানকে আজীবন অবাঞ্ছিত ঘোষণার দাবি
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৫ পিএম
ফ্যাসিস্ট, স্বার্থান্বেষী, দুর্নীতিবাজ ও ব্যর্থ বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম মোল্লাকে আজীবন অবাঞ্ছিত ঘোষণা এবং বোর্ড অব ট্রাস্টিজের নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠনের দাবি জানিয়েছে পিপলস্ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা।
শনিবার পিপলস্ ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের সামনে এক মানববন্ধন থেকে এ দাবি জানায় বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা।
সেই সঙ্গে, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠিত না হলে, ১ অক্টোবর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা করা হবে বলেও আলটিমেটাম দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
তারা জানান, দি পিপলস্ ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ট্রাস্টি বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম মোল্লা ২০১৩ সালের ১৬ মার্চ অনুষ্ঠিত সর্বশেষ ট্রাস্টি বোর্ডের এজিএম-এ চেয়ারম্যান পদে বহাল হন, যার মেয়াদ ছিল দুই বছর। এর পর থেকে অদ্যাবধি তিনি আর কোনো এজিএম করেননি। অবৈধভাবে গত ১১ বছর যাবত চেয়ারম্যান পদ দখল করে আছেন।
তিনি বোর্ডের মৃত সদস্যদের বৈধ উত্তরাধিকারীদের অবৈধভাবে অপসারণ করে নিজের লোকদের (যেমন- তার দুই মেয়ে ও বোর্ডের আরেক দুর্নীতিবাজ বিতাড়িত সদস্য সচিব শামীমা নাসরিন শাহেদের মেয়ে) বোর্ডের সদস্য করেছেন। বোর্ড মিটিং ছাড়াই বোর্ড অব ট্রাস্টিজের কমিটি পূণর্গঠনের জন্য প্রস্তাবিত সদস্যদের নাম পাঠিয়েছেন, যা পুরোপুরি অনৈতিক এবং অবৈধ।
সিরাজুল ইসলাম মোল্লা বিগত ১১ বছর ধরে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান থাকাকালীন বিশ্ববিদ্যালয় অবকাঠামোর উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নয়ন করেননি। এমনকি তিনি এই ১১ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সমাবর্তন পর্যন্তও আয়োজন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। অথচ সমাবর্তনের আশ্বাস দিয়ে তিনি সাবেক ছাত্রদের কাছ থেকে মাথাপিছু ১০,০০০ (দশ হাজার) টাকা করে নিয়েছেন।
তার চেয়ারম্যান থাকাকালীন বছরগুলোর বেশিরভাগই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগকৃত উপাচার্য ছিলেন না। এছাড়া উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারের মতো অপরিহার্য রাষ্ট্রপতি প্রদত্ত দুটি পদ তিনি এ বছরগুলোতে খালি রেখেছেন। ফলে প্রশাসনিক বেশিরভাগ কাজই বিশ্ববিদ্যালয় সঠিকভাবে সম্পাদন করতে পারেনি।
উপরোন্তু, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও অধঃপতন ঘটানোর নিরিখে এবং ব্যক্তিগত রাজনৈতিক স্বার্থ দ্বারা প্রলুদ্ধ হয়ে, ছাত্র-শিক্ষক কাউকে কোনো প্রকার অবগত না করে, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস রাজধানী ঢাকা থেকে নরসিংদীর সৃষ্টিগড়ের মতো একটি অনুন্নত এবং দুর্গম অঞ্চলে ইতোমধ্যেই স্থানান্তর করেছেন। যার জন্য বর্তমানে সরকারি আদেশে অধিকাংশ জায়গা অধিগ্রহণ হয়ে গেছে, এমন একটি ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের স্থানান্তর করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
বিগত ৬ মাসে শিক্ষার্থীরা বারংবার অনুরোধ এবং আহ্বান করার পরও তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসে ছাত্রছাত্রীদের কোনো প্রকার কথা বা দাবি শোনেননি; বরং টেলিফোনে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে নানা স্থানে বিভিন্ন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন অসাধু প্রলোভন ও নানাবিধ হুমকি দিয়ে আসছেন।
এছাড়া চলতি বছরের ১৯ আগস্ট তিনি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের চাপে নির্বাহী আদেশক্রমে দি পিপলস্ ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপদেষ্টা এবং ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সচিব প্রফেসর ড. শামীমা নাসরিন শাহেদকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন। কথা ছিল যে, ট্রাস্টি বোর্ডের মিটিং ডেকে তিনি এ অব্যাহতির বিষয়টি দাপ্তরিকভাবে অবহিত করবেন। কিন্তু বরাবরের মতোই তিনি কথা রাখেননি।
শুধু তাই নয়, অব্যাহতির পরও শামীমা নাসরিন শাহেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের আভ্যন্তরীণ বিভিন্ন বিষয়ে অযাচিত এবং নেতিবাচক ভূমিকা রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি শামীমা নাসরিন শাহেদ জনৈক সন্ত্রাসীকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পাঠিয়ে দায়িত্বরত রেজিস্ট্রারকে হুমকি দিয়েছেন। যার বিপক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোহাম্মদপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করতে বাধ্য হয়েছেন।
এসব অপকর্মের পরিপ্রেক্ষিতে দি পিপলস্ ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের সব সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে দুই দফা দাবির ঘোষণা দেওয়া হয়। সেগুলো হলো-
১) দি পিপলস্ ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের স্থায়ী ক্যাম্পাস ঢাকা থেকে নরসিংদী বা অন্য কোথাও স্থানান্তর হবে না।
২) দি পিপলস্ ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ট্রাস্টি বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম মোল্লাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন অবাঞ্ছিত ঘোষণা করতে হবে। আর এ ঘোষণার পর থেকে সিরাজুল ইসলাম মোল্লার স্বাক্ষরে দি পিপলস্ ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের কোনো প্রকার কার্যক্রম চলবে না এবং তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ক্যাম্পাস বা দপ্তরে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
এছাড়া ছাত্রদের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়েছে, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের সভা আহবান করে নতুন ও যোগ্য বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ গঠন করতে হবে এবং সেই পর্ষদে ছাত্রসমাজের প্রতিনিধি থাকতে হবে।
উপরোক্ত বিষয়ে দি পিপলস্ ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ-এর সব ট্রাস্টি বোর্ড সদস্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে শিক্ষার্থীরা তাদের ন্যায্য দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে ও সমর্থন জানিয়ে সব সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান প্রদান এবং ঢাকার কাছাকাছি স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের বিষয়ে দ্রুততম পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।