প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাহার দাবিতে সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে রাবি ও রুয়েট
রাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৪, ০৯:১৯ পিএম
সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয় স্কিমের’ প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সুপার গ্রেডে অন্তর্ভুক্তি ও শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তনের দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়-রাবি ও রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে-রুয়েট সর্বাত্মক কর্মবিরতি চলছে।
রাবির শিক্ষকেরা সোমবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন।
এছাড়া রাবির অফিসার সমিতি তিনদিনের ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রশাসনিক ভবনের সামনে সকাল ১০ টায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন।
এদিকে একই দাবিতে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। রাজশাহীর এই দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে রোববার পরীক্ষা চললেও সোমবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে।
অবস্থান কর্মসূচিতে রাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ওমর ফারুক সরকার বলেন, প্রত্যয় স্কিমের মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তার ব্যত্যয় ঘটানো হয়েছে। প্রত্যয় স্কিম জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। জোর করে কোন কিছু চাপিয়ে দেওয়া মানে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা। এটি বাস্তবায়ন হলে শিক্ষকেরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন।
অনেকেই বলছেন, এটি শিক্ষকদের আন্দোলন। কিন্তু আমরা ছাত্রদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই রাস্তায় দাঁড়িয়েছি। আমাদের রাস্তায় দাঁড়িয়ে আন্দোলন করা কাজ নয়, আমাদের কাজ ক্লাস, সেমিনার, ল্যাবে বক্তব্য দেওয়া। অবিলম্বে প্রত্যয় স্কিম বাতিল করে স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো চালু করার জন্য সরকারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মোজাম্মেল হোসেন বকুল বলেন, আমাদের দেশের অনেকেই সরকারি বড় পদের চাকরি ছেড়ে শিক্ষকতা পেশায় যোগ দিয়েছেন। কিন্তু শিক্ষকদের আর্থিকভাবে সামাজিক সুরক্ষা দিতে না পারলে মেধাবীরা এ পেশায় আর আসবেন না। অর্থনীতি যখন এগিয়ে চলছে, তখন কেন শিক্ষকদের আর্থিকভাবে সুবিধা কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সেটি আমার বোধগম্য নয়। প্রত্যয় স্কিম বাতিল করে স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো করা হোক এটিই আমাদের দাবি।
অবস্থান কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. হাবিবুর রহমান৷ এ সময় বক্তব্য দেন ইংলিশ অ্যান্ড আদার ল্যাঙ্গুয়েজ বিভাগের পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন, সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক রেজাউল করিম।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির আন্দোলনের অন্তর্ভুক্ত কর্মসূচিগুলো হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগ/ইনস্টিটিউটের ক্লাশসমূহ বন্ধ থাকবে। অনলাইন, সান্ধ্যকালীন, শুক্র ও শনিবারের প্রফেশনাল কোর্সের ক্লাসসমূহ বন্ধ থাকবে। সবধরনের লিখিত, মৌখিক ও ভর্তি পরীক্ষাসহ কোন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না। বিভাগীয় অফিস, সেমিনার, কম্পিউটার ল্যাব ও গবেষণাগার বন্ধ থাকবে। একাডেমিক কমিটি, পরিকল্পনা কমিটি, প্রশ্নপত্র সমন্বয় ও অন্যান্য সভা অনুষ্ঠিত হবে না। ভর্তি পরীক্ষাসহ ডিন অফিসের সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। কোন সিলেকশন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হবে না। কোন সেমিনার, কনফারেন্স ও ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হবে না। দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন শিক্ষক প্রশাসনিক কোন দায়িত্ব পালন করবেন না। শিক্ষকরা প্রতিদিন বেলা ১১ টা থেকে ১২টা পর্যন্ত (ছুটির দিন ব্যাতিত) সিনেট ভবনের মূল ফটকে অবস্থান করে এই আন্দোলনকে বেগবান করবেন।
গত ১৩ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রত্যয় স্কিমের প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকেই এটিকে বৈষম্যমূলক উল্লেখ করে এর বিরুদ্ধে সরব হন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। কিছু কর্মসূচি পালনের পর ৪ জুন অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষকেরা। এরপরও দাবির বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় গত ২৫, ২৬ ও ২৭ জুন তিন দিন অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেন।
গত বছর সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন-২০২৩ প্রণয়ন করা হয়। ১৩ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এক প্রজ্ঞাপন জারি করে। সেখানে বলা হয়, চলতি বছরের ১ জুলাইয়ের পর থেকে স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার চাকরিতে যারা নতুন যোগ দেবেন, তারা বিদ্যমান ব্যবস্থার মতো আর অবসর-উত্তর পেনশন-সুবিধা পাবেন না। এর পরিবর্তে নতুনদের বাধ্যতামূলক সর্বজনীন পেনশনের আওতাভুক্ত করা হবে।