সরকারি প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবি জানিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। রোববার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে এক মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে এ দাবি জানান তারা।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা কোটা পুনর্বহাল বাতিল, সব কোটার পরিমাণ ১০ শতাংশের নিচে কমিয়ে আনা এবং একজন কোটা সুবিধা ভোগকারী জীবনে যেকোনো পর্যায়ে একবার মাত্র কোটা সুবিধা নেওয়ার দাবিসহ বিভিন্ন দাবি উল্লেখ করেন।
এ সময় তারা ‘কোটা প্রথায় নিয়োগ পেলে দুর্নীতি বাড়ে প্রশাসনে’, ‘মেধাবীদের যাচাই করো কোটা পদ্ধতি বাতিল করো’, ‘১৮ এর হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘দেশটা নয় পাকিস্তান কোটার হোক অবসান’, ‘কোটা বৈষম্যরা নিপাত যাক মেধাবীরা মুক্তি পাক’ ইত্যাদি লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।
আন্দোলনে অংশ নিয়ে পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী আমানুল্লাহ খান বলেন, কোটা থাকা কোনো দেশের জন্য শুভলক্ষণ না। কিন্তু আমাদের দেশটা যারা রক্ত দিয়ে স্বাধীন করেছে সাংবিধানিক ভাবেই তাদেরকে সেটার প্রতিদান দেওয়া হয়েছে এবং সেটার ফল তাদের বর্তমান প্রজন্মও এখন অবধি ভোগ করছে। কিন্তু সেই প্রতিদানের পরিমাণই বা কতটুকু হওয়া দরকার ছিল। তারা সংখ্যায় দেশের মোট জনসংখ্যার ২ শতাংশেরও কম এবং তাদের জন্য কোটা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৬ শতাংশ। যেটা একেবারেই অযৌক্তিক। রেলওয়েতে তাদের জন্য কোটা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮২ শতাংশ। যেটা বলা যায় সম্পূর্ণ কোটার দখলেই। আমরা কোটা বাতিল চাই না, কোটা পদ্ধতির সংস্কার চাই। আমাদের দাবি এই কোটা শতাংশের পরিমাণ সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ করা হোক। এবং সেই সঙ্গে কোটার সুবিধা ভোগ কারীরা জীবনে যেকোনো ক্ষেত্রে একবার কোটার সুবিধা নিতে হবে।
সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী সজীব বলেন, আমাদের পূর্বসূরিরাও এই কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করেছেন। তারপর সাংসদে প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু এবার আবারও সেটা প্রবর্তন করা হলো। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে সাম্য, ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য। কিন্তু স্বাধীনতার ৫৩ বছরে এসেও সাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আমাদের দেশের কোটা পদ্ধতিতে একজন শিক্ষার্থী কোটা ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পরবর্তীতে আবার এই কোটা ব্যবহার করছে। তার এক জীবদ্দশায় কয়েকবার ব্যবহার করে। এই পদ্ধতি বাতিল করতে হবে। একজন মানুষ তার জীবদ্দশায় একবারই কোটা ব্যবহার করতে পারবে এমন নিয়ম করা হোক।
সংস্কৃত বিভাগের শিক্ষার্থী আল আমিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই মধ্যবিত্ত নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসে। এবং এদের মধ্যে বেশির ভাগই কৃষক শ্রমিকের সন্তান। কিন্তু এছাড়া বাকি যারা আসে তারা সবাই প্রায় প্রতিষ্ঠিত পরিবার থেকেই আসে। এবং দেখা যায় কোটার সুবিধাও কিন্তু তারা পেয়ে থাকে। একজন কৃষক হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে তার সন্তানকে পড়াশোনা করায়, কিন্তু তারা কোটা সুবিধা পায় না। অন্যদিকে যাদের বাবা মা সরকারি চাকরি করে, প্রতিষ্ঠিত পরিবারের সন্তান তারা ঠিকই কোটার সুবিধা লুফে নিচ্ছে। কোটা থাকলে তো কৃষকের সন্তানের জন্য থাকা দরকার ছিল, মজুর শ্রমিকের সন্তানদের থাকা দরকার ছিল। কিন্তু সেটা না হয়ে যারা সুবিধা পাচ্ছে, তারা আরও বেশি পাচ্ছে। আর যারা পাচ্ছে না, তারা মোটেই পাচ্ছে না।
আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী আশিকুল্লাহ মহিবের সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন।