রাবির দুই শিক্ষিকার অব্যাহতি দাবি শিক্ষার্থীদের
রাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:০৭ পিএম
সহকর্মীকে যৌন হয়রানির দায়ে অব্যাহতি পাওয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এনামুল হককে একাডেমিক কার্যক্রমে ফিরিয়ে আনা ও বিভাগের দুই শিক্ষিকার অব্যহতিসহ ৫ দফা দাবি জানিয়েছেন বিভাগের শিক্ষার্থীদের একাংশ।
এদিকে যৌন হয়রানির সেই অভিযোগপত্র প্রত্যাহার করতে এনামুল হক আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দিয়ে অবরুদ্ধ করে চাপপ্রয়োগ করেছেন বলেও অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী নারী শিক্ষক (যৌন হয়রানির শিকার)। এ ঘটনার পর নিরাপত্তা চেয়ে গত রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন ওই নারী শিক্ষক।
অন্যদিকে ভুক্তভোগী নারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে নম্বর টেম্পারিং, শিক্ষার্থীদের বখাটে ও বহিরাগত বলা এবং বিভাগের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মাহবুবা কানিজ কেয়ার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার, আক্রমণাত্মক আচরণ ও ক্লাস ফাঁকিসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে তাদের বিভাগ থেকে অব্যাহতির দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
বুধবার বিভাগের সভাপতি বরাবর দুটি পৃথক অভিযোগপত্রের মাধ্যমে তারা এ দাবি জানান।
বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত ৮ সেপ্টেম্বর থেকে অধ্যাপক এনামুল হককে একাডেমিক কার্যক্রমে ফেরানোসহ বিভাগ সংস্কারের জন্য ১২ দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। এরই ধারবাহিকতায় বুধবারও বিভাগের সামনে আন্দোলন করেন তারা। তবে আজকে তাদের দাবি ছিল ৫ দফা; যার মধ্যে চতুর্থ দাবি ছিল দুই কার্যদিবসের মধ্যে অধ্যাপক এনামুল হককে একাডেমিক কার্যক্রমে ফিরিয়ে আনতে হবে।
তাদের অন্য দাবিগুলো হলো- কোনো শিক্ষক কর্তৃক কোনো শিক্ষার্থীকে হুমকি দেওয়া যাবে না এবং ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে ফলাফল ট্যাম্পারিং করা যাবে না। শিক্ষকদের মধ্যে দলাদলি বা রেষারেষি বন্ধ করতে হবে। অধ্যাপক নাজমা আফরোজ ও অধ্যাপক মাহবুবা কানিজ কেয়াকে অব্যাহতি দিতে হবে এবং বিভাগের সকল শিক্ষা কার্যক্রম রুটিন মাফিক পরিচালনা করবেন এই মর্মে বিভাগের সব শিক্ষককে লিখিত দিতে হবে।
দাবির বিষয়ে বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ইমরান হাসান রাকেশ বলেন, অধ্যাপক মাহবুবা কানিজ কেয়া বরাবর রাজনৈতিক ও তার সংগঠন মহিলা পরিষদের ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। তার সঙ্গে কারো মতানৈক্য হলে তার নারী সংগঠনকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন জনের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়কের অভিযোগ দিয়ে দমিয়ে রাখতেন। অধ্যাপক নাজমা আফরোজ শিক্ষার্থীদের বখাটে ও বহিরাগত বলে আখ্যায়িত করেছেন, রেজাল্ট টেম্পারিং, ব্যবহারিক পরীক্ষায় স্বেচ্ছাচারিতা দেখানোর হুমকি প্রদান করেছেন। তিনি আমাদের আন্দোলন শেষ হওয়ার পরে দেখে নেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন।
তবে ভুক্তভোগী নারী শিক্ষকের দাবি, অধ্যাপক এনামুল তার অনুগত শিক্ষার্থীদের দিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে যৌন হয়রানির অভিযোগপত্র প্রত্যাহারের জন্য চাপ সৃষ্টি করেছেন। অভিযোগপত্র প্রত্যাহারের জন্য আমার কাছ থেকে জোর করে স্বাক্ষর নেওয়ার চেষ্টাও করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ তুলে আমাকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করছেন।
এ বিষয়ে ওই নারী শিক্ষক বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এনেছে তা সম্পূর্ণ বানোয়াট। অধ্যাপক এনামুল হককে যৌন হয়রানির ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট শাস্তি দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের দিয়ে অবরুদ্ধ করে অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য আমাকে চাপ প্রয়োগ করে স্বাক্ষর নিতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি স্বাক্ষর করিনি। তিনি অপরাধী, আমি কেন অভিযোগ তুলে নেব? আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি বিধায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও থানায় অভিযোগপত্র জমা দিয়েছি।
দেশের বাইরে অবস্থান করায় বিভাগের সাবেক সভাপতি মাহবুবা কানিজ কেয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
অভিযোগের বিষয়ে অধ্যাপক এনামুল হক বলেন, আমার সঙ্গে বিভাগের কোনো সম্পর্ক নেই। আমি যেহেতু ক্লাশ পরীক্ষা নেই না, তাই বিভাগেও খুব কম যাই। ছাত্রদের সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ নেই। আমার মানহানি করার জন্যই এখানে আমাকে নিয়ে টানাহেঁচড়া করছে। তবে শিক্ষার্থীরা যেহেতু আমার ক্লাস করেছেন সেদিক থেকে হয়তো তাদের এসব দাবির সঙ্গে আমাকে বিভাগের ফেরানো দাবিও তারা যুক্ত করেছেন।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, মনোবিজ্ঞান বিভাগে একধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এভাবে চলতে পারে না। এটি নিয়ে আমরা কাজ করছি। খুব দ্রুতই আমরা সবাইকে নিয়ে বসে একটা সমাধানে আসার চেষ্টা করব।
অধ্যাপক এনামুল হককে একাডেমিক কার্যক্রমে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে তিনি বলেন, যেহেতু তিনি সিন্ডিকেট থেকে শাস্তিপ্রাপ্ত তাই এ বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ২১ মে অধ্যাপক এনামুল হকের বিরুদ্ধে সহকর্মীর প্রতি অশালীন অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন ও যৌন হয়রানিমূলক আচরণের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় উপাচার্য বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী নারী শিক্ষক। পরে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় ৫২৫তম সিন্ডিকেট সভায় অধ্যাপক ড. এনামুল হককে দুই বছরের জন্য একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।