রাবিতে কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীদের অবস্থান, ছাত্রলীগের শোডাউন
রাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৪, ১০:৫০ পিএম
ছবি: যুগান্তর
সব ধরনের সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের এক দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে এ অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়।
‘কোটা পদ্ধতি সংস্কার আন্দোলন’ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যানারে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
এদিকে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা টুকিটাকি চত্বর ও শহীদুল্লাহ্ কলাভবনের সামনে অবস্থান নেন। কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি শেষে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীদের ক্যাম্পাসের প্রধান প্রধান সড়কে শোডাউন দিতে দেখা গেছে।
অবস্থান কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন লেখা-সংবলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন। এ সময় দুই শিক্ষার্থীকে বই পড়তে দেখা গেছে। তাদের পেছনে এক শিক্ষার্থী একটি প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। যেখানে লেখা ছিল- ‘চাকরির বই পড়তেছি। তাই বিরক্ত করবেন না। কারণ তারা বলেছে জব পেতে প্রচুর বই পড়তে হবে।’
সোমবার থেকে সারা দেশের আন্দোলনকারীরা এক দফা দাবি জানিয়ে আসছেন। দাবিটি হলো- ‘সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের জন্য কোটাকে ন্যায্যতার ভিত্তিতে ন্যূনতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাশ করে কোটাপদ্ধতি সংস্কার করতে হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা পদ্ধতি সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক আমানুল্লাহ আমান বলেন, আদালত নয়, আমাদের দাবি নির্বাহী বিভাগের কাছে। আপনারা এমন একটি পরিপত্র জারি করবেন-যাতে শিক্ষার্থীদের অধিকার নিশ্চিত হয়। আমরা প্রথম থেকে চার দফা দাবি জানালেও সারাদেশের সঙ্গে সমন্বয় করে এখন এক দফা দাবিতে এসেছি। শুধু প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি নয়, সব প্রকার সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কার করতে হবে।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল বলেন, বাংলাদেশে বেকার সমস্যা প্রকট। প্রায় ১০০ জন স্নাতক পাশ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪৭ জনই বেকার। ১০০ জন চাকরিপ্রার্থীর মধ্যে যদি ৩০ জনকেই একটা নির্দিষ্ট শ্রেণিকে দিয়ে দেওয়া হয়, যারা আবার সংখ্যায় ১ শতাংশেরও কম, তাহলে সেটা বাংলাদেশের মতো একটা দেশে অবশ্যই বৈষম্য সৃষ্টি করে। আমরা সব ধরণের কোটা বাতিল চাই না। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী ও অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটা থাকুক। সেই কোটাগুলোই বাতিল চাই, যেগুলো বৈষম্য সৃষ্টি করে।
২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে (৫৬ শতাংশ) কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এরপর থেকে টানা সাড়ে পাঁচ বছর কোনো কোটা ছাড়াই নবম থেকে ১৩তম গ্রেডে নিয়োগ হয়। ২০২১ সালে ওই পরিপত্রের ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল হওয়ার অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হাইকোর্টে রিট করেন।
গত ৫ জুন এই রিটের রায়ে পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। ফলে সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল থাকবে। এরপর থেকে শুরু হতে থাকে নানা আলোচনা-সমালোচনা এবং বিক্ষোভ ও আন্দোলন। গত বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগের শুনানিতে হাইকোর্টের রায় স্থগিত হয়নি। আবেদনের শুনানি মুলতবি রাখা হয়েছে।