Logo
Logo
×

শিক্ষাঙ্গন

জাবিতে জলাশয় ভরাট করে ভবন নির্মাণ বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন

Icon

জাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৩ আগস্ট ২০২৪, ০৮:৪৭ পিএম

জাবিতে জলাশয় ভরাট করে ভবন নির্মাণ বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন

জলাশয় ভরাট করে ভবন নির্মাণ ও অতিথি পাখির আশ্রয়স্থলে বহুতল ভবন নির্মাণ বন্ধের দাবিতে ‘পরিবেশ ফোরামের’ ব্যানারে মানববন্ধন করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার দুপুর ১২টার বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনার সংলগ্ন সড়কে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন শেষে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (রুটিন দায়িত্ব পালনরত) এবং গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের ডিন বরাবর স্মারকলিপি জমা দেন।

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে জলাশয় ভরাট করে গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন এবং অতিথি পাখির ‘মেইন বার্ডস’ লেক আশ্রয়স্থলে চারুকলা অনুষদের ছয়তলা বিশিষ্ট বহুতল ভবন এবং কলা ও মানবিক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন নির্মাণের কার্যক্রম শুরু করেছে প্রশাসন। এ অপরিকল্পিত স্থাপনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ, জীববৈচিত্র্যের ও পরিযায়ী পাখির জন্য হুমকি বলে উল্লেখ করা হয়। দ্রুততম সময়ে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের মাধ্যমে পরিকল্পিত ভবন নির্মাণে আহ্বান করা হয়েছে।

মানববন্ধনে পরিবেশ বিজ্ঞানের স্নাতকোত্তর শ্রেণীর শিক্ষার্থী মো. আব্দুল্লাহ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভবন নির্মাণের এ পদক্ষেপ শুধুমাত্র পরিবেশগত ঝুঁকি সৃষ্টি করে না, এটা পুরো অঞ্চলটির বাস্তুতন্ত্রের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। জলাশয়গুলো ভরাট করলে বৃষ্টির পানি জমে থাকার মতো প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়, যা পরবর্তীতে বন্যা, খরা এবং ভূমিক্ষয়ের মতো দুর্যোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। এছাড়াও জলাশয়ে বসবাসকারী প্রাণী এবং উদ্ভিদকুলের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ে, যার ফলে জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

তিনি আরও বলেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যর জন্য আমাদের ক্যাম্পাস সকলের কাছে পরিচিত। শীতের শুরুতে প্রতিবছরই আমাদের ক্যাম্পাসে পরিযায়ী পাখি আসে তবে বিগত কয়েক বছরে তার পরিমাণ অনেক কমেছে। আমরা চাই ভবন নির্মাণ হোক তবে সেটা অবশ্যই পরিবেশবান্ধব।

রসায়ন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রাকিবুল হাসান বলেন, জলাশয় ভরাট করে ভবন এবং পরিযায়ী পাখির আবাসস্থলে বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ বন্ধ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ-প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে কোনো কাজই করা হবে না। একটি মাস্টারপ্ল্যান করে পরিকল্পিতভাবে ভবন নির্মাণ করতে হবে। বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের ক্লাস রুম সংকট রয়েছে, আমরা তাদের ক্লাস রুম চাই, তাদের জন্য ভবন চাই তবে সেটা অবশ্যই মাস্টারপ্ল্যানের আওতায়।

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো.এনামউল্যা বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সব সময় তার জীববৈচিত্র্য ও সৌন্দর্যকে সংরক্ষণ করে কিন্তু অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের নামে আনা টাকাগুলা হজম করার জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা ধরনের অপরিকল্পিত স্থাপনা তৈরি করে যা জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করেছে। বর্তমানে লেক ভরাট করে যে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে সেটি সর্বপ্রথম ভিন্ন জায়গায় হওয়ার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিলেও পরে প্রভাবশালী শিক্ষকদের নেতৃত্বে জলাশয়ের ওপর নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। স্বল্পবৃষ্টিতেই মুক্তমঞ্চ সংলগ্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় এবং শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। 

পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আমির হোসেন ভূঁইয়া বলেন, প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সৌন্দর্যকে কেন্দ্র করে এই জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছিল যাতে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ার জন্য একটি সুন্দর পরিবেশ পায়। এখানে বেশ কয়েকটি লেক ছিল কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সেই লেকগুলোকে ভরাট করার পরিকল্পনা করে স্থাপনা তৈরি হচ্ছে। অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পে প্রশাসন তাদের খেয়াল খুশি মত যত্রতত্র ভবন নির্মাণ করেছে। 

জলাশয়ে ভবন নির্মাণের বিষয়ে গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. আবদুর রব বলেন, স্থাপনা তৈরির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো মাস্টারপ্ল্যান ছিল না। মাস্টারপ্ল্যানের মাধ্যমেই কাজ হওয়া উচিত। যেহেতু আমাদের উপাচার্য পদত্যাগ করেছেন, নতুন উপাচার্য না আসা পর্যন্ত আমরা পরামর্শ করতে পারছি না। তবে আমরা এর একটি সমাধান বের করার চেষ্টা করব।

এ সময় অন্যদের মধ্যে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এএনএম ফখরুদ্দিন এবং বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম