রুয়েট শিক্ষার্থীদের ১২ দফা না মানলে ক্লাসে না যাওয়ার ঘোষণা

রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২৪, ০৮:৫৪ পিএম

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কাছে ১২ দফা দাবি জানিয়েছেন। এসব দাবি না মানলে তারা ক্লাসে ফিরবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন।
শনিবার সকালে শিক্ষার্থীরা উপাচার্য জাহাঙ্গীর আলমের কাছে ‘রুয়েটের অভ্যন্তরীণ ও প্রশাসনিক সংস্কারের’ এ আবেদন করেন। আবেদনপত্রটি উপাচার্যের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
তাদের দাবিগুলো হলো-একদিনের মধ্যে রুয়েটকে সব প্রকার দলীয় রাজনীতিমুক্ত ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে। ভবিষ্যতে দলীয় রাজনীতি প্রবেশের সুযোগ করে দিতে পারে এমন অরাজনৈতিক সংগঠন, ছাত্র-সংসদ, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী সমিতির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে। রুয়েটের সব প্রশাসনিক পদে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের একদিনের মধ্যে অব্যাহতি দিয়ে পুনরায় শিক্ষার্থীদের পছন্দমতো ছাত্রবান্ধব শিক্ষকদের নিয়োগ দিতে হবে। সব হল প্রভোস্ট ও সহকারী প্রভোস্টদের একদিনের মধ্যে অব্যাহতি দিতে হবে এবং পরবর্তীতে এ পদগুলোতে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। রুয়েটের যেসব নিয়োগ নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় পর্যায়ের পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তারাসহ ইতোপূর্বে সংঘটিত সব প্রশ্নবিদ্ধ নিয়োগ দ্রুততম সময়ে তদন্তের মাধ্যমে বাতিল করতে হবে। কয়েকজনকে অস্ত্র হাতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করতে দেখা গেছে, তাদের তিন দিনের মধ্যে স্থায়ী বহিষ্কার করতে হবে। একদিনের মধ্যে ‘গণহত্যার’ প্রতি নিন্দা ও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে স্বাগত জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে স্পষ্ট ভাষায় বিবৃতি প্রকাশ করতে হবে। আবাসিক হলগুলোর বর্তমান বরাদ্দ বাতিল করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে পুনর্বিন্যাস করতে হবে। সব পরীক্ষার বিস্তারিত ফলাফল, হলগুলোর কোন সিট কার নামে বরাদ্দ আছে তার তথ্য ওয়েবসাইটে নিয়মিত প্রকাশ করতে হবে। ক্লিয়ারেন্স, সেমিস্টার ফি, লাইব্রেরির জরিমানা, ডিপার্টমেন্টের বার্ষিক চাঁদা, আবাসিক হলের বিল, শিক্ষা শাখার বিভিন্ন কাগজপত্র, সাময়িক সনদ ইত্যাদি পরবর্তী অনধিক তিন মাসের মধ্যে অটোমেশন সিস্টেমের আওতায় এনে কার্যকর করতে হবে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন বিল বা ফি প্রদানের জন্য বিকাশ, রকেট, নগদ বা অন্যান্য অনলাইন ব্যাংকিংয়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। রুয়েটের সব টেন্ডার স্বচ্ছতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করতে হবে। এর পাশাপাশি টেন্ডার এবং বাজেটবিষয়ক সব তথ্য ওয়েবসাইটে নিয়মিত আপডেট করতে হবে। সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার ফলাফল পরবর্তী সেমিস্টার শুরু হওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রকাশ করতে হবে।
প্রতি শিক্ষাবর্ষে অনুষ্ঠিত ব্যাকলগ, সুপারলগ পরীক্ষায় পূর্বের নিয়ম বাতিল করে সর্বোচ্চ তিনটি বিষয়ের পরিবর্তে পাঁচটি বিষয়ের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করে দিতে হবে এবং এ পরীক্ষার সর্বোচ্চ গ্রেডিং-এ ৩.০০ এর পরিবর্তে ৩.২৫-এ উন্নীত করতে হবে। রুয়েটের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ বাক্স রাখতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দ্বারা যদি কোনো শিক্ষক বা শিক্ষার্থী সুবিধা নিতে গিয়ে লাঞ্ছনা বা অবহেলার শিকার হন তবে এক সপ্তাহের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে হবে।
শিক্ষার্থীরা আবেদনপত্রে আরও লিখেছেন, বিভিন্ন কাগজপত্র উত্তোলন ফি কমিয়ে অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো নামমাত্র মূল্যে প্রদান করতে হবে। রুয়েটে নির্মাণাধীন হলগুলোর সব কাজ পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে এবং প্রশাসনিক ভবনগুলোর নির্মাণকাজ পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নিহতদের স্মরণে একটি স্থাপনা তৈরি করতে হবে। সম্প্রসারণ করতে হবে লাইব্রেরি। চলমান শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য তার একাডেমিক থিসিস কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে আর্থিক অনুদান প্রদান করতে হবে এবং প্রতিটি একাডেমিক ভবনে ছেলে ও মেয়েদের আলাদা আলাদা নামাজের জায়গার ব্যবস্থা করতে হবে। ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে সব ধর্মের আচার অনুষ্ঠান পালনের সুব্যবস্থা করতে হবে।
শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে জানিয়েছেন, রুয়েটের সার্বিক সংস্কারের লক্ষ্যে এসব দাবি তুলেছেন তারা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কোনো শিক্ষার্থী শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করবেন না।