Logo
Logo
×

শিক্ষাঙ্গন

আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ড

আশিকুল ক্লাসে ফেরায় ভিসির কার্যালয়ের সামনে বুয়েট শিক্ষার্থীদের অবস্থান

Icon

ঢাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৯ আগস্ট ২০২৩, ০১:১৬ পিএম

আশিকুল ক্লাসে ফেরায় ভিসির কার্যালয়ের সামনে বুয়েট শিক্ষার্থীদের অবস্থান

আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকায় ঘটনায় আশিকুল ইসলাম (বিটু) বুয়েট থেকে আজীবন বহিষ্কৃত হয়। সম্প্রতি আশিকুলের পুনরায় ক্লাসে ফেরার ঘটনায় বুয়েট ভিসির কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। 

বুধবার বেলা ১১টা থেকে তারা এ অবস্থান নেন।

এর আগে গত ৮ আগস্ট এক মানববন্ধন থেকে আশিকুলের সঙ্গে ক্লাস না করার ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে এক লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, ৭ অক্টোবর ২০১৯ সালে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে শেরেবাংলা হলে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। হিংস্র ছাত্ররাজনীতির বলি হয়ে নিজেরই হলে কিছু মানুষরূপী জানোয়ারের নির্যাতনের স্বীকার হন আবরার ভাই। এর প্রতিবাদে তীব্র আন্দোলন শুরু করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সব ধরনের ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ এবং জড়িতদের আজীবন বহিষ্কারসহ বেশ কিছু দাবি বুয়েট অথরিটির কাছে তুলে ধরেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। দ্রুত বহিষ্কারাদেশের দাবিতে বুয়েট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনায় বসে এবং শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিদাওয়ার প্রতি সম্মান রেখে বুয়েট প্রশাসন তাৎক্ষণিকভাবে বুয়েটে সব ধরনের ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে এবং অভিযুক্ত সবার বিরুদ্ধে আজীবন বহিষ্কারের আদেশ জারি করে। অভিযুক্তদের আইনি প্রক্রিয়ার বিষয়ও স্বরান্বিত হয় শিক্ষার্থীদের প্রবল দাবির মুখে। এ ঘটনায় জড়িত মো আশিকুল ইসলাম অন্যদের মতো বুয়েট থেকে আজীবন বহিষ্কৃত হয়। 

এখানে উল্লেখ্য, অন্যতম আসামি অমিত সাহা বেশিরভাগ সময় সশরীরে হত্যার স্থানে অবস্থান না করলেও মেসেঞ্জার গ্রুপের মাধ্যমে অংশগ্রহণ দেখা যায় এবং বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিতে দেখা যায়। তাকে এবং তারই রুমে নিয়ে এসে নির্যাতন করা হয় আবরার ফাহাদকে। তাই ঘটনাস্থলে উপস্থিতি কম থাকলেও তদন্তসাপেক্ষে এবং উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণসাপেক্ষে চার্জশিটে অমিত সাহার নাম উঠে আসে। একইভাবে সিসিটিভি ফুটেজে মোর্শেদ উজ জামান জিসানের স্বল্প সময়ের উপস্থিতি দেখা গেলেও তদন্তে তার উল্লেখযোগ্য সম্পৃক্ততা উঠে আসায় তার নামও চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত হয়। 

অন্যদিকে ছাত্রলীগের পদধারী সদস্য হিসেবে এবং ঘটনার দিন সারাদিন খুনিদের সঙ্গে অবস্থান করা সত্ত্বেও কুখ্যাত র‌্যাগার বিটুর নাম রহস্যজনকভাবে চার্জশিট থেকে বাদ যায়। তার নিজের বর্ণনামতেই তখন চাইলেই আবরারকে বাঁচানো যেত। 

এর পর বুয়েট আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করে এবং তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে (বিজ্ঞপ্তি নং ডিএসডব্লিউ/ডি-৩৪) ২১ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে, আবরার ফাহাদ হত্যার প্রায় দেড় মাস পর ২৬ জনকে আজীবন বহিষ্কার করে নোটিশ দেয়, যাতে স্পষ্টভাবেই উল্লেখ ছিল মো. আশিকুল ইসলামের নাম। কিন্তু তার পর বিগত ২২ মে ২০২১ তাকে কেমিকৌশল' ১৭ ব্যাচের একটি কোর্সের অনলাইন ক্লাসে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। পরে সংশ্লিষ্ট কোর্স শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায় কোর্টের স্টে অর্ডার নিয়ে ডিপার্টমেন্ট অফিসে যোগাযোগ করে। লেভেল-৩ টার্ম-১ এর অন্তত চারটি কোর্সে রেজিস্ট্রেশন করে। কিন্তু আবারও সাধারণ শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে তার এই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। কিন্তু হঠাৎ করেই গতকাল ৬ আগস্ট তাকে পুনরায় কেমিক্যাল ১৯ ব্যাচের সঙ্গে ক্লাসে দেখা যায়। এ ঘটনায় বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা চরমভাবে ক্ষিপ্ত। এত সহজে বুয়েটের তদন্তে প্রমাণিত একজন অপরাধী ফিরে আসতে পারলে আবরার ফাহাদের আত্মত্যাগ অর্থহীন হয়ে যায় এবং এর বিনিময়ে পাওয়া বর্তমান বুয়েটের নিরাপদ পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ে।

তারা আরও বলেন, আমরা কোনোভাবেই আমাদের ভাইয়ের একজন খুনির সঙ্গে ক্লাস করতে রাজি নই। আবরার ফাহাদ ছিল বুয়েটে বিরাজমান লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতির ক্ষমতা প্রদর্শনের বলি। আর বিটু সেই সময়কার বুয়েট ছাত্রলীগেরই সহসম্পাদক। বিভিন্ন মিটিং-মিছিলে যোগ দিতে বাধ্য করা এবং মিছিলে না গেলে রাতের বেলা নির্যাতনের মাধ্যমে শেরেবাংলা হলকে অনিরাপদ করে তুলেছিল এ অপরাধী। এমনকি এসব সমাবেশের পর যারা যোগ দেয়নি তাদের মাঝরাতে হলের ছাদে তুলে অসহ্য নির্যাতন করার অনেক উদাহরণ রয়েছে এ বিটুর বিরুদ্ধে। এ রকম অত্যাচারী ও খুনের দায়ে অভিযুক্ত একজনের পুনরায় বুয়েট ক্যাম্পাসে ফিরে আসায় সব সাধারণ শিক্ষার্থী শঙ্কিত ও ক্ষুব্ধ। আমরা আশা করছি যে, দ্রুততম সময়ে তার কোর্স রেজিস্ট্রেশন বাতিলসহ সব একাডেমিক কার্যক্রম বাতিল করে পুনরায় ক্যাম্পাসকে নিরাপদ করে তোলা হবে। এবং একই সঙ্গে বুয়েট শিক্ষার্থীদের নিয়ে বেশ কিছু সাম্প্রতিক ঘটনায় দেশব্যাপী বুয়েটের লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি এবং মৌলবাদ মুক্ত পরিবেশ নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা এবং গুজবের সৃষ্টি হয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম