জাবিতে শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদককে হল ছাড়া করলেন সহ-সভাপতি
জাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২৩, ০৬:৫২ পিএম
অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে গভীর রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আল বেরুনী হল থেকে ইমরান আহমেদ নামে এক ছাত্রলীগ নেতাকে বের করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ভুক্তভোগী ইমরান দর্শন বিভাগের ৪৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
সোমবার দিবাগত রাত ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আল বেরুনী হলে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত এনামুল হক এনাম শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি।
জানা যায়, ইমরান আল বেরুনী হলের এ ব্লকের দ্বিতীয় তলার ২০৭ নম্বর কক্ষে থাকতেন। সম্প্রতি শাখা ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে এনামের গ্রুপের সঙ্গে ইমরানের মতানৈক্য দেখা দেয়। পরিপ্রেক্ষিতে ইমরানকে পলিটিক্যাল ব্লক ছেড়ে যেতে বলেন এনাম। পরে রাত ৩টায় এনামের নেতৃত্বে ২০-২৫ জন উপস্থিত হয়ে ইমরানকে রুম ছেড়ে দিতে বলেন। ইমরান তখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সময় চাইলে তাকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে রুম ছেড়ে দিতে বলা হয়। এ সময় এনাম সঙ্গে থাকা অনুসারীদের কক্ষ থেকে জিনিসপত্র বের করতে নির্দেশ দেয়। পরে টেবিল, ওয়্যারড্রোব বের করে কক্ষটি তালাবদ্ধ করে দেয় তার অনুসারীরা।
এনামুল হক এনামের প্রত্যক্ষ নির্দেশে শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আসিফ মাহাদি আবির, সহ-সভাপতি খাইরুল ইনাম নাহিদ, সহ-সভাপতি নওশাদ আলম সুজন, স্কুল ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন রকি, কর্মসংস্থান সম্পাদক সোহেল রানা, উপ-বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক রেজাউল করিম, সহ-সম্পাদক মানিকুজ্জান খান, সহ-সম্পাদক রাজিবুল হক পান্থ এবং কর্মী ফয়জুল কবির সজীব, তুষার ও কাব্য শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান আহমেদকে টানাহেঁচড়া করে তার কক্ষ থেকে বের করে দেন। যার প্রমাণ এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
ভুক্তভোগী ইমরান আহমেদ বলেন, মার্চ মাসে এনামের নেতৃত্বে একটা বিদ্রোহী গ্রুপ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস অবরোধ করে। আমি সেখানে তাদের গ্রুপে যোগ না দেওয়ায় আমাকে বেশ কিছুদিন ধরেই তারা ব্লক ছেড়ে দিতে বলছিল। সোমবার দুপুরেও আসিফ মাহাদি আবির, খায়রুল এনাম নাহিদ আমাকে রুম ছাড়তে বলে এবং না ছাড়লে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে না বলে হুমকি দেয়।
এ ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী দর্শন বিভাগের ৪৪ ব্যাচের আলামিন শাহ বলেন, আমরা ঘুমিয়ে ছিলাম। গভীর রাতে শব্দ শুনে উঠে দেখি এনাম ভাই ২০-২৫ জন নিয়ে ইমরানকে রুম ছেড়ে যেতে বলছে। ইমরান সময় চেয়ে বলে কালকে সকালে বসি। এনাম ভাই কোন কথাই শুনল না। বলল পাঁচ মিনিটের মধ্যে ডিসিশন জানাও। আমরা সবাই মিলে রিকোয়েস্ট করি যা করার কালকে করি কিন্তু উনি কোনো কথাই শুনল না। জুনিয়রদের বলল জিনিসপত্র বের করে দিতে।
এ ঘটনায় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক এনাম বলেন, কিছুদিন ধরেই তার সঙ্গে আমাদের মতপার্থক্য তৈরি হয়। ব্লকের সবাই একদিকে সে একদিকে। জুনিয়ররাও তাকে চায় না। এজন্য তাকে বলেছি তুমি আপাতত এখান থেকে ডি ব্লকে গিয়ে উঠো। পরে সোমবার রাতে সে নিজেই জিনিসপত্র বের করে নিচে নামিয়েছে। এখন আমাকে নাজেহাল করার জন্য সবাইকে বলছে আমি নাকি তাকে বের করেছি।
শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, এটা কারো ব্যক্তিগত ব্লক না। এটা ছাত্রলীগের ব্লক। যারা ছাত্রলীগের রাজনীতি করে তারা সবাই একসঙ্গে থাকে। এখন ব্যক্তির পুজো করবে না বলে সে হলে থাকতে পারবে না- এমনটা তো হতে পারে না। বিষয়টি আমরা দেখব।
এছাড়াও শাখা ছাত্রলীগের এই গ্রুপটির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন যাবত হলের সামনের ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোতে চাঁদাবাজি, চাঁদা না দেওয়ায় হল সংলগ্ন মাঠের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেওয়া, মারধর ও অপহরণের অভিযোগ আছে। এর আগে এনামুল হক এনামের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। পরে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সমঝোতা হয় বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে।
এছাড়াও শাখা ছাত্রলীগের ছাত্রলীগের সাবেক উপ-ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ফয়সাল হককে মারধর করে চাঁদা দাবি ও তার বান্ধবীর স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ আছে ছাত্রলীগের এই নেতার বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আল-বেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সহযোগী অধ্যাপক সিকদার মো. জুলকারনাইন বলেন, এ বিষয়ে কেউ আমাকে কিছু বলেনি। তবে বলার সুযোগও নেই। কারণ তারা সবাই অছাত্র। আমরা চাই সব অছাত্র হল থেকে বের হয়ে যাক। আমরা ইতোমধ্যে অছাত্রদের হল ছাড়ার বিষয়ে নোটিশ দিয়েছি। ১৫ তারিখের পর আমরা অভিযানে যাব।